পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় আকস্মিক বন্যায় ৫ জনের মৃত্যু, নিখোঁজদের সন্ধানে উদ্ধার অভিযান চলছে
বাড়তি ভ্যাটের চাপে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা, অনলাইন ব্যবসায় ধস
নতুন প্রজন্মের সম্ভাবনাময় খাত ই-কমার্স। যার মাধ্যমে ব্যবসা করা যেমন সহজ হচ্ছে, তেমনি কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্তও উন্মোচিত হচ্ছে। এই খাত আরও গতিশীল হোক-এমন আশায় উদ্যোক্তারা প্রত্যাশা করেছিলেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ইন্টারনেট খরচ কমবে। তবে বাজেট প্রস্তাবে সেই প্রত্যাশার পরিবর্তে এসেছে এক নতুন চাপ।
অনলাইনে পণ্য বিক্রির কমিশনের ওপর ভ্যাট তিন গুণ বাড়িয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তবে এই প্রস্তাবে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগে পড়েছেন ই-কমার্স খাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। আগে যেখানে পণ্য বিক্রি করে ১০০ টাকা আয়ের ওপর ৫ টাকা ভ্যাট দিতে হতো, এখন দিতে হবে ১৫ টাকা। বাড়তি এই চাপ অনেকেই পণ্যের দামে প্রতিফলিত করবেন, যার বোঝা শেষ পর্যন্ত গিয়ে পড়বে সাধারণ ক্রেতাদের ওপর।
ই-কমার্স উদ্যোক্তারা বলছেন, যেসব দেশ ই-কমার্সে এগিয়েছে, তারা মাথাপিছু ৭০ থেকে ২০০ ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছে। অথচ বাংলাদেশে তা ৩ ডলারেরও কম। এখন নতুন করে করের বোঝা চাপানো হয়েছে। তাদের মতে, ই-কমার্স শহরের অবকাঠামো ব্যবস্থাপনার ওপর ২০ শতাংশ পর্যন্ত চাপ কমাতে পারে। চীন ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশ যখন এই খাতকে কাজে লাগাচ্ছে, তখন বাংলাদেশ যেন উলটো পথে হাঁটছে।
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) তথ্য মতে, বাংলাদেশে অনলাইন ব্যবসার বাজার এখন প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এই খাতে ছোট-বড় মিলে প্রায় ৫ লাখ উদ্যোক্তা যুক্ত। কিন্তু বেশির ভাগেরই আলাদা দোকান নেই, তাই অনলাইনই তাদের একমাত্র ভরসা। ফলে ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত তাদের ব্যবসা কঠিন করে তুলবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপ বলছে, দেশেএখনো অর্ধেকের বেশি পরিবার ইন্টারনেট ব্যবহার করছে না। গত বছরের শেষে মাত্র ৫২ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবার ইন্টারনেট ব্যবহার করেছে। অথচ ই-কমার্স খাতের বিকাশের জন্য সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী ইন্টারনেট জরুরি।
ই-কমার্স উদ্যোক্তারা বলছেন, ভ্যাট বাড়লে এই খাতে বিনিয়োগও কমে যেতে পারে। ই-কমার্সের মাধ্যমে অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিকে কাঠামোবদ্ধ করা সম্ভব। তবে ভ্যাট বাড়লে বিনিয়োগ কমবে, ফলে গ্রাহকদের জন্য বাড়তি সুবিধা ও মূল্যছাড় দেওয়ার সুযোগও সীমিত হয়ে পড়বে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই খাত এখনো গড়ে উঠছে, এখনই বাড়তি কর আরোপ না করে বরং আরও কয়েক বছর সময় দিলে তা আরও বিস্তৃত হতো। তাদের মতে, কর্মসংস্থানের দিক থেকেও এই খাত গত কয়েক বছরে দ্বিগুণ অবদান রেখেছে। এই খাতে অধিকাংশ উদ্যোক্তাই প্রান্তিক পর্যায়ের। অতিরিক্ত ভ্যাট তাদের বিপাকে ফেলবে। সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর যে লক্ষ্য, তাতে বরং উলটো প্রভাব পড়তে পারে।
ফুড ডেলিভারির একটি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো বিক্রেতাদের কাছ থেকে যে কমিশন নেয়, তার ওপর ভ্যাট বাড়ালে তাদের সেবার খরচও বাড়বে। তখন এই বাড়তি খরচ সরাসরি পণ্যের দামে পড়ে যাবে। ফলে অনলাইন কেনাকাটার প্রতি ভোক্তাদের আগ্রহ কমে যেতে পারে। এতে পুরো ই-কমার্স খাতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যখন দেশের অর্ধেক জনগণ এখনো ইন্টারনেটের আওতায় আসেনি, তখন ই-কমার্সের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি না করে বরং খাতটিকে আরও সহায়তা দেওয়ার সময় ছিল এখনই। তবেই এই খাত দেশের অর্থনীতিতে আরও বড় অবদান রাখতে পারবে।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন