দৈনিক সিলেটের ডাক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ ও অনুসন্ধানী প্রতিবেদন
ছবিঃ এলএবাংলাটাইমস
গত ০১/০৬/২০২৫ ইং তারিখে ‘দৈনিক সিলেটের ডাক’ পত্রিকায় ‘দক্ষিণ সুরমায় কবরস্থানের উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ চেষ্টার অভিযোগ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনটি অসত্য, মনগড়া ও অসম্পূর্ণ তথ্যের উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। মবশ্বির আহমদ, শহীদুল ইসলাম এবং জিতু মিয়া এই মিথ্যা প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য প্রকাশ করছে।
‘দক্ষিণ সুরমার লালাবাজারে কবরস্থান ও পারিবারিক সম্পত্তির উপর দিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণ চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে’ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু অনুসন্ধান এবং সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র যাচাই করে দেখা গেছে, প্রতিবেদনে উল্লেখ করা এই তথ্যটি সত্য নয়।
যে জায়গা দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে, তা একটি সরকারি গেজেটভুক্ত রাস্তা, যার আইডি নং- ৬৯১৯৫৫২০৫। এই রাস্তাটি ১৯৮০ সালে সরকারি গেজেটভুক্ত হয়। এখানে কোনো ব্যক্তির কবর নেই বরং এই রাস্তা দিয়ে দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে এলাকাবাসী চলাচল করে আসছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এসএ ৩৪২ - বিএস ৩৪৫ নং দাগের ১৪ শতাংশ জায়গার উপর রাস্তার উত্তর পাশে যে কবরস্থানের দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে তা ডিসির খতিয়ানে বা সরকারি জমির উপর। উপরে উল্লেখিত দাগের মূল মালিক হচ্ছেন মবশ্বির আহমদ ও শহিদুল ইসলাম জিতু মিয়া গংদের পূর্ব পুরুষ মরহুম ইস্কনদর আলী গং ও হাজী আবদুল্লাহ গং। ১৯৫৪ সালের সেটেলম্যান্ট জরিপে মাঠ পর্চায় এই জমিটি বরুন্ডী শ্রেণী হিসেবে ঐ মালিকদের নামে লিপিবদ্ধ হয়েছে। তবে এসএ প্রিন্ট রেকর্ডে এই জমিটি ভুলবশত শ্রেণী কবরস্থান হিসেবে ডিসির খাস খতিয়ানে রেকর্ডভুক্ত হয়, তবে আদৌ এখানে কোন কবরস্থান ছিলো না বা এখনো নেই। এটি বিগত কয়েক যুগ ধরে রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে। পরবর্তীতে ২০০৪ সালের বিএস জরিপেও জমিটি অনুরূপভাবে ডিসির খাস খতিয়ান হিসাবেই বহাল থাকে। এই এসএ ৩৪২ ও বিএস ৩৪৫ দাগের সড়কটি যেহেতু জনস্বার্থে ব্যবহার হয়ে আসছিল বিধায় এই বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি বলে জানান মুবাশ্বির আহমদ ও জিতু মিয়া। তারা আরও বলেন, ‘যখন ৩০ বছর আগে এখানে দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছিল তখন এলাকার বিশিষ্ট মুরব্বিদের উপস্থিতিতেই সেটা করা হয়েছে’। তারা বলেন, ‘যেহেতু এটা আমাদের পূর্বপুরুষের জায়গা এখানে আরিফ চৌধুরী বা আফিয়ান চৌধুরী গংদের কোনো অংশীদারিত্ব নেই। সুতরাং আমাদের জায়গার উপর তাদের অভিযোগ বেমানান ও হাস্যকর’।
এছাড়া আফিয়ান চৌধুরী লালাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় এই রাস্তার উপর সরকারি বরাদ্দ এনে ব্রিজ তৈরি করে দিয়েছেন। টিআর ও কাবিখা প্রকল্পের বরাদ্দ এনে এই রাস্তা সংস্কার করে দিয়েছেন দুইবার। বর্তমান দৃশ্যমান রাস্তার উপর ভিত্তি করে এবং ১৯৮০ সালে রাস্তাটি গেজেটভুক্ত হয়েছে বিধায় সরকার ৮২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে রাস্তার উন্নয়নমূলক কাজের জন্য। সুতরাং ‘কবরস্থানের জায়গা দখল করে রাস্তা নির্মাণ হচ্ছে’ মর্মে আরিফ চৌধুরী ও আফিয়ান চৌধুরীর করা অভিযোগ যুক্তিসঙ্গত নয়।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, পারিবারিক সম্পত্তির উপর দিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে- এই তথ্যটিও অসত্য। আমাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, যে রাস্তার কাজ চলমান রয়েছে, এটি একটি সরকারি গেজেটভুক্ত রাস্তা, যার আইডি নং ‘সড়ক নং- ৬৯১৯৫৫২০৫’। এর পাকাকরণ নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে। সরকারিভাবে সড়কের ৩৭৫ মিটার নির্মাণ কাজ অনুমোদন করা হয় এবং এর জন্য ৮২ লক্ষ টাকা সরকারি অর্থ বরাদ্দ করা হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে সড়ক নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আল ফারুক এন্টারপ্রাইজ। তারা ইতোমধ্যে ৩৭৫ মিটারের মধ্যে ৩৪০ মিটার সড়ক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছে। বাকি ৩৫ মিটার সড়ক নির্মাণ কাজ করতে গেলে স্থানীয় ব্যক্তি আফিয়ান চৌধুরী ও আরিফ চৌধুরীর বাধার মুখে বন্ধ হয়ে যায়। যেহেতু এটি অনেক আগে থেকেই সরকারি গেজেটভুক্ত রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে এবং এর জন্য সরকারি অর্থ বরাদ্দ এসেছে, সেহেতু এটিকে কোনোভাবেই ‘পারিবারিক সম্পত্তির উপর দিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণ করার চেষ্টা’ বলে উল্লেখ করা যাবে না।
আমাদের অনুসন্ধানে একটি ভিডিও আমাদের হাতে এসেছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, এই রাস্তার ওয়ার্ক অর্ডার আসার পর এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ একত্রিত হয়ে রাস্তার জন্য ১২ ফুট জায়গা নির্ধারণ করেছেন। সেসময় আফিয়ান চৌধুরী ও আরিফ চৌধুরী সশরীরে উপস্থিত থেকে জায়গা নির্ধারণে সহযোগিতা করেন। পরবর্তীতে পুকুরের উত্তর পাড়ে রাস্তার জায়গা ছেড়ে তাদের বাড়ির সীমানা রক্ষায় সাত ফুট উচ্চতার সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মবশ্বির আহমদ, শহীদুল ইসলাম, জিতু মিয়াসহ কয়েকজন সরকারি রেকর্ডকৃত রাস্তার ২৫ শতাংশের অধিক দেয়াল তুলে অবৈধভাবে দখল করে জনসাধারণের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে- এই তথ্যটিও অসত্য। এখানে গত ৩০ বছর আগে দেয়াল নির্মিত হয়েছে। অত্র এলাকার মুরুব্বীদের উপস্থিতিতে ও বর্তমানে যারা রাস্তার বিরোধীতা করছে, তাদের উপস্থিতিতে এই দেয়াল নির্মাণ করা হয়। এর পাশ দিয়ে সরকারি রাস্তা চিহ্নিত করে নির্মাণকাজ শুরু করা হয়েছে। এখানে অবৈধভাবে দখল করার যে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে, সেটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বানোয়াট।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সে জায়গা দিয়ে সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে, সেটি সরকার স্বীকৃত কবরস্থান। কিন্তু এটি মোটেও সত্য নয়। প্রিন্ট পর্চায় ভুল করে জায়গাটিকে শ্রেণী কবরস্থান হিসেবে উল্লেখ করলেও অন্যান্য সব কাগজপত্রে এটি শ্রেণী বরুন্ডী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এখানে কারো কবর নেই এবং কখনও এই স্থানে কাউকে কবর দেওয়া হয়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মবশ্বির আহমদ, শহীদুল ইসলাম, জিতু মিয়া গ্রামের পঞ্চায়েত এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দেয়া রায়কে অবজ্ঞা করেছেন- যা সম্পূর্ণ বানোয়াট তথ্য বলে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে।
২৭/০৫/২০২৪ তারিখে সিলেট জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর এলাকাবাসী একটি লিখিত আবেদন করেন। যার বিষয় ছিল ‘গেজেটভুক্ত সরকারি রাস্তার নির্মাণ কাজ জোরপূর্বক বন্ধ করে চলাচল ও উন্নয়নমূলক কাজে বাধা সৃষ্টির প্রসঙ্গে’। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক তাৎক্ষণিক উপজেলা নির্বাহী অফিসার উর্মি রায়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। উর্মি রায় ০১/০৬/২০২৫ (শনিবার) দুপুর বেলা সরেজমিনে রাস্তা পরিদর্শন করতে আসেন। সে সময় আফিয়ান চৌধুরী অভিযোগ করেন- কবরস্থানের উপরে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। ইউএনও মহোদয় রাস্তা সবদিকে পরিদর্শন করে এলাকাবাসীর সামনে জানান, উনি এদিকে কবরস্থানের কোনো অস্তিত্ব বা চিহ্ন-প্রমাণ পান নাই। সে সময় ঊর্মি রায় বিষটি নিশ্চিত করতে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারকে জিজ্ঞেস করেন এই রাস্তা কত সালে গেজেটভুক্ত হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার জানান যে রাস্তাটি ১৯৮০ সালে প্রথম গেজেটভুক্ত হয়েছে। তখন ইউএনও মহোদয় এই রাস্তার কাজ শুরু করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে চাইলে আফিয়ান চৌধুরী গং জানান, ০৩/০৬/২০২৪ (সোমবার) তারিখে একটা সালিশ বৈঠকের তারিখ নির্ধারণ করা সেই সালিশেই আফিয়ান চৌধুরী গং বিষয়টি সুরাহা করবেন বলে ইউএনও মহোদয় ঊর্মি রায়ের কাছে সময় চেয়ে নেন। ইউএনও ঊর্মি রায় সালিশের জন্য সময় দিয়ে উভয় পক্ষকে নির্দেশ দেন সালিশে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে। অন্যথায় তিনি প্রশাসন দিয়ে রাস্তার কাজ শুরু করবেন।
০৩/০৬/২০২৪ সোমবার সকাল ১০টায় পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এলাকার বিশিষ্ট সালিশ ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে। সালিশ বৈঠকে সবাই রাস্তার কাজের পক্ষে মত প্রকাশ করেন। কিন্তু এ সময় আফিয়ান চৌধুরী গং আবারও সালিশ ব্যক্তিদের কাছ থেকে দুইদিন সময় চেয়ে নেন বিষয়টি সুরাহা করার জন্য। তাদেরকে সালিশে দুইদিন সময় দেওয়া হয়। কিন্তু সরকারি রাস্তার কাজ আটকাতে পারবেন না বুঝতে পেরে তারা বিষয়টি সুরাহা না করে ০৪/০৬/২০২৪ তারিখে মাননীয় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৫ ধারার একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে, যার মামলা নং ৩৫/২০২৪। পরবর্তীতে এই মামলার দুই তরফা শুনানি শেষে মাননীয় আদালত রাস্তার পক্ষে রায় দিয়ে মামলাটি নথিজাত করেন। মহামান্য আদালতের রায়ে বলা হয় ‘উক্ত রাস্তা সরকারিভাবে গেজেটেডভুক্ত ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের অংশ। উক্ত ভূমিতে কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে উভয় পক্ষকে বিরত থাকার জন্য বলা হলো’। কিন্তু আদালতের নির্দেশ অমান্য করে রাস্তার উপর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রাখে আফিয়ান চৌধুরী গং। পরবর্তীতে তারা মাননীয় সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে আরেকটি মামলা দায়ের করে রাস্তার কাজের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে, যার মামলা নং ২৭৯/২০২৪। এই মামলার দুইতরফা শুনানি শেষে মাননীয় আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার প্রার্থনা নামঞ্জুর করেন।
সরকারি সার্ভেয়ার তিনবার উভয়পক্ষের আমীনের উপস্থিতিতে ভূমি মাপজোখ করে এবং মবশ্বির আহমদ, শহীদুল ইসলাম, জিতু মিয়া এবং সহযোগীদের দখলকৃত দেয়াল ভেঙ্গে ফেলতে অনুরোধ করেন বলে যে তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে সেটি অস্পূর্ণ এবং বিভ্রান্তিকর।
মূলত আফিয়ান চৌধুরী গংদের পুকুরের পূর্ব দেয়াল ও উত্তর দেয়াল এর ভিতর সরকারি রাস্তার জায়গা দখল করে দেওয়া হয়েছে। সার্ভেয়ার সরেজমিন পরিদর্শন শেষে আফিয়ান চৌধুরী ও মবশ্বির আহমদ উভয়পক্ষকে সরকারি রাস্তা দখল করে নির্মিত দেয়াল ভাঙ্গতে নির্দেশ দেন। কিন্তু আফিয়ান চৌধুরী গং সেই নির্দেশ অগ্রাহ্য করে দেয়াল ভাঙ্গেনি। কিন্তু প্রতিবেদনে সরকারি জায়গা দখল করে আফিয়ান চৌধুরীর নির্মিত দেয়ালের বিষয়টি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।
এছাড়া প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত ৩ ডিসেম্বর ভুয়া শিক্ষার্থীদের নাম ব্যবহার করে আরিফুল হক চৌধুরী ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতে প্রতিবন্ধকতা তৈরির অভিযোগ এনে দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সরাসরি তদন্তে এ অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু যাচাই করে দেখা গেছে এই তথ্যটি সত্য নয়। এখানে ওসির তদন্তের বিষয়ে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। ওসির সাথে তথ্য যাচাই করতে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘কোনো সাংবাদিককে তিনি রাস্তার বিষয়ে কোনো কিছু বলিনি। আমার নাম দিয়ে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ ও প্রকাশ করা হয়েছে’।
প্রকৃতপক্ষে ওসির নিকট দেওয়া অভিযোগে কোনো ভুয়া শিক্ষার্থীর নাম ব্যবহার করা হয়নি। নির্মিতব্য রাস্তা দিয়ে ৩ গ্রামের ৫টি স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা চলাচল করে থাকে। চলাচলে অসুবিধা হওয়ায় শিক্ষার্থীরাই বিষয়টি ওসি মহোদয়কে অবগত করেন। ওসি মহোদয় শিক্ষার্থীদের বলেন একজন শিক্ষকের মাধ্যমে এই সমস্যা নিয়ে একটি লিখিত আবেদন দিতে হবে। পরবর্তীতে ওসি সাহেবের নির্দেশেই শিক্ষার্থীরা একজন শিক্ষকের মাধ্যমে একটি অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, নির্মিতব্য এই রাস্তাটি সরকারি গেজেটভুক্ত ও দৃশ্যমান বিধায় এলজিইডির অনুমোদন সাপেক্ষে এটির উন্নয়নের জন্য ৮২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এটি কয়েকশ বছরের পুরাতন দৃশ্যমান রাস্তা এবং এই রাস্তা দিয়ে কয়েক যুগ ধরেই মানুষ চলাচল করে আসছে। পত্রিকায় ‘দক্ষিণ সুরমায় কবরস্থানের উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ চেষ্টার অভিযোগ’ মর্মে যে প্রতিবেদন লেখা হয়েছে সেটি অসত্য এবং উদ্দেশপ্রণোদিত।
এই সংবাদ বিষয়ে জানতে প্রতিবেদক ‘সিলেটের ডাক’ পত্রিকার দক্ষিণ সুরমা প্রতিনিধি জাহাঙ্গির আলম মুসিকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি স্বীকার করে বলেন, ওসি সাহেবের সাথে তার কোনো কথা হয়নি। আর একজন স্থানীয় সাংবাদিক জানান, সেনাবাহিনীর কাছে দেওয়া আরিফ চৌধুরীর একটি অভিযোগের আবেদনের কাগজের ভিত্তিতে এই সংবাদ প্রকাশ করে দৈনিক সিলেটের ডাক। অভিযোগের আবেদনের কাগজ সংগ্রহ করে দেখা গেছে, আবেদনে সঠিক তথ্য লুকিয়ে ও মিথ্যা বানোয়াট তথ্য পরিবেশন করে অভিযোগ দায়ের করা হয়।
এই রাস্তার আইনি বিষয়ে আরো জানতে দেওয়ানি মামলার একজন বিশেষজ্ঞ আইনজীবী শাহিন আহমদ এর সাথে কথা বলা হয়। এই আইনজীবী বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিটি জমির মালিক রাষ্ট্র বা সরকার। সরকার যদি ওই জমিতে রাস্তা নির্মাণ, রেলপথ, জল প্রকল্প, স্কুল, হাসপাতাল, বিমানবন্দরের মতো জনকল্যাণমূলক প্রকল্প সম্পন্ন করতে চায়, তাহলে সরকার তা অধিগ্রহণ করতে পারে। এখানে প্রকৃত কবরস্থান নেই, শ্রেণী পরিবর্তন হয়ে বরুন্ডির জায়গায় কবরস্থান লিপিবদ্ধ হয়েছে। এটি সাধারণ ভুল, এরকম ভুল অহরহ হয়ে থাকে। তাছাড়া ২০ বছরের অধিক সময় ধরে জনসাধারণ এই রাস্তা ব্যবহারের কারণে একটা ইজমেন্ট রাইট বা সুখাধিকার তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা এই রাস্তা সরকারের গেজেটভুক্ত। রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষরের পর একটা গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ছাড়া কারো ক্ষমতা নেই এই রাস্তার আকৃতি বা অবস্থান পরিবর্তন করার’।
বিবাদী মবশ্বীর আহমদ বলেন, ‘আরিফ চৌধুরী প্রকৃত সত্য গোপন রেখে ও মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে সেনাবাহিনীর কাছে অভিযোগ জমা দিয়েছেন। আমরাও সেনাবাহিনীকে রাস্তার এই বিষয়টা অবগত করে রেখেছি। সেনাবাহিনী তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস’।
তিনি আরও বলেন, ‘আফিয়ান চৌধুরী ও আরিফ চৌধুরী অহেতুক রাস্তার কাজে বাধা প্রদান করে যাচ্ছেন। এই আফিয়ান চৌধুরী যখন চেয়ারম্যান হয়েছেন, তখন আমাদের অবদান ছিল। আজ যারা ওনার সাথে থেকে রাস্তার বিরোধিতা করে যাচ্ছেন তারা কেউই ছিলেন না উনার নির্বাচনের সময় উনার সাথে। বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলায় আসামী হয়ে আমাদের বাড়িতে আত্মগোপনে থাকতেন। আজ আমাদের সাথে তিনি এরকম ব্যবহার করে যাচ্ছে তা খুবই দুঃখজনক’।
এছাড়া এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা সরকার ও প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন দ্রুতই রাস্তার কাজ বাস্তবায়ন করার জন্য। রাস্তার উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দেয়াল করে মাঝে দিয়ে রাস্তা দৃশ্যমান। এরকম একটা সুন্দর ও কয়েক যুগ পুরাতন রাস্তার কাজে যেহেতু বাধা প্রদান করে এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করা হচ্ছে তা দুঃখজনক বলে জানান এলাকাবাসী।
স্কুলের শিক্ষার্থীরা বলেন, এই রাস্তা দিয়ে আমরা স্কুলে যাতায়াত করি। বর্ষা মৌসুমে রাস্তায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়। আমরা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর কাছে বিনীত অনুরোধ দ্রুত রাস্তার উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করে আমাদের কষ্ট লাঘব করবেন।
(এই প্রতিবেদনটি সকল প্রকার সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র ও তথ্য যাচাইবাছাই করে নির্মোহভাবে লিখা হয়েছে)
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
শেয়ার করুন