৮ জুলাই ঢাকায় আসছেন তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পপ্রধান হালুক গরগুন
তুরস্কে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে নিহত বেড়ে ২৬৫
তুরস্কের সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানের চেষ্টায় অন্তত ১৯৪ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ১০৪ জন চক্রান্তকারী, ৪১ জন পুলিশ ও ৪৭ জন সাধারণ মানুষ ও দুজন সরকার পক্ষের সেনা। আহত হয়েছেন এক হাজার ১৫৪ জন মানুষ।
বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, সেনাবাহিনীর একটি অংশের এই অভ্যুত্থান চেষ্টা 'ভণ্ডুল' হয়ে যাওয়ার পর সেনাপ্রধান হুলুসি আকারকে 'নিরাপদ স্থানে' সরিয়ে নিয়েছেন নিরাপত্তাকর্মীরা। ভারপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান করা হয়েছে জেনারেল উমিত দুনদারকে।
এপি জানায়, দায়িত্ব পাওয়ার পর টেলিভিশন ভাষণে দুনদার বলেন, “সরকার উৎখাতের চেষ্টার চক্রান্তের ঘটনায় ২৬৫ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ১০৪ জন চক্রান্তকারী, ৪১ জন পুলিশ ও ৪৭ জন সাধারণ মানুষ ও দুইজন সরকার পক্ষের সেনা।”
'সেনা অভ্যুত্থান চেষ্টা ব্যর্থ' মন্তব্য করে উমিত বলেন, “অনেক সেনা সদস্যকে 'অজানা স্থানে' নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”
বিবিসি বলছে, তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা ও ইস্তানবুলে শুক্রবার রাতে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর একাংশ অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালায়। এরপরই সরকার উৎখাতের পক্ষে-বিপক্ষের লোকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
শনিবার সকালেও আঙ্কারা ও ইস্তাম্বুলের পুলিশ সদর দফতর এলাকাতে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল।
অবকাশ যাপনের মধ্যেই সেনা অভ্যুত্থান চেষ্টার খবর পান প্রেসিডেন্ট এরদোগান। এর পরপরই তিনি ইস্তাম্বুল পৌঁছে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে 'পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে' বলে জানান।
দেশে 'ব্যর্থ' এক সেনা অভ্যুত্থান চেষ্টার পর প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান শনিবার ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে যখন সাংবাদিকদের সামনে কথা বলছিলেন, তখন তার চারপাশ ঘিরে ছিলো উল্লসিত কর্মী-সমর্থক।
সাংবাদিক সম্মেলনে এরদোগান অভ্যুত্থানকে 'দেশদ্রোহিতা' আখ্যা দিয়ে বলেন, “যারা এর পেছনে ছিলেন তাদের বড় মূল্য দিতে হবে।”
তিনি বলেন, “অভ্যুত্থানে জড়িত কয়েকজন অফিসারকে ইতোমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে, আমি এখন সেনাবাহিনীতে শুদ্ধি অভিযান চালাব।”
প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের পর অন্তত ২০০ সেনা দেশটির ইস্তাম্বুলের বসফরাস সেতুতে আত্মসমর্পণ করেন। আটক করা হয় দেড় হাজারের বেশি সেনা সদস্য।
এর আগে এরদোগানের হাজার হাজার সমর্থকের বিক্ষোভের মুখে সেনা বাহিনীর বিদ্রোহী অংশ ইস্তাম্বুল বিমান বন্দর থেকে সড়ে যেতে বাধ্য হয়।
সামরিক অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করতে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের ডাকে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার সমর্থক বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করছেন।
দেশের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম বলেছেন, পরিস্থিতি এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং রাজধানী আঙ্কারার আকাশে বিমান উড্ডয়ন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট এরদোগানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে তুরস্কের ঘনিষ্ঠ মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক বিবৃতিতে সকল পক্ষকে দেশের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে সমর্থন করার জন্য এবং রক্তপাত এড়ানোর আহ্বান জানান।
সেনা অভ্যুত্থান চেষ্টার সময় আঙ্কারায় সরকার সমর্থকরা রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যম টিআরটি-র নিয়ন্ত্রণ অভ্যুত্থানকারীদের হাত থেকে দখল করে নেয়।
পরে প্রেসিডেন্ট এরদোগান সমর্থকরা ইস্তাম্বুলের আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ভেতরে অবস্থান নেন।
বিভিন্ন মসজিদ থেকে ফজরের নামাজের কয়েক ঘণ্টা আগেই আযান দেয়া হয় এবং মানুষকে ‘গণতন্ত্র রক্ষার’ জন্য রাস্তায় নামার আহ্বান জানানো হয়।
তবে এর আগে একটি টেলিভিশন ঘোষণায় তুরস্কের সেনাবাহিনীর একটি অংশ দাবি করে, তারা দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়, এখন থেকে একটি 'পিস কাউন্সিল' দেশ পরিচালনা করবে। দেশে কারফিউ এবং মার্শাল ল' জারি করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এটা পরিষ্কার নয় যে, এই ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত।
এই ঘটনাকে ক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠীর প্রচেষ্টা বলে বর্ণনা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট এরদোগান।
তুরস্কের একটি টেলিভিশন বলছে, রাজধানী আঙ্কারায় অভ্যুত্থান চেষ্টার পক্ষের একটি হেলিকপ্টার গুলি করে ভূপাতিত করে সরকারি যুদ্ধবিমান।
এর আগে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইয়ালদ্রিম জানিয়েছিলেন, তুরস্কে সেনাবাহিনীর একটি অংশ বেআইনি অভিযান শুরু করেছে।
তিনি জানান, কোনো অনুমতি ছাড়াই সেনাবাহিনীর সদস্যরা ওই অভিযান শুরু করেছে। তবে এটা কোনো অভ্যুত্থান নয়। তুরস্কের সরকারে কোনো পরিবর্তন হয়নি বলেও তিনি জানান।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, সবকিছু দেখে এটা একটি পরিকল্পিত অভ্যুত্থান বলেই মনে হচ্ছে। কারণ তারা সব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান নিয়েছে। খুব সহজে এর শেষ হবে বলে মনে হচ্ছে না।
এনটিভিকে টেলিফোনে ইয়ালদ্রিম বলছেন, “কোনো একটি চেষ্টার সম্ভাবনার বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। তবে এ ধরণের কোন চেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না।”
এলএবাংলাটাইমস/আই/এলআরটি
শেয়ার করুন