শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করে সংবাদ , পত্রিকা অফিসে আগুন
শ্রদ্ধা-ভালবাসায় স্যার ফজলে হাসান আবেদকে চিরবিদায়
সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় শেষ বিদায় নিলেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ।
গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে মারা যান ফজলে হাসান আবেদ। রোববার সকালে ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে আনা হয় তার মরদেহ। সকালে তার মরদেহে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষে শ্রদ্ধা জানান মেজর আশিকুর রহমান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে শ্রদ্ধা জানান তার উপ-সামরিক সচিব কর্নেল মো. সাইফুল্লাহ।
এর পর ফজলে হাসান আবেদের কফিন সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। একে একে শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, , যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ম তামিম, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. রাশেদা কে চৌধুরী, আকবর আলী খান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রমুখ।
বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার, বাংলাদেশে নিযুক্ত স্পেনের রাষ্ট্রদূত আলবারো দে সালাস, অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার জুলিয়া নিবলেট, নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়াও সমাজের বিশিষ্টজন ও সর্বস্তরের মানুষ স্যার ফজলে হাসান আবেদের মরদেহে শ্রদ্ধা জানান।
আর্মি স্টেডিয়ামে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘স্যার ফজলে হাসান আবেদের অবদান সর্বব্যাপী। সব উন্নয়নমূলক কাজেই ছিল তার বিচরণ। তিনি বাংলাদেশের ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমকে উন্নত করেছেন। তার চলে যাওয়া দেশে বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। তরুণ প্রজন্মকে তার কর্মকাণ্ড থেকে শিক্ষা নিতে হবে।’
শোক বইয়ে তিনি লিখেন, আবেদের সঙ্গে এ দেশের সাধারণ মানুষের ইতিহাস অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তার বিদায়ে এ দেশের মানুষ একজন বন্ধু হারালো। তার অবদান এ দেশের মানুষ পৃথকভাবে চিরজীবন স্মরণ রাখবে।’
আকবর আলী খান বলেন, তার মৃত্যুতে বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষ এক অকৃত্রিম বন্ধুকে হারিয়েছে। তিনি গত ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের কথা ভেবেছেন, দরিদ্র মানুষদেরকে নিয়ে কাজ করেছেন। উনি অনেক জানতেন, তবুও তিনি শিখতেন এবং শিখতে ভালোবাসতেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘স্যার ফজলে হাসান আবেদ ক্ষণজন্মা পুরুষ। বিশ্বজুড়ে যুগে যুগে মানুষের, বিশেষ করে সাধারণ মানুষের অবস্থানকে যারা পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছেন নিঃসন্দেহে স্যার ফজলে হাসান আবেদের নাম সেখানে লেখা থাকবে।’
রবার্ট মিলার বলেন, স্যার ফজলে হাসান আবেদ শুধু বাংলাদেশের না, সারা বিশ্বের কাছে অনুকরণীয় ব্যক্তি। তিনি যে উন্নয়নের কথা চিন্তা করেছেন তা বাংলাদেশ ছাপিয়ে বিশ্বমানবের উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে।
ড. রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, আবেদ ভাই ছিলেন প্রচারবিমুখ অসাধারণ একজন মানুষ। তিনি কাজ করেছেন সাধারণ মানুষের জন্য, দেশের জন্য।
দুপুর পৌনে ১টায় আর্মি স্টেডিয়ামে স্যার ফজলে হাসান আবেদের জানাজা হয়। এ সময় তার ছেলে শামেরান আবেদ বাবার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা সাবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। জানাজার সময় পুরো আর্মি স্টেডিয়াম লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়।
এর পর একটি লাশবাহী গাড়িতে করে স্যার ফজলে হাসান আবেদের মহদেহ নেয়া হয় রাজধানীর বনানী কবরস্থানে। সেখানে তার স্ত্রীর কবরে তাকে শায়িত করা হয়।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ ১৯৩৬ সালের ২৭ এপ্রিল তদানীন্তন সিলেট জেলার হবিগঞ্জ মহকুমার বানিয়াচংয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন অ্যাসিসট্যান্স কমিটি সংক্ষেপে ‘ব্র্যাকে’ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭২ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি ব্র্যাকের চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্র্যাক ব্যাংকেরও প্রতিষ্ঠাতা।
স্যার ফজলে হাসান আবেদ ২০১৯ সালের ১ আগস্ট ব্র্যাকের চেয়ারপারসন পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন এবং চেয়ার এমেরিটাস হিসেবে দায়িত্ব নেন।
শেয়ার করুন