অনিশ্চিত গন্তব্যে হাজারো অভিবাসী : আন্দামানে ১০ জনের মৃত্যু
ফেরাল মালয়েশিয়া
আন্দামান সাগরে বৃহস্পতিবার একটি নৌকায় খাবারের জন্য অসহায় রোহিঙ্গাদের আহাজারি -
এএফপি
ইন্দোনেশিয়ার পর এবার মালয়েশিয়াও তীরে ভিড়তে দিল না অভিবাসীদের দুইটি নৌযান।
বৃহস্পতিবার ৮০০ বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গাদের নিয়ে মালয়েশিয়ার জলসীমায় পৌঁছলে নৌযান দুইটিতে
খাবার ও ওষুধ সরবরাহ করে আবারও গভীর সাগরে পাঠানো হয়। এদিন আন্দামান সাগরে
থাইল্যান্ডের সমুদ্রসীমায় আরেকটি অভিবাসী নৌযানের সন্ধান পাওয়া গেলেও তাদের উদ্ধার করা
হয়নি। ওই নৌযানে ৩৫০ মানুষ চরম সঙ্কটের মধ্যে রয়েছেন, যাদের অধিকাংশই রোহিঙ্গা। অনাহার,
রোগ-শোকে ওই নৌযানে অন্তত ১০ জন মারা গেছেন। এদিকে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও
ইন্দোনেশিয়া অভিবাসীদের আশ্রয় দিতে প্রত্যাখ্যান করায় গন্তব্যহীন হয়ে পড়েছেন সাগরে ভাসা প্রায়
৬ হাজার মানুষ। এদের উদ্ধারে জাতিসংঘ আঞ্চলিক সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানালেও তাতে
কান দিচ্ছে না কেউই।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, সাগরে থাকা এ লোকজনের জীবন চরম সঙ্কটের মুখে।
মাসের পর মাস সাগরে বুকে খাদ্য-পানির অভাব ও রোগভোগে তাদের মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে।
অভিবাসী নৌযান ফিরিয়ে দেয়ায় থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার কঠোর সমালোচনা করেছে
নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। বৃহস্পতিবার
সংস্থাটি এক বিবৃতিতে তিন দেশকে এ পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানায়। বিবৃতিতে বলা
হয়, বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গা অভিবাসী বা আশ্রয়প্রার্থীদের বহনকারী নৌকাগুলো ফেরানো বন্ধ করা
উচিত থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার। অভিবাসীদের তীরে নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে তাদের
যেসব ত্রাণ প্রয়োজন, অবিলম্বে সেগুলো সরবরাহ করা উচিত।
সঙ্কটের জন্য দায়ী মিয়ানমার : মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর অব্যাহত নিপীড়ন
চালানোর মাধ্যমে এ সঙ্কট সৃষ্টি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন এইচআরডব্লিউ’র এশিয়াবিষয়ক
ডেপুটি পরিচালক ফিল রবার্টসন। তিনি বলেন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া কর্তৃপক্ষ
নৌকায় আসা অভিবাসীদের এ প্রবাহকে ফিরিয়ে দেয়ার নির্মম নীতি গ্রহণের মাধ্যমে ওই সমস্যাকে
আরও প্রকট করেছে, যা ঝুঁকিতে ফেলেছে হাজার হাজার জীবন। দ্য ব্যাংকক পোস্টের খবরে বলা
হয়, এখনও সাগরে ৬ হাজারের বেশি মানুষ চরম বিপদের মুখে রয়েছেন। তাদের আশ্রয়ের প্রয়োজন।
কিন্তু আঞ্চলিক কোনো সরকার তাদের উদ্ধারে, এমনকি আশ্রয় দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, এটা ভাবতেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে যে, শত
শত মানুষ গন্তব্যহীনভাবে নৌকায় করে সাগরে ভাসছে- মৃত্যু যাদের হাতছানি দিচ্ছে, যাদের কাছে
পর্যপ্ত খাবার ও পানি নেই। সংগঠনটির এশিয়াবিষয়ক পরিচালক ফিল রবার্টসন থাইল্যান্ড,
মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াকে এ অভিবাসীদের জীবন নিয়ে ‘না খেলার’ আহ্বান জানান।
এ প্রসঙ্গে মালয়েশিয়ার ডেপুটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ান জুনাইদি জাফর বলেন, আপনারা আমাদের কাছে
আর কী প্রত্যাশা করেন? যারা আমাদের সীমান্ত ভেদ করে প্রবেশ করেছে, আমরা তাদের সঙ্গে ভালো
ব্যবহার দেখিয়েছি। আমরা তাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করেছি। কিন্তু তারা তো বানের জলের মতো
এভাবে আসতে পারে না। বার্তা সংস্থা এপির সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, আমরা একটি বার্তা দিতে
চাই যে মালয়েশিয়ায় তাদের স্বাগত জানানো হবে না। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ১ হাজার অভিবাসীকে আশ্রয়
দেয় মালয়েশিয়া, লাংকাওয়ি প্রদেশের উপকূল থেকে যাদের উদ্ধার করা হয়।
থাই সমুদ্রসীমায় নৌযান : বৃহস্পতিবার আরেকটি নৌযানের সন্ধান পাওয়া যায় আন্দামান সাগরের
থাইল্যান্ডের কোহ লাইপ দ্বীপের কাছে। থাইল্যান্ডের কোস্টগার্ড এ নৌযানটিকে উদ্ধার করেনি। তবে
গণমাধ্যমে ওই নৌযানে থাকা অসহায় মানুষের বেশকিছু ছবি প্রকাশিত হয়েছে। ওই নৌযানে থাকা
এক রোহিঙ্গা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, যাত্রাকালে আমাদের নৌকায় ১০ জন মারা গেছেন।
তাদের মরদেহ সমুদ্রে ফেলে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার উদ্দেশে দুই মাস ধরে আমরা
যাত্রা শুরু করেছি। কিন্তু এখনও সেখানে পৌঁছতে পারিনি। এসব নৌযানে বহু নারী ও শিশু রয়েছেন
বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে।
মূত্রপান করে বেঁচে আছে রোহিঙ্গারা : বিবিসি জানায়, থাইল্যান্ডের উপকূলে আন্দামান সাগরে ওই
নৌকায় ভাসতে থাকা রোহিঙ্গা মুসলিমরা খাদ্য ও পানির অভাবে এখন এমনই ভয়ঙ্কর দুর্দশার মধ্যে
আছে যে, তাদের বেঁচে থাকার জন্য নিজেদের মূত্র পান করতে হচ্ছে। অবৈধভাবে সমুদ্রপথে এদের
থাইল্যান্ড হয়ে মালয়েশিয়ায় পাচার করা হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার বিবিসির সংবাদদাতা জনাথান হেড
এদের অবস্থা সরেজমিন প্রত্যক্ষ করেন। আন্দামান সাগরে মাছ ধরার একটি ট্রলারে তিনি দেখেছেন
প্রায় ৩৫০ রোহিঙ্গা এক সপ্তাহ ধরে খাদ্য ও পানীয়ের অভাবে নিজেদের মূত্র পান করে বেঁচে থাকার
জন্য সংগ্রাম করছেন। কয়েক দিন আগে নৌকার চালক এবং কর্মচারীরা ইঞ্জিন অকেজো করে
পালিয়ে যায়। পরে থাইল্যান্ডের নৌ সদস্যরা হেলিকপ্টারের মাধ্যমে তাদের নৌকায় খাদ্য ও পানি
সরবরাহ করেন। এদিকে মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে থাইল্যান্ডের সাতুন প্রদেশে প্রায় ২০০
জন অভিবাসীকে পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার থাই পুলিশের বরাত দিয়ে এনডিটিভি
এ খবর জানায়। এদের থাইল্যান্ডের সঙ্খলা প্রদেশের জঙ্গল থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল।
শেয়ার করুন