লাকি ‘৭’ আর আনলাকি ‘১৩’ এলো যেভাবে
প্রাচ্য কী পাশ্চাত্য, গোটা পৃথিবীর মানুষের মধ্যেই কিছু লাকি এবং আনলাকি ব্যাপারের প্রতি বিশ্বাস প্রত্যক্ষ করা যায়। আর লাকি সংখ্যা হিসেবে ‘৭’ এবং আনলাকি সংখ্যা হিসেবে ‘১৩’-এর গ্রহণযোগ্যতা বিশ্বব্যাপী। শুধু লোকমুখে বিষয়টি প্রচলিত রয়েছে তেমন নয়, এর ধর্মীয় ভিত্তিও রয়েছ। চলুন জেনে নেই লাকি ‘৭’ আর আনলাকি ‘১৩’-এর পেছনের ইতিহাস।
প্রাচীন মিশরের মানুষেরা ১৩ ধাপের একটি চক্রে বিশ্বাস করতেন। তাদের মতে চক্রের ১২টি ধাপ জীবিত অবস্থায় সম্পন্ন হয়। আর ১৩ নম্বর ধাপ মৃত্যুকে নির্দেশ করে। তাই ১৩ সংখাটি তাদের কাছে ছিল ভয়ের কারণ। ১৩-কে তারা মৃত্যু ও ধ্বংসের প্রতীক মনে করত। অনেকের মতে এই সংখ্যাটির সাথে আনলাকি বা অশুভ কথাটি যোগ হওয়ার ইতিহাসের গোড়াপত্তন হয়েছিল এভাবেই।
তবে কিছু কিছু ধর্মে, রূপকথায়, প্রচলতি কাহিনী কিংবা লোককথায়ও ‘১৩’ সংখ্যাটিকে অশুভ বলা হয়েছে। এ বিষয়ে নরওয়ের একটি রূপকথা তুলে ধরা যাক: এক রাতে ১২ জন দেবতা একসঙ্গে রাতে খাবার খেতে টেবিলে বসল। ঠিক তখনই বিনা দাওয়াতে ১৩তম ব্যক্তি হিসেবে সেখানে উপস্থিত হলেন খারাপ কাজের দেবতা লকি। অশুভের সূচনা হল এর পরই। লকি শীত ও অন্ধকারের দৃষ্টিহীন দেবতা হোডকে প্ররোচিত করেন ভালো কাজের দেবতা ব্লাডারকে হত্যা করতে। যে কথা সেই কাজ। লকির প্ররোচনায় পড়ে ব্লাডারকে হত্যা করেন হোড। সেদিন পুরো স্বর্গপুরীতে নেমে এসেছিল শোকের মাতম।
খ্রিস্ট ধর্মেও ১৩ জনের একসঙ্গে খাবার টেবিলে বসাটাকে অশুভ বলে মনে করে। কারণ, লাস্ট সাপারে ১৩তম ব্যক্তি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন জুডাস ইস্কারায়োট। পরবর্তীতে জুডাস ইস্কারায়োটই যীশুর সঙ্গে প্রতারণা করেছিলেন।
হিন্দু ধর্মেও ১৩ সংখ্যাটির বিষয়ে বারণ রয়েছে। একই সঙ্গে, একই উদ্দেশ্যে, একই সময়ে ১৩ জনের একত্রিত হওয়া নিয়ে হিন্দু ধর্মেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। বিশ্বাস করা হয় যে, ১৩ সংখ্যাটি অশুভ হওয়ার কারণেই ১৩ মাসের চন্দ্র পঞ্জিকার বদলে ১২ মাসের সৌর পঞ্জিকার ব্যবহার শুরু হয়েছে। আর এসব কারণে ‘১৩’ সংখ্যাটিকে এখনো অনেকেই আনলাকি মনে করেন।
অপরদিকে সংখ্যা ‘৭’-কে বলা হয় নির্ভুল সংখ্যা বা পারফেক্ট নম্বর। ধর্ম ও পৌরাণিক কাহিনীগুলোতে ‘৭’-এর ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। বাইবেল-এ ৭ সংখ্যাটিকে সবচেয়ে শক্তিশালী ও শুভ সংখ্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। খ্রিস্ট ধর্মসহ অন্যান্য কয়েকটি ধর্ম রয়েছে যারা বিশ্বাস করে যে সৃষ্টিকর্তা পৃথিবী সৃষ্টি করতে ৭দিন ব্যবহার করেছিলেন। তাছাড়া ৭টি স্বর্গের অস্তিত্বেও বিশ্বাস করে অনেক ধর্ম।
জাপানের পৌরাণিক কাহিনীতে ৭ জন শুভ দেবতার উল্লেখ রয়েছে। তাই এই সংখ্যাটিকে তারা ঈশ্বরের সংখ্যা হিসেবে বিবেচনা করেন। চীনের ধর্মীয় বিশ্বাস ও পৌরাণিক কাহিনীতেও ‘৭’ সংখ্যাটির বিস্তর প্রভাব দেখা যায়। এক সময় চীনে ‘৭’ ধাপের কবিতা লিখতে পারাকে সাহিত্য জগতে বিখ্যাত হওয়ার লক্ষণ হিসেবে দেখা হতো। এসব কারণে অনেকেই ‘৭’ সংখ্যাটিকে শুভ বিবেচনা করেন।
সংখ্যাটিকে শুভ ভাবার পেছনের আরো কিছু কারণ হলো, ৭ দিন (সপ্তাহ), ৭ সমুদ্র, ৭ মহাদেশ, ৭ রং (রংধনু), ৭ সুর (সংগীত), ৭ আশ্চর্য (পৃথিবীর), ৭ মহাজাগতিক ধাপ, ৭টি স্তম্ভ (প্রজ্ঞা), ৭টি চক্র (মানবদেহ)।
শেয়ার করুন