৮ জুলাই ঢাকায় আসছেন তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পপ্রধান হালুক গরগুন
তুরস্কের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পেছনে কারা ছিল?
তুরস্কে এর আগেও একাধিক সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে, কিন্তু ১৫ জুলাইয়ের ব্যর্থ অভ্যুত্থানটি নানা কারণে নজিরবিহীন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ রকম একটা কিছু যে হতে পারে―তা কেউই ভাবেননি। কিন্তু কারা ছিল এর পেছনে? খবর : বিবিসি বাংলা।
অনেকে বলেন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তায়েপ এরদোয়ানের অনুদার নীতির কারণে দেশটির সামরিক বাহিনীর মাঝারি পর্যায়ের অফিসারদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। কিন্তু এর কারণে যে একটা অভ্যুত্থান ঘটতে পারে, এমনটা তারাও ভাবেননি।
তুর্কি সাংবাদিক এজগি বাসারান বিবিসির জন্য লেখা তার এক বিশ্লেষণে বলছেন, ১৫ জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের পেছনে কারা ছিল তা নিয়ে বেশ কয়েকটি তত্ত্ব বা ‘থিওরি’ বিভিন্ন মহলে ঘুরছে।
একটি হলো : প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তার নিজের হাতে আরও বেশি ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করতে এই ‘সাজানো’ ঘটনাটি ঘটিয়েছেন। কিন্তু এই তত্ত্বে যাই বলা হোক সাধারণ বুদ্ধিতেই বোঝা যায় যে, ঘটনা যত দূর গড়িয়েছিল-তা ‘সাজানো’ হতে পারে না।
আরেকটি তত্ত্ব অনুযায়ী : তুরস্কের সামরিক বাহিনীর মধ্যে দুটি গোষ্ঠী আছে। একদল হচ্ছেন যারা কামাল আতাতুর্কপন্থী-অর্থাৎ আধুনিকতাবাদী এবং ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাবসম্পন্ন। আরেকটি গোষ্ঠী হচ্ছে একজন প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা-বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত-ফেতুল্লাহ গুলেনের অনুসারী। এই গুলেন একসময় মি. এরদোয়ানের মিত্র ছিলেন, তবে পরে তাদের মধ্যে শত্রুতা এবং ক্ষমতার দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। বলা হয়, তুরস্কের রাষ্ট্রীয় স্তরের গভীরে সর্বত্র গুলেনের সমর্থকরা বসে আছে-কিন্তু তাদের চিহ্নিত করা খুবই শক্ত।
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এর আগে তার ভাষায় একটি ‘সন্ত্রাসবাদী সমান্তরাল রাষ্ট্রের হাত থেকে’ দেশকে মুক্ত করার কথা বলেছেন এবং বিভিন্ন সময় এদের ‘খুঁজে বের করা ও গ্রেফতারের’ অভিযান চালিয়েছেন।
এই দ্বিতীয় তত্ত্বটির প্রবক্তারা বলছেন, কামাল আতাতুর্কপন্থী অফিসাররা গুলেনপন্থীদের কৌশলে নিজেদের দলে টেনে নিয়ে এই অভ্যুত্থানটি ঘটিয়েছে। তাদের হিসাবটা ছিল, যদি এই অভ্যুত্থান যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে এরদোয়ানের পাল্টা ব্যবস্থার শিকার হবে গুলেনপন্থীরাই।
তৃতীয় আরেকটি তত্ত্ব এসেছে পুলিশের বিভিন্ন সূত্র থেকে। তাদের বক্তব্য―এরদোয়ানের একে পার্টি সরকার ১৬ জুলাই তারিখেই গুলেন-সমর্থক সামরিক কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করার পরিকল্পনা করেছিল-যা টের পেয়ে অভ্যুত্থানকারীরা নির্ধারিত সময়ের আগেই বিদ্রোহ ঘটিয়ে ফেলে। এটাই ছিল গুলেন সমর্থকদের ক্ষমতা দখলের একটা শেষ চেষ্টা।
এজগি বাসারান বলছেন, এসব তত্বে কিছু তথ্য সঠিক হলেও অনেক অসঙ্গতিও আছে।
প্রথমত, যেভাবে এই অভ্যুত্থানকারীরা সহিংসতা ঘটিয়েছে-তা গুলেন আন্দোলনের কর্মপদ্ধতির সাথে মেলে না।
দ্বিতীয়ত, অভ্যুত্থানকারীদের যে বিবৃতিটি টিভিতে পাঠ করা হয়েছিল-তার সাথে কামাল আতাতুর্কের বিখ্যাত বক্তৃতার ভাষার খুব মিল আছে। তবে গুলেনপন্থীরা এটাকে তাদের পরিচয় গোপন রাখার জন্যও ব্যবহার করে থাকতে পারে-এমন সম্ভাবনাও আছে।
একেপির সরকার অবশ্য বলছে, একজন সামরিক কৌঁসুলি এ অভ্যুত্থানের পেছনে ছিলেন, তার সাথে ছিলেন আরও ৪৬ জন অফিসার। এদের নাম গতকাল গভীর রাতে প্রকাশ করা হয়েছে।
তুরস্কে এর আগে ১৯৬০, ১৯৭১, ১৯৮০ এবং ১৯৯৭ সালে চারটি অভ্যুত্থান হয়েছে।
এলএবাংলাটাইমস/আই/এলআরটি
শেয়ার করুন