ধর্ষণ মামলায় হার্ভকে দোষী সাব্যস্ত করে ২০২০ সালে দেওয়া রায় বাতিল
হামলার শহরেও স্বস্তিতে অস্ট্রেলিয়া
ছবি: সংগৃহীত
জাহাজে করে আগেই অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের লাগেজ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। তা আবার সোনারগাঁ হোটেলেও পৌঁছে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষপর্যন্ত দলই আসেনি। ২০১৫ সালে নিরাপত্তার অজুহাতে শেষ মুহূর্তে বাংলাদেশ সফর বাতিল করে অস্ট্রেলিয়া জাতীয় ক্রিকেট দল। অথচ দুই বছর পর ইংল্যান্ডে যখন পরপর দুইবার হামলার ঘটনা ঘটলো, তখনও স্বস্তিতে অস্ট্রেলিয়ার সেই স্টিভেন স্মিথ-গ্লেন ম্যাক্সওয়েলরা।
বাংলাদেশে গেলে ক্রিকেটাদের উপর জঙ্গী হামলা হবে। অস্ট্রেলিয়ান নিরাপত্তা পরিদর্শক কমিটি থেকে শুরু করে, বাংলাদেশে অবস্থিত অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশন থেকেও বাজানো হয়েছে ‘ভাঙা রেকর্ড’। শেষপর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া সরকারও ক্রিকেটারদের বাংলাদেশ সফরে নিষেধাজ্ঞা দেয়। আসেনি অজিরা, প্রাপ্য দুই টেস্ট কয়েক দফা আলোচনার পর তা গড়াতে যাচ্ছে চলতি বছরের আগস্টে। সেখানেও পুরনো দুঃস্মৃতি। এবারও নাকি অস্ট্রেলিয়া দলের উপর হামলা হতে পারে। এমন প্রতিবেদন ঢালাওভাবে প্রকাশ করে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যম। বাংলাদেশ সফরে সেবার রাষ্ট্রপতি সমমর্যাদার নিরাপত্তা দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছিলো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তাতেও মন গলেনি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ)। এমনকি বাংলাদেশে গেল বছর অনুষ্ঠিত হওয়া অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে যেখানে সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠভাবে গড়ালো পুরো টুর্মামেন্ট, সেখানে পুরনো জুজুর ভয়ে থরথর ‘ক্যাংগারু’বাহিনী। দলই পাঠালো না তারা! ভয়, বাংলাদেশে গেলেই জঙ্গী হামলার মুখে পড়তে হবে।
গত বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ও দুটি টেস্ট খেলে গেছে ইংল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দল। আসার আগে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডও (ইসিবি) পাঠিয়েছিলো তাদের নিরাপত্তা পরিদর্শক কমিটি। সন্তুষ্ট হয়ে দল পাঠিয়েছিলো তারা। অবশ্য ‘জীবনের ঝুঁকি’ থাকায় বাংলাদেশ সফরে আসেনি অধিনায়ক ইয়ন মরগানসহ আরো কয়েকজন ক্রিকেটার। সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয়েছিল পুরো সিরিজ। ক্রিকেটারদের মুখেই ফুটেছিলো নিরাপত্তা নিয়ে প্রশংসার ফুলঝুরি। ঠিক তার পরের বছরই ইংল্যান্ডের মাটিতে গড়াচ্ছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আসর। পশ্চিমা দেশ হলেও, একমাসের মধ্যে পরপর দুইবার বড় ধরণের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে সেখানকার নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে। টুর্নামেন্টের আগে ম্যানচেস্টারের কনসার্টে বোমা হামলায় ২২ জন নিহত হন এবং আহত হন ৫০ জনেরও বেশি। এরপর টুর্নামেন্টের চার নম্বর ম্যাচের আগে শনিবার লন্ডন ব্রিজে হামলায় নিহত হন আরও সাতজন, আহত প্রায় ২২ জনের মতো।
নিঃসন্দেহে অবস্থানটা বাংলাদেশ হলে এতোক্ষণে তল্পিতল্পা গুটিয়ে দেশের বিমান ধরতো অস্ট্রেলিয়া দল। হয়তো বাংলাদেশ নয়, অস্ট্রেলিয়া সরকারের পাঠানো জরুরী বিমানেই ঘরের পথ ধরতো তারা। হয়তো আজীবন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আয়োজনে নিষিদ্ধ হতে পারতো বাংলাদেশ। অবস্থাটা হতে পারতো পাকিস্তানের মতো! কিন্তু ইংল্যান্ডে এমন বড় ধরণের দুটি হামলার পরও স্বস্তিতে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল। ইংলিশ নিরাপত্তাবাহিনীর উপরও রয়েছে তাদের ভরসা। হামলার পরপরই এক সংবাদ সম্মেলনে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া বলেছে, ‘আইসিসি ও ইসিবির নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে আমাদের নিরাপত্তা পরিদর্শকরাও কাজ করছে। ক্রিকেটার ও কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যাপারে সচেষ্ট রয়েছে। এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট।’
অথচ বাংলাদেশ সফরে এরচেয়েও বেশি নিরাপত্তাব্যবস্থা দেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিলো। অস্ট্রেলিয়ার নিজস্ব নিরাপত্তা কমিটিকে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার সুযোগও দেওয়া হয়েছিলো। তারপরও আসেনি অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশের ‘সন্দেহ’ ইংল্যান্ডে ‘বাস্তব’ হয়েছে। তাতেও খুশি বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। মাঝখান দিয়ে মুশফিক-সাকিবদের বিপক্ষে সিরিজটা স্থগিত করেছে অজিরা।
শেয়ার করুন