আপডেট :

        অতি বামদের কাছে আমার প্রশ্ন, তারা আমাকে উৎখাত করে কাকে ক্ষমতায় আনবে?

        মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী

        শ্রম অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের অগ্রগতির পর্যায়

        কক্সবাজারের পেকুয়ায় বজ্রপাতে নিহত হলেন দিদারুল ইসলাম

        ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে

        ফিরছে নিহত আট বাংলাদেশির কফিনবন্দি লাশ

        বন্যহাতির আক্রমণে কিশোরের মৃত্যু হলো

        চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় গুয়াংডং প্রদেশে একটি মহাসড়কের অংশ ধস

        চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় গুয়াংডং প্রদেশে একটি মহাসড়কের অংশ ধস

        আদালতে হাজির হবেন ইউনূসসহ সকল আসামি

        রাজবাড়ীতে ট্রেন চলাচল বন্ধ

        ডিজাব’র নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক

        দেশের শাসন কাঠামোর সব জায়গায় শ্রমিকদের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করার দাবি

        সাঁথিয়ায় ইউপি চেয়ারম্যানের কারাদণ্ড

        সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে অবিলম্বে ১০ম ওয়েজবোর্ড গঠন

        ঘুমের যত্নে প্রাকৃতিক উপায়

        গাড়িতে অযাচিত স্টিকার ব্যবহার

        অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

        উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে বন্যার সম্ভাবনা

        বর্তমান সরকার শ্রমিকদের জন্য যা করেছে, অন্য কেউ করেনি

শুধু মুজিব-জিয়াই স্বাধীনতার ইতিহাস নয় : নিউইয়র্কে সভায় বক্তারা

শুধু মুজিব-জিয়াই স্বাধীনতার ইতিহাস নয় : নিউইয়র্কে সভায় বক্তারা

১৯৭০’র ২২ ফেব্রুয়ারী স্মরণে আয়োজিত এক সভায় বক্তব্য রাখছেন মঈনুদ্দীন নাসের।

১৯৭০’র ২২ ফেব্রুয়ারী স্মরণে নিউইয়র্কে আয়োজিত এক সভায় বক্তারা বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে দিনটি ঐতিহাসিক দিন। কেননা, এদিন ঢাকার ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে ছাত্র ইউনিয়নের জনসভায় ১১ দফা কর্মসূচী সম্বলিত প্রচারপত্রে ‘স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা’ ঘোষণা দেয়া হয়। ছাত্র সমাজের যে ঘোষণা স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ভূমিকা রাখে। বক্তারা বলেন, ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধই স্বাধীনতার ইতিহাস প্রকৃত ইতিহাস নয়। শুধু মুজিব-জিয়াই স্বাধীনতার ইতিহাস নয়। আর আদালতের রায়েও প্রকৃত ইতিহাস রচিত হবে না। বক্তারা বলেন, মূলত: ১৯৪৭ সালের পর থেকেই বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে ১৯৭১-এর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। আর দেশের স্বাধীনতার আন্দোলনের নেপথ্যের মূল রূপকার মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। তিনিই সর্বপ্রথম ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে স্বায়াত্তশাসনের কথা বলেন, স্বাধীনতার কথা বলেন।

প্রবাসী বাংলাদেশী সমাজ-এর ব্যানারে ১৯৭০-এর ২২ ফেব্রুয়ারী উদযাপন কমিটি গত ২৪ ফেব্রুয়ারী শনিবার সন্ধ্যায় উক্ত সভার আয়োজন করে। নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসস্থ ইত্যাদি পার্টি হলে আয়োজিত সভায় দিনটিকে ‘স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা ঘোষণা দিবস’ ঘোষণার দাবী জানানো হয়। খবর ইউএনএ’র।

সভার আহ্বায়ক কাজী আশরাফ হোসেন নয়নের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন সাবেক ছাত্রনেতা, তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক আতিকুর রহমান ইউসুফজাই সালু। কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট আলী ইমামের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন প্রবীণ সাংবাদিক, সাপ্তাহিক আজকাল সম্পাদক মনজুর আহমদ, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিষ্ট মঈনুদ্দীন নাসের, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন খান, বর্তমান সিনিয়র সহ সভাপতি আব্দুর রহীম হাওলাদার, প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক জহির রায়হানের বোন শাহেন শাহ, মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার ফরহাদ, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট হাসানুজ্জামান হাসান, নীরা রব্বানী, নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি আজিজুল বারী তিতাস প্রমুখ। উল্লেখ্য, আতিকুর রহমান সালু পরবর্তীকালে কেন্দ্রীয় বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের পর্যায়ক্রমে সাধারণ সম্পাদক (১৯৭০-১৯৭১) ও সভাপতি (১৯৭২-১৯৭৩) ছিলেন।

সভায় বক্তারা বলেন, সহনশীলতার মাধ্যমে তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়েই দেশের স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস রচনা করতে হবে। নতুন প্রজন্মের কাছে প্রকৃত বাংলাদেশকে তুলে ধরতে হবে। বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ জাতিকে অনুপ্রাণিত করেছিলো এটা যেমন সত্য, তেমনী মওলানা ভাসানী ছিলেন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক পিতা এটাও ইতিহাসের সত্য। পাশাপাশি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণাও সত্য। আর ভাসানী-মুজিবের সম্পর্ক ছিলো পিতা-পুত্রের মতো। ইতিহাসের যার যার প্রাপ্য সম্মান তাঁকে দিতে হবে।

বক্তারা বলেন, ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ বাঙালীরা নায়, পাকিস্তানীরাই দেশের বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করলেও জহির রায়হান অন্তর্ধান হওয়ার কারণ কি? তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কারণ কি? তা জানতে হবে। জহির রায়হান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কলকাতা থেকেই দেশ বিরোধী, ষড়যন্ত্রকারী, লুটপাটকারী, সুবিধাবাধী আর আরাম-আয়েশকারীদের নিয়ে ফিল্ম তৈরী করতে চেয়েছিলেন বলেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। বক্তারা বলেন, জন্মের পর থেকেই বাংলাদেশ সমন্বয়হীনতার মধ্য দিয়ে চলছে বলেই দেশে এতো বিভক্তি-বিরোধ। যার জন্য ৪৬ বছরেও স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়িত্ব হয়নি।

সভায় আতিকুর রহমান ইউসুফজাই সালু তার দীর্ঘ স্মৃতিচারণ করে বলেন, আজ থেকে ৪৭ বছর আগে ১৯৭০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে লক্ষাধিক লোকের সমাবেশ থেকে স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা প্রতিষ্ঠার ডাক দেয়া হয়। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন গ্রুপ)-এর উদ্যোগে আয়োজিত উক্ত জনসভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ও ১১ দফা আন্দোলনের অন্যতম নেতা মোস্তফা জামাল হায়দার। বক্তব্য রাখেন ১৯৬২-এর আইয়ুবের সামরিক শাসন ও শরিফ শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বিরোধী আন্দোলনের নেতা এবং তৎকালীন শ্রমিক নেতা কাজী জাফর আহমেদ (মরহুম সাবেক প্রধানমন্ত্রী), ডাকসু’র সাবেক ভিপি ও তৎকালীন উদীয়মান কৃষক নেতা রাশেদ খান মেনন (সমাজকল্যাণ মন্ত্রী) এবং ছাত্র ইউনিয়নের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ও ১১ দফা আন্দোলনের অন্যতম নেতা মাহবুবউল্লা (ড. মাহবুবউল্লা)।

ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে ২২ ফেব্রুয়ারীর জনসভার শুরুতে স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলার (কর্মসূচী) প্রস্তাবনা পাঠ করার সুযোগ হওয়ার কথা উল্লেখ করে আতিকুর রহমান সালু বলেন, ২২ ফেব্রুয়ারী পল্টনের জনসভা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক। আর তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়ন ছিলো ছাত্র আন্দোলনের ‘নেইম ও ফেইম’। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন ‘ভ্যান গার্ড’-এর ভূমিকা পালন করে। তিনি বলেন, ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে আমরাই প্রথম জনসভা করে প্রকাশ্যে স্বাধীনতার ডাক দেই।

আতিকুর রহমান সালু বলেন, ১৯৭০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা তথা স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মূল সুর ও আকঙ্খা ছিলো সর্বক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তন, সকল বৈষম্যের অবসান এবং শোষনমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা। কিন্তু সেই স্বপ্ন আজো বাস্তবায়িত হয়নি। তিনি বলেন, সত্তুরের ২২ ফেব্রুয়ারী আমাদের জাতীয় জীবনের অনন্য দিন, ইতিহাসের বাতিঘর। দেশের চলমান রাজনীতির মত পার্থক্য ও কলুষ রাজনীতি দিয়ে সত্তুরের ২২ ফেব্রুয়ারীকে বিচার করলে চলবে না। ২২ ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিতহাসের ‘মাইল ফলক’। তাই স্বাধীনতার লক্ষ্য বাস্তবায়নে ২২ ফেব্রুয়ারী চিরকাল আমাদের পথ দেখাবে।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে কবিতা পাঠের আসর। এতে প্রবাসের কবিরা কবিতা পাঠ করেন। সবশেষে ছিলো প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পী স্বপ্না কাওসার সঙ্গীত পরিবেশন। এসময় তলায় সঙ্গত করেন কাওসার হোসেন মন্টু। সব শেষে আলোচনা সভা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব আহসান হাবীব উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান।


এলএবাংলাটাইমস/এএল/এলআরটি

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত