আপডেট :

        শনিবার খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

        বৃষ্টি কামনায় ব্যাঙের বিয়ে নিয়ে প্রচলিত আছে নানা গল্পকথা

        ১৯৩ জন নারী ও কন্যা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ

        কংগ্রেসকে পাকিস্তানের ‘মুরিদ’ বলে অভিযুক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

        নোবেল জয়ী বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস

        নাফ নদীতে মাছ শিকাররত ১০জন বাংলাদেশি জেলেকে অপহরণ

        টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষে বিশ্বকাপের উদ্দেশে যাত্রা করবে টাইগাররা

        রাজধানীতে সন্ধ্যার মধ্যে বৃষ্টির পূর্বাভাস

        রাঙ্গামাটিতে স্বস্তির বৃষ্টি নামলেও এসময় বজ্রপাতে ৩জন নিহত

        কেউ কেউ আন্দোলন করে যাচ্ছে ফিজিক্যালি এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে, আমরা কাউকে বাধা দিচ্ছি না

        কেউ কেউ আন্দোলন করে যাচ্ছে ফিজিক্যালি এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে, আমরা কাউকে বাধা দিচ্ছি না

        অতি বামদের কাছে আমার প্রশ্ন, তারা আমাকে উৎখাত করে কাকে ক্ষমতায় আনবে?

        মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী

        শ্রম অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের অগ্রগতির পর্যায়

        কক্সবাজারের পেকুয়ায় বজ্রপাতে নিহত হলেন দিদারুল ইসলাম

        ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে

        ফিরছে নিহত আট বাংলাদেশির কফিনবন্দি লাশ

        বন্যহাতির আক্রমণে কিশোরের মৃত্যু হলো

        চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় গুয়াংডং প্রদেশে একটি মহাসড়কের অংশ ধস

        চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় গুয়াংডং প্রদেশে একটি মহাসড়কের অংশ ধস

মহান ভাষা আন্দোলনের শিক্ষা ও বর্তমান বাংলাদেশ

মহান ভাষা আন্দোলনের শিক্ষা ও বর্তমান বাংলাদেশ

একথা সকলেই স্বীকার করেন যে, ৫২'র ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়েই স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছিল। আসলে ভাষা আন্দোলনের শুরু হয়েছিল আরও আগে, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপরই, পরে ১৯৫২ সালে তা পূর্ণতা পেয়েছিল। ৪৭ সালের ১লা সেপ্টেম্বরে গঠিত 'তমদ্দুন মজলিস' নামের একটি সাংস্কৃতিক সংস্থার পক্ষ থেকে সেপ্টেম্বর মাসের ১৫ তারিখে প্রকাশিত হয় ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু’-শীর্ষক একখানি পুস্তিকা। এতে তিনটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। একটি তমদ্দুন মজলিসের প্রতিষ্ঠাতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম রচিত। অপর দুটি নিবন্ধের লেখক ছিলেন শিক্ষাবিদ-সাহিত্যিক অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেন ও সাহিত্যিক-সাংবাদিক আবুল মনসুর আহমদ।

এই পুস্তিকায় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিশদ আলোচনা থাকায় এই পুস্তিকা পরবর্তীকালে ভাষা আন্দোলনের  মেনিফেস্টোরূপে বিবেচিত হয়ে এসেছে। বিশেষ করে ওই পুস্তিকায় অধ্যাপক আবুল কাসেমের ‘আমাদের দাবি’ শীর্ষক নিবন্ধে ভাষা আন্দোলনের প্রধান দাবিগুলো স্থান পায়। এই দাবিগুলোর মধ্যে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ছিল দু’টি- (১) পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে বাংলা ও উর্দু এবং (২) পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষার মাধ্যম ও অফিস-আদালতের ভাষা হবে বাংলা।

এখানে উল্লেখযোগ্য যে, ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে ১৯০ বছরের বিদেশী ইংরেজ শাসনের অবসানে সাবেক ভারতবর্ষে ভারত ও পাকিস্তান নামের যে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়, তার মধ্যে ভারত পূর্বাহ্নেই হিন্দিকে তার রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কী হবে, সে সম্বন্ধে কোন আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগেই পাকিস্তানের জন্ম হওয়ার ফলে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রাক্কালে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. জিয়াউদ্দিন আহমদ এক বিবৃতিতে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানালে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ কঠোর ভাষায় প্রতিবাদ জানান। এদেশের আধুনিক মুসলিম রেনেসাঁর কবি ফররুখ আহমদ এক শ্রেণীর বাঙ্গালী মুসলমানের উর্দু-প্রীতির কটাক্ষ করে ব্যঙ্গ কবিতাও রচনা করেছিলেন।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তমদ্দুন মজলিসই সর্বপ্রথম বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিকে সংগঠিত আন্দোলনের রূপ দিতে এগিয়ে আসে। ভাষা আন্দোলনের মেনিফেস্টোরূপী যে পুস্তিকার কথা প্রথমে বলা হয়েছে,  তাতে অধ্যাপক আবুল কাসেম পাকিস্তানের একাধিক রাষ্ট্রভাষা করার দাবির স্বপক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে পাকিস্তান আন্দোলনের ভিত্তি ১৯৪০ সালের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের উল্লেখ করে বলেন, লাহোর প্রস্তাবে উপমহাদেশের মুসলিম-অধ্যুষিত পূর্বাঞ্চলে একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্রের কথা থাকলেও আমরা এ মুহূর্তে শুধু বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তুলেছি।


ভাষা আন্দোলনের মেনিফেস্টোরূপী পুস্তিকায় লাহোর প্রস্তাবের এ উল্লেখ ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ পরবর্তীকালে দেশে ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়ে লাহোর প্রস্তাবের মর্মবাণীর আলোকেই গড়ে ওঠে ৬ দফার স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকার আন্দোলন। এভাবে জনগণের মধ্যে যে স্বাধিকার চেতনা সৃষ্টি হয় তাকে পাকিস্তান বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের কালোরাতে পশুবলে ধ্বংস করে দিতে উদ্যত হলে বাংলার বিক্ষুব্ধ জনগণ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে নয় মাসের রক্তাক্ত সংগ্রামের মধ্যদিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে। সুতরাং আমাদের আজকের স্বাধীনতার ভিত্তিভূমি রচনায় ভাষা আন্দোলনের যে ঐতিহাসিক ভূমিকা ছিল, একথা বললে কোনরকম অত্যুক্তি করা হয় না।

এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য, যাতে করে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তোলা সম্ভব হয়েছিল। কারণ ৪৭ সালের আগষ্ট মাসে যখন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয় তখন সমগ্র পাকিস্তানে বাংলা ভাষাভাষীর সংখ্যা ছিল শতকরা প্রায় ৫৬ ভাগ। অর্থাৎ গণতান্ত্রিক বিচারেও বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি ছিল সম্পূর্ণ যুক্তিযুক্ত। এছাড়াও তদানীন্তন পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলে পাঞ্জাব, সিন্ধু, সীমান্ত প্রদেশ ও বেলুচিস্তান নামের যে চারটি প্রদেশ ছিল তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব ভাষা থাকলেও উর্দুর বিরুদ্ধে তারা কোন দাবি না তোলায় বাংলার সাথে উর্দুকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করতে আমরা আপত্তি করিনি। অর্থাৎ এক্ষেত্রেও বাংলা ভাষাভাষীরা গণতান্ত্রিক সহিষ্ণুতাবোধের পরিচয় দিয়েছেন। বাংলা রাষ্ট্রভাষার দাবিদাররা এমনটা বলেননি যে, যেহেতু বাংলা ভাষাভাষীরা সমগ্র পাকিস্তানের সংখ্যাগুরু তাই বাংলাকেই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করতে হবে।

এ সকল ঘটনা থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, আজ আমরা বাংলাদেশ নামের যে স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক, তার স্বাধীনতার ভিত্তিভূমি নির্মাণে ভাষা আন্দোলনের যেমন ছিল ঐতিহাসিক ভূমিকা, তেমনি ভাষা আন্দোলন থেকে আমরা গণতন্ত্র চর্চারও শিক্ষা পেতে পারি। কিন্তু দেশের বাস্তব যে চিত্র আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি, তাতে আশংকা হচ্ছে ভাষা আন্দোলনের এই যে দুটি মূল্যবান শিক্ষা, তার কোনটাকেই আমরা বাস্তবে মূল্য দিতে শিখিনি।

একুশ সম্পর্কে প্রায়ই বলা হয়, একুশ মানে মাথা নত না করা। অর্থাৎ জাতি হিসেবে স্বাধীনতার প্রকৃত শিক্ষা আমরা পেয়েছি ভাষা আন্দোলন তথা একুশে ফেব্রুয়ারি থেকে। আমরা যখন বলি ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়েই আমরা আজকের স্বাধীনতা পেয়েছি, পেয়েছি স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ, তখন ভাষা আন্দোলনের ঐতিহ্যবাহী এ দেশের তো সাম্রাজ্যবাদ-আধিপত্যবাদের সামনে নতজানু থাকার কথা নয়।

আমরা ১৯৪৭ ও ১৯৭১ সালে দু’দুবার স্বাধীনতা লাভ করে এখনও যদি প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ লাভ না করে থাকি, তার চাইতে লজ্জার কথা আর কী হতে পারে? যে লুটেরা সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তি দু’শ বছর একটানা সরাসরি শাসনের মাধ্যমে আমাদের সম্পদ বেপরোয়া লুণ্ঠন করে আমাদের অর্থনীতিকে ফোকলা করে দিয়েছিল, তারাই এখন পরিবর্তিতরূপে হাজির হয়েছে দাতাশক্তি হিসেবে। আমরা তাদের এবং তাদের মদদপুষ্ট এদেশী এজেন্টদের কাছ থেকে কঠিন হারের সুদে ঋণ নিয়ে নিজেদের দারিদ্র্যকে আরও পাকাপোক্ত করে তুলছি।

অথচ পৃথিবীর মধ্যে উর্বরতম মাটির পাশাপাশি বাংলাদেশের শতশত নীল দরিয়ার পানির নিচে, পাহাড়-সমতল ভূমির গভীরে যে অপরিমেয় প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ রয়েছে। আরও রয়েছে বিপুল সংখ্যক পরিশ্রমী জনগোষ্ঠী, তারপরেও তো বাংলাদেশের পৃথিবীর দরিদ্রতম দেশগুলোর কাতারে সীমাবদ্ধ থাকার কথা নয়। তবুও যে আমরা দরিদ্র দেশ হিসেবে দুনিয়ার করুণার পাত্র হয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছি , তার মূল কারণ বর্তমানে আমাদের দেশ ও সমাজের নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত রয়েছে এমন কিছু লোক, যারা গণমানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে ভোটারদের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জোরপূর্বক ক্ষমতায় বসে আছে। যাদের মধ্যে দেশপ্রেম, মহৎ আদর্শ ও নীতি-নৈতিকতার  স্থলে নিজেদের আখের গোছানোর প্রবণতা মহামারীর আকারে দেখা দিয়েছে। এর ফলেই দেশের তরুণ সমাজের মধ্যে সমাজ ও রাষ্ট্রের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে জমে উঠছে হতাশা, অনাস্থা ও অবিশ্বাসের কোলাহল।


দেশে আজ যে অবস্থা তাতে সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ছাড়া উদীয়মান তারুণ্যের দ্রোহকে কেউ সম্পূর্ণ প্রশমন করতে পারবে বলে মনে হয় না। আজ সময় এসেছে দেশের প্রকৃত কল্যাণকামীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সুদূর প্রসারী সমাজ পরিবর্তনের কাজে আত্মনিয়োগের এবং সমাজে ও রাষ্ট্রে অধিষ্ঠিত নেতৃবৃন্দের আত্মসমালোচনা, আত্মানুসন্ধান ও আত্মসংশোধনের। জনগণের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের পরিবর্তে নিজেদের আখের গোছানো ও গোষ্ঠীতন্ত্রের ভিত পাকা করার যে রাজনীতি, তার দিন যে দ্রুত ফুরিয়ে আসছে সে কথাটা সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথ ও সঠিকভাবে অনুধাবন করতে হবে। নইলে দেশের অন্যদের সাথে সাথে তাদেরও কঠিন মূল্য দিতে হতে পারে এ জন্য।

যে ভাষা আন্দোলনের মূল শিক্ষা ছিল কোন অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করা, সেই ভাষা আন্দোলনের ঐতিহ্যবাহী আমাদের এই বাংলাদেশে আজ যখন সাম্রাজ্যবাদী, আধিপত্যবাদী অপশক্তির অন্যায় আস্ফালন দেখি, যখন তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের সামনে 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী' শাসকদের নির্বিকার ভাবে নতজানু হতে দেখা যায়, তখন ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের মহান শহীদরা কবরে শুয়েও শান্তি পান না।

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস থেকে আমরা যেমন স্বাধীনতাকে যথাযথ মূল্য দিতে শিখিনি, তেমনি শিখিনি দেশে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে অবাধ করে গণতন্ত্রচর্চাকে জোরদার করে তুলতে। নির্বাচনের প্রাক্কালে জনগণের সামনে নিজেদের গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী বলে জাহির করতে একশ্রণীর নেতানেত্রীদের কখনও ক্লান্তিবোধ করতে দেখা যায় না। যেনতেন প্রকারে ভোটারবিহীন একটি নির্বাচনের মাধ্যমে একবার ক্ষমতাসীন হয়েই ফ্যাসিবাদী পদ্ধতিতে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হামলা ও মামলার শিকার করতে এদের কোন জুড়ি নেই। অথচ গণতন্ত্রের প্রধান শিক্ষাই হচ্ছে ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। দুর্ভাগ্যক্রমে এই শিক্ষাটা দেশের এইশ্রেণীর নেতৃবৃন্দের মধ্যে নিদারুণভাবে অনুপস্থিত। ফলে যে দেশের অন্যতম প্রধান মূলনীতিই হচ্ছে গণতন্ত্র, যে দেশে গণতন্ত্র হত্যাই যেন হচ্ছে বর্তমান শাসকদের প্রধান টার্গেট। এ ভয় আরও প্রবল হচ্ছে কারন খুন-গুম-ধর্ষণ-শিশু নির্যাতন-ব্যাংক লুটপাটের ঘটনা এতবেশি হচ্ছে যে, আমরা এখন এটিকেই স্বাভাবিক মেনে নিচ্ছি। বিচারহীনতার উদাহরণ সমাজের সর্বত্র। কেননা চিহ্নিত ভয়ংকর সন্ত্রাসীদের মুক্তি দেয়ার পাশাপাশি বিরোধী দলের নেতৃস্থানীয়দের নানা হয়রানি, হামলা-মামলার জালে আটকিয়ে নিষ্ক্রিয় করে তোলার পরিকল্পিত অপপ্রয়াসের মাধ্যমে। দেশে এখন একটি মাত্র দল ছাড়া অন্য সকল রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম প্রায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি বিরোধী দলের মূল যে দাবি- জাতীয় নির্বাচন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে করার, সে দাবীকে পাশকাটিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের সংকল্পে সরকারের অটল থাকার ঘোষণা দেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। মনে হয় গণতন্ত্র নয়, দলতন্ত্র ও ব্যক্তিতন্ত্র প্রতিষ্ঠায়ই বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর আগ্রহ বেশি।

ভাষা আন্দোলনের ঐতিহ্যবাহী দেশে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিধন্য এই ফেব্রুয়ারী মাসে চারদিকের অবস্থা ও ঘটনাবলী দেখে মনে হয় ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস থেকে আমরা কোন শিক্ষাই গ্রহণ করিনি। ফলে প্রতিবেশী হবার সুযোগে সাম্রাজ্যবাদী, আধিপত্যবাদী অপশক্তি বাংলাদেশের স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রসত্তাকে অবমূল্যায়ন করতে আজ সামান্যতম ইতস্তত করে না। কারণ তারা জানে, আমাদের ক্ষমতাসীন নেতৃবৃন্দ নিজেদের আখের গোছাতে এবং প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করতে এতবেশি ব্যস্ত থাকেন যে, এতে করে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্য ও গণতন্ত্রই কি নিদারুভাবে দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে পড়ছে, তা উপলব্ধি করার সময় তাদের নেই বলেলেই চলে।


লেখকঃ মারুফ খান - প্রবাসী সংগঠক ও সাবেক ছাত্রনেতা।

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত