আপডেট :

        আবারও একবার টিভি পর্দায় ফিরে এলো ডকুড্রামা ‘হাসিনা

        এশিয়ার ফুটবলে নতুন করে বর্ষপঞ্জি সাজিয়েছে এএফসি

        যারা একবেলা খেতে পারতো না, তারা এখন চারবেলা খায়ঃ শেখ হাসিনা

        এশিয়ার ফুটবলে নতুন করে বর্ষপঞ্জি সাজিয়েছে এএফসি

        দরজায় কড়া নাড়ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসর

        ১০ হাজার বাংলাদেশি অভিবাসীদের ফেরত পাঠাচ্ছে ব্রিটেন

        সহজেই কিছু ফেসপ্যাক বানানোর টিপস

        অন্ততপক্ষে ২০ এমবিপিএসেক আমরা সর্বনিম্ন ব্রডব্যান্ড হিসেবে ঘোষণা করবঃ পলক

        সবজির বাজারে লাফিয়ে বাড়লো কাঁচা মরিচের দাম

        ঝুঁকি বিবেচনায় এআই আইন করা হবে

        গুগল ট্রান্সলেটরে মুখের কথা অন্য ভাষায় অনুবাদ করার পদ্ধতি

        বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ তাই দুই মাস পর পর ঋতু পরিবর্তন

        বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ তাই দুই মাস পর পর ঋতু পরিবর্তন

        বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের রহস্যজনক নিষ্ক্রিয়তায় ছাত্রলীগ হলগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে বলে অভিযোগ

        বাংলাদেশে আসতে চলেছেণ তুর্কি সুপারস্টার অভিনেতা বুরাক ঔজচিভিত

        পিরামিড তৈরির রহস্য সমাধানের আশা গবেষকদের

        সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ঋষি সুনাকের

        সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ঋষি সুনাকের

        ছোট ভাইয়ের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় সঙ্গে ছিলেন পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি

        ছোট ভাইয়ের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় সঙ্গে ছিলেন পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি

পদ্মাপাড়ে মহাকর্মযজ্ঞ

পদ্মাপাড়ে মহাকর্মযজ্ঞ

পদ্মা সেতুর স্বপ্ন পূরণের পথে দ্রুত এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। পদ্মাপাড়ে চলছে এক মহাকর্মযজ্ঞ। ২০১৮ সালের মধ্যেই এই সেতু দিয়ে যানবাহন চলবে। সেই লক্ষ্য নিয়ে বিরামহীন কাজ চলছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পদ্মা সেতু এখন আর কোনো অবাস্তব স্বপ্ন নয়, দিবালোকের মতো পরিষ্কার। মহাকর্মযজ্ঞ যেভাবে এগিয়ে চলছে, তাতে নির্ধারিত সময়সীমায় এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।
প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত সার্বিকভাবে প্রকল্পের ১৬ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে । এতে ব্যয় হয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা। আর্থিক অগ্রগতি ৩০ ভাগ। সব ঠিক থাকলে সেতুর ওপর দিয়ে ২০১৮ সালে পদ্মা পার হবে গাড়ি। সেতুর ওপর দিয়ে চলবে ট্রেনও।মোট পাঁচটি প্যাকেজে 'পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প' বাস্তবায়নের কাজ চলছে।পদ্মার দুই পাড় মাওয়া ও জাজিরা পয়েন্টে চলছে হাজার হাজার মানুষের কর্মযজ্ঞ। ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতু নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা (২ দশমিক ৯১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বড় প্রকল্প, যার বাস্তবায়ন কাজ চলছে।এই প্রকল্পের প্রধান পর্যায়ে রয়েছে সড়ক ও রেল যোগাযোগ সংবলিত দোতলা মূল সেতু, নদীশাসন, জাজিরা সংযোগ সড়ক (অ্যাপ্রোচ রোড), মাওয়া সংযোগ সড়ক এবং সার্ভিস এরিয়া-২ নির্মাণকাজ। মূল সেতুর কাজ করছে চীনের মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। নদীশাসনের কাজ করছে চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড। মাওয়া ও জাজিরা সংযোগ সড়কের কাজ যৌথভাবে করছে বাংলাদেশের আবদুল মোনেম লিমিটেড ও মালয়েশিয়ার হাইওয়ে কনস্ট্রাকশন ম্যানেজমেন্ট। সার্ভিস এরিয়া-২ এর নির্মাণকাজ করছে আবদুল মোনেম লিমিটেড।
আরও দুটি পর্যায়ে পুরো কাজটির পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন এবং কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে। সেনাবাহিনীর দায়িত্বে সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এলাকা নির্মাণকাজ তদারকি এবং কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ের দায়িত্বে মূল সেতু ও নদীশাসন কাজ তদারকি।এই সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হলে ঢাকাসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি সড়কপথে যুক্ত হবে দক্ষিণ জনপদের ১৯ জেলা। যা দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতেও নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে, ১ দশমিক ২৩ শতাংশ জিডিপি বাড়বে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।যেভাবে চলছে কর্মযজ্ঞ :গত মঙ্গল ও বুধবার সরেজমিন পদ্মা সেতুর কাজ দেখার জন্য দুই পয়েন্ট মাওয়া ও জাজিরা গিয়ে দেখা যায়, নদীর দুই পাড়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। তৈরি হচ্ছে সংযোগ সড়কের কালভার্ট, সেতু এবং মূল সেতুর টোল প্লাজার পিলার।
আর নির্মাণকাজকে ঘিরে দুই পাড়েই এখন পরিবর্তনের ছোঁয়া। আগের বড় বড় দোকানপাট ও স্থাপনা সরিয়ে বালু আর পাথরের বিশাল স্তূপ। সেই স্তূপ থেকে বালু আর সুরকি যাচ্ছে নির্মাণ এলাকায়। ভারী যন্ত্রপাতির সারি, স্থানে স্থানে নির্মাণ করা হচ্ছে কংক্রিটের স্থাপনাও। বড় বড় বুলডোজার আর এক্সক্যাভেটরের শব্দের মধ্যে দিনরাত চলছে কাজ। মাওয়ায় চলছে পাইল ফ্যাব্রিকেশন প্লান্ট নির্মাণকাজ। পাইলিং এবং মূল সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হলে এই প্লান্ট থেকেই পিলারসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করে নদীতে নিয়ে যাওয়া যাবে। চায়না মেজর ব্রিজের কয়েকশ' প্রকৌশলীর পাশাপাশি শ্রমিকরাও এসেছেন। যাদের জন্য মাওয়াপাড়ে চায়না পল্লী আর জাজিরাপাড়ে সার্ভিস এলাকায় আবাসনের ব্যবস্থাও হচ্ছে। চলছে নদীশাসনের জন্য মাটি পরীক্ষার কাজও। সেতু নির্মাণের ধাপগুলো নিয়ে একটা মাস্টার প্ল্যানও করা হয়েছে। সে অনুযায়ী ধাপে ধাপে কাজ চলবে। এরই মধ্যে তিনটি ড্রেজার, ৩টি ফ্লোটিং ক্রেন, ২টি টাগবোট এবং একটি অ্যাঙ্কর বোট প্রকল্প এলাকায় নিয়ে আসা হয়েছে। তৈরি হচ্ছে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড, ল্যাবরেটরি, ওয়ার্কশেড, লেবারশেড ও জেটি। সেতুর সেন্টার লাইন বরাবর শুরু হয়েছে নেভিগেশন চ্যানেল ড্রেজিং। নির্মাণকাজের সুবিধার জন্য দুই লেনের নতুন বাইপাস সড়ক করে দেওয়া হয়েছে, যা ব্যবহার করে জট ছাড়াই চলে যাচ্ছে গাড়ি।
পদ্মার ওপারে জাজিরা ও শিবচরে চলছে আরও বড় কর্মযজ্ঞ। মূল সেতু যেখানে নামবে সেই নাওডোবা থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শুধুই নির্মাণকাজ। ড্রেজিং পাইপে বালু এনে ফেলা হচ্ছে পুরো এলাকায়। সংযোগ সড়ক, সংযোগ সেতু, কালভার্ট, সার্ভিস এলাকা ও সেনাক্যাম্প নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে পুরোদমে। নিরাপত্তা ও প্রকৌশলে সহযোগিতার জন্য সেনাবাহিনীর পুরো একটি ব্রিগেড মোতায়েন করা হয়েছে পদ্মার দুই পাড়ে।পদ্মা সেতুর মূল যন্ত্রপাতির নির্মাণ চলছে চীন, জার্মানি, সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশে। এর মধ্যে মূল সেতুর ভিত্তির পরীক্ষামূলক পাইল নির্মাণকাজ চলছে চীনে। আড়াই হাজার টন ওজনের বিশাল হ্যামার মেশিন, যেটি দিয়ে পাইলিংয়ের কাজ চলবে সেটি নির্মিত হচ্ছে জার্মানিতে। এর বাইরে আরও সব ভারী যন্ত্রপাতি তৈরি এবং সময় সময় জাহাজে করে দেশে নিয়ে আসা হচ্ছে। সংযোগ সড়কসহ সংশ্লিষ্ট দেশি প্রযুক্তির নির্মাণসামগ্রী তৈরি হচ্ছে এ দেশেই।ফেব্রুয়ারিতে শুরু টেস্ট পাইলিং :পদ্মা সেতুর মূল ভিত্তির পরীক্ষামূলক (টেস্ট পাইলিং) কাজ আগামী ফেব্রুয়ারিতে শুরু হচ্ছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এখন মূল সেতুর পাইলিংয়ের জন্য মাটি পরীক্ষার কাজ চলছে। একই সঙ্গে টেস্ট পাইল ও স্টিল ফ্যাব্রিকেশনের কাজ চলছে চীনের ন্যানটংয়ের ওয়ার্কশপে। টেস্ট পাইল বসানোর কাজ শুরু হবে ফেব্রুয়ারি থেকে।
হংকংয়ের আদলে শহর :কেবল পদ্মা সেতু নির্মাণই নয়, এই নদীকে ঘিরে হংকংয়ের আদলে শহর গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা নিয়েও এগোচ্ছে সরকার। নদীর আশপাশে একটি আন্তর্জাতিক মানের অত্যাধুনিক বিমানবন্দর নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি অলিম্পিক ভিলেজ, একটি কনভেনশন সেন্টার ও দেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রও গড়ে তোলা হবে। সব কাজ শেষ হলে হংকংয়ের মতো মনোরম শোভার এক শহর গড়ে উঠবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।রেলে অগ্রগতি নেই :পদ্মা সেতুর মূল নকশা অনুযায়ী উপরে সড়ক পথের বিভিন্ন যানবাহন এবং নিচে আলাদাভাবে ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা থাকবে। চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের মূল কাঠামো নির্মাণ শেষ হলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের লাইন তাতে যুক্ত হবে। অবশ্য চলমান বিপুল কর্মযজ্ঞের মধ্যে ঢাকা-মাওয়া রেলপথ নির্মাণের কোনো অগ্রগতি এখনও চোখে পড়েনি। সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অবশ্য বলেছেন, রেল মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। তারা কাজ করছে। শিগগির সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সড়ক ও রেল মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক বৈঠক করে সবকিছুই এগিয়ে নেওয়া হবে।
পুনর্বাসিতরাও খুশি :ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য পদ্মার দুই পাড়ে ৭টি 'পুনর্বাসন এলাকা' স্থাপন করে পুনর্বাসন করা হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিববারগুলোকে। এর মধ্যে মাওয়ায় চারটি ও জাজিরা-শিবচরে চারটি পুনর্বাসন এলাকা রয়েছে। এসব পুনর্বাসন এলাকায় এখন পর্যন্ত ২৭শ' প্লট তৈরি করে ২৭শ' পরিবারকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মাওয়াপাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত মুচিপাড়ার বাসিন্দা মুচিদের 'দক্ষিণ মেদিনীমণ্ডল পুনর্বাসন এলাকা-৭' নামের আলাদা পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারপ্রতি আড়াই, পাঁচ এবং সাড়ে সাত শতাংশ_ এই তিন ক্যাটাগরির প্লট বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এর বাইরে অধিগ্রহণ করা জমির বিপরীতে জমির পরিমাণের বাজারমূল্য অনুযায়ী নগদ অর্থও দেওয়া হচ্ছে।ব্যয় বাড়ছে :২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা (২ দশমিক ৯১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করে শুরু হয়েছিল পদ্মা সেতু নির্মাণের আনুষ্ঠানিকতা। তবে এখন এই ব্যয় আরও প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বাড়ছে। সব মিলে তা দাঁড়াতে পারে ২৫ হাজার কোটি টাকায়। বলা হচ্ছে, বিদেশ থেকে আমদানি করা অধিকাংশ নির্মাণসামগ্রীর দামবৃদ্ধি ও ব্যয় বাড়ার কারণ। আগামী মাসে নতুন প্রাক্কলিত ব্যয়ের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য একনেকে পাঠানো হবে। প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, বাস্তবতার নিরিখেই নতুন প্রাক্কলিত ব্যয় ২৫ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াবে।

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত