আপডেট :

        ব্যাটে জয় পেলো বাংলাদেশ

        সম্পূর্ণ বাংলা সাপোর্টের স্মার্টওয়াচ নিয়ে এলো দেশীয় প্রযুক্তি

        ছায়ানটের অন্যতম সদস্য শ্রী অশোক রায় নন্দীর মৃত্যু

        ইসরায়েলে আল জাজিরার কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশর পর অফিসে পুলিশের অভিযান

        ব্রাজিলে ভয়াবহ বন্যায় নিহত ৫৭, ঘরছাড়া ৭০ হাজার মানুষ

        ইসরায়েলে আল-জাজিরা টিভি বন্ধের সিদ্ধান্ত

        মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানে বিক্ষোভ

        ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থীদের ওপর ইসরাইলি সমর্থকদের হামলা

        যুক্তরাষ্ট্রে কিশোরকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে শিক্ষিকা গ্রেপ্তার

        যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতি ‘বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ’ বলে উল্লেখ উত্তর কোরিয়ার

        যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তিন কর্মকর্তার মৃত্যু

        বান্ধবী খুঁজে পেতে বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপন, ব্যাপক সাড়া

        অনুমতি ছাড়া গাছ কাটা বন্ধে রিট

        মানবপাচার মামলায় ৪ দিনের রিমান্ডে মিল্টন সমাদ্দার

        বাংলাদেশ ট্যুর গ্রুপ

        বাংলাদেশ ট্যুর গ্রুপ

        রাশিয়ার সঙ্গে চলমান সংলাপ অব্যাহত রাখতে হবে

        চুক্তি চান না বরং বিরোধী পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইমরান খান

        চুক্তি চান না বরং বিরোধী পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইমরান খান

        এএফআইপি ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

শহীদ মিনারের আদিকথা - মারুফ খান

শহীদ মিনারের আদিকথা - মারুফ খান

আমাদের জাতীয় শহীদ মিনারের স্তম্ভগুলো মা ও সন্তানের প্রতীক। অর্ধবৃত্তাকারে মা তার শহীদ সন্তানদের নিয়ে দন্ডায়মান। অনন্তকাল ধরে সন্তানদের রক্ষা করছেন, যারা তার মর্যাদা রক্ষার জন্য জীবন দিয়েছেন। সেজন্য গৌরবান্বিত মা তাদের দোয়া করছেন। সন্তানদের আত্মত্যাগের মহিমায় মা ঝুঁকে পড়েছেন একটু স্নেহে। আর চারটি সন্তানের মধ্য দিয়ে তিনি তার লক্ষ-কোটি সন্তানকে দেখতে পাচ্ছেন। -এই অর্থকে ধারণ করেই বাংলাদেশের জাতীয় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে আমাদের প্রথম শহীদ মিনারটি দেখতে আজকের শহীদ মিনারটির মতো ছিলনা। টলমলে অশ্রুবিন্দুটির মতো আমদের শহীদ মিনারের আজকের রূপ নিতে সময় লেগেছে অনেক বছর।

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানি শাসকদের ১৪৪ধারা ভঙ্গ করে ছাত্ররা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে বের হয়ে আসে রাজপথে। পুলিশ যখন ছাত্রদের লাঠিপেটা করছিল তখন সাধারণ মানুষও যোগ দেয় ছাত্রদের সাথে। স্লোগান একটাই 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই।' এক পর্যায়ে পুলিশ আন্দোলনকারীদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায়। রাজপথে লুটিয়র পড়েন রফিক, জব্বার, শফিক, বরকত, সালাম-সহ নাম না জানা আরো বেশ কয়েকজন।

শহীদ মিনার এসকল ভাষা শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ। ঢাকা মেডিকাল কলেজের ছাত্ররা ১৯৫২ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি রাতে এই শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ শুরু করেন। কাজ শেষ হয় ২৪শে ফেব্রুয়ারি ভোরবেলায়। এটি অবস্হিত ছিল মেডিকেল ছাত্র হোস্টেলের বারো নম্বর শেডের পূর্বপ্রান্তে কোনাকুনিভাবে হোস্টেলের মধ্যবর্তি রাস্তাটার গা-ঘেঁষে। উদ্দেশ্য যাতে করে বাইরের রাস্তা থেকে সহজেই চোখে পড়ে এবং যে কোন শেড থেকে তাকালেই দেখা যায়। শহীদ মিনারটি ছিল ১০ ফুট উঁচু ও ৬ ফুট চওড়া। মিনার তৈরীর তদারকিতে ছিলেন জিএস শরফুদ্দিন (ইন্ঞ্জিনিয়ার শরফুদ্দিন নামে পরিচিত), ডিজাইন করেছিলেন বদরুল আলম ও সাঈদ হায়দার। এদের সঙ্গে সহযোগিতা করেন দু'জন রাজমিস্ত্রি। মেডিকেল কলেজের সম্প্রসারণের জন্য এনে রাখা ইট, বালি এবং পুরান ঢাকার পিয়ারু সর্দারের গুদাম থেকে সিমেন্ট আনা হয়। ভোর হওয়ার পর একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল মিনারটি। ২৪শে ফেব্রুয়ারি শহীদ শফিউরের পিতা অনানুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারটি উদ্ভোধন করেন। এর ঠিক দু'দিন পর পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে প্রথম শহীদ মিনারটি ভেঙে ফেলে।

১৯৫৬ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি পূর্ববঙ্গ সরকারের তৎকালীন মূখ্যমন্ত্রী আবু হোসেন সরকার, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং ভাষা শহীদ বরকতের মা হাসনা বেগম দ্বিতীয়বার শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্হাপন করেন। সে সময়ই ২১শে ফেব্রুয়ারি তারিখটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ দিবস ও সরকারি ছুটির দিন হিসাবে ঘোষণা করা হয়। এরপর ১৯৫৭ সালের নভেম্বর মাসে শিল্পী হামিদুর রহমানের পরিকল্পনা ও নকশা অনুযায়ী মেডিকেল হোস্টেল প্রাঙ্গণের একাংশে শহীদ মিনার তৈরীর কাজ শুরু হয়। হামিদুর রহমানের সহকর্মী হিসেবে ছিলেন ভাস্কর নভেরা আহমদ। কিন্তু ১৯৫৮ সালের অক্টোবরে সামরিক আইন জারির পর বন্ধ হয়ে যায় শহীদ মিনার তৈরীর কাজ। পরবর্তীতে ১৯৬৩ সালে মূল নকশায় কিছুটা পরিবর্তন এনে দ্রুত শহীদ মিনারের কাজ শেষ করা হয়। এ মিনার উদ্বোধন করেছিলেন ভাষা শহীদ বরকতের মা হাসনা বেগম। স্থপতিদের পরিকল্পনা অনুসারে পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি শহীদ মিনার। শিল্পীর পরিকল্পনায় মায়ের দৃষ্টির প্রতীক হিসেবে চোখের নকশা ছিল। শ্বেতমর্মরে নির্মিত সমগ্র মিনারটিতে একটি স্বর্গীয় পবিত্রতা ফুটে উঠবে। স্তম্ভগুলোর পাদদেশে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের বিশেষ ব্যবস্থা এবং দুই পাশের বেষ্টনীতে শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবিদের অবিস্মরণীয় বাণী লৌহলিপিতে উৎকীর্ণ হবে। মিনারের প্রবেশপথে থাকবে দুটি ভাস্কর্য এবং দুটি সিঁড়িঘরে ছোট পদ্মপুকুর। ভাস্কর্য দুটি থেকে অবিরাম পানি প্রবাহিত হবে। মূল পরিকল্পনা অনুসারে শহীদ মিনারে ঘড়িঘর, পাঠাগার, ভাস্কর্য, ভূগর্ভে জাদুঘর এবং মিনারের চারদিকে প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃজন মিলনায়তন থাকার কথা। এক কথায়, এটি হওয়ার কথা সাংস্কৃতিক আবহের দর্শনীয় তীর্থস্থান। কিন্তু আজ এত বছর পরেও সেই পরিকল্পনা পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি।

যদিও কালের পরিক্রমায়, এ সংক্ষিপ্ত, খন্ডিত শহীদ মিনারই একুশের চেতনার প্রতীকরূপে জনমানসে পরিচিত হয়ে ওঠে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানিরা শহীদ মিনারটি আবারও ভেঙে দেয়। ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে শহীদ মিনার নতুন করে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে এবারও মূল নকশা পরিহার করে ১৯৬৩ সালের সংক্ষিপ্ত নকশার ভিত্তিতেই দ্রুত কাজ শেষ করা হয়। ১৯৭৬ সালে নতুন নকশা অনুমোদিত হলেও তা আর বাস্তবায়িত হয়নি। এরপর ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে মিনার চত্তরের কিছুটা বিস্তার ও সংস্কার করিয়ে শহীদ মিনারটিকে বর্তমানকালের অবস্হায় নিয়ে আসা হয়।

শহীদ মিনার আমাদের গর্বের। আমাদের সবার। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, বাংলা ভাষা ও বাংলা সংস্কৃতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী এই শহীদ মিনাটিকে ঘিরে ইদানিং একটি কুচক্রী মহল যেভাবে দলীয়করণ, দখলবাজি, অপরাজনীতি করার চেষ্টা করছে, এতে নির্বিকার না থেকে বরং এসকল অপশক্তিকে নির্মূলে সরকার কঠোর ও মনযোগী হবেন, বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ এ প্রত্যাশাই করে।

লেখকঃ প্রবাসী সংগঠক ও সংস্কৃতি কর্মী।

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত