৮ জুলাই ঢাকায় আসছেন তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পপ্রধান হালুক গরগুন
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশীদের বহিষ্কারের চাঞ্চল্যকর তথ্য
৩০ লক্ষাধিক টাকা দালালকে দিয়ে ডজনেরও অধিক দেশ পাড়ি দেয়ার পর মেক্সিকোর দুর্গম সীমান্ত পথে স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় পাড়ি দিয়েও স্বপ্ন পূরণের পথ সুগম হলো না। অধিকন্তু বছরাধিককাল ডিটেনশন সেন্টারে কাটিয়ে হাত-কড়া পরাবস্থায় বাংলাদেশে ফিরতে হলো রিক্ত হাতে। গত ৪ মাসের ব্যবধানে এমন পরিস্থিতির শিকার হলেন দুই শতাধিক বাংলাদেশী। এরা সকলেই বিএনপির কর্মী/সমর্থক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন। কিন্তু কেউই কোন ডক্যুমেন্ট দেখাতে সক্ষম হননি যে, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের রোষানলে পড়ে তারা জীবন বাঁচানোর জন্যে দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছেন এবং সেই দেশে পাঠিয়ে দিলে তারা মহাবপিদে পড়বেন।
যুক্তরাষ্ট্র হোমল্যান্ড সিকিউরিটি তথা ইমিগ্রেশন দপ্তর এসব যুবকের বক্তব্যকে আমলে নেয়নি বলে সংশ্লিষ্টদের এটর্নীরা এনআরবি নিউজকে জানান। গত এপ্রিল মাসে শতাধিক বাংলাদেশীকে বিশেষ বিমানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেটি ছিল ইমিগ্রেশন দপ্তরের চ্যালেঞ্জ। তারাও ভেতরে ভেতরে আশংকা করেছিলেন যে, এরা নিজ দেশে ফেরার পর হয়তো সরকারের রোষানলে পড়বেন। ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস এবং কয়েকটি এনজিও’র মাধ্যমে এসব বাংলাদেশী যুবকের অবস্থানের উপর গভীর পর্যবেক্ষণ রাখা হয়। কোন ধরনের সমস্যায় তারা পড়েননি। অধিকন্তু এটি নিশ্চিত হয়েছেন যে, এরা কেউই বিএনপির লোক নন। সুন্দর ভবিষ্যতের সন্ধানে পৈত্রিক ভিটেমাটি বিক্রি করে দালাল ধরে তারা যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেছিলেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাসের লক্ষ্যে মিথ্যা ঘটনার অবতারণা করেন। এ কারণে একইভাবে মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় ইমিগ্রেশন-এজেন্টদের হাতে ধরা পড়া অন্যদের রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার ব্যাপারে সন্দিহান হয়ে পড়েছেন ইমিগ্রেশন জজরা। তারই অংশ হিসেবে গত ২৫ জুলাই আরো ৪০ জনকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বিশেষ বিমানে। টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা, আলাবামা, লুইজিয়ানা, আরিজোনা, পেনসিলভেনিয়া প্রভৃতি স্থানের ডিটেনশন সেন্টারে আরো ৭ শতাধিক বাংলাদেশী একই প্রক্রিয়ায় রয়েছেন বলে সরকারী সূত্রে জানা গেছে।
‘বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠনের সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত করার পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির কর্মী/সমর্থক হিসেবে যারা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করছেন, তাদের সে আবেদন নাকচ করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে’ বলে কোন কোন মানবাধিকার সংস্থার অভিযোগ প্রসঙ্গে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা গত সপ্তাহে এনআরবি নিউজকে বলেন, ‘প্রচলিত রীতি অনুযায়ী সকলকে সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু ইমিগ্রেশনের সুবিধা পাবার ক্ষেত্রে কেউই মাননীয় আদালতকে সন্তুষ্ট করতে পারেননি। এজন্যেই আরো ৪০ বাংলাদেশীকে গত ২৫ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’ ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এর মুখপাত্র এনআরবি নিউজকে আরো জানিয়েছেন, ‘২০১৪ সালের নভেম্বরে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রী জন এ্যাশের সার্কুলার অনুযায়ী এ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। কারণ, তাদের বহিষ্কারের সকল প্রক্রিয়া আইন অনুযায়ী জারি হয়েছিল। তারা সকলেই ছিলেন বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে।’
বহিষ্কারের সুনির্দিষ্ট তথ্য জানতে চাইলে এনআরবি নিউজকে আইস আরো বলেছে, ‘কেন তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে সে ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র সরকার কখনোই কোন কমেন্ট করে না, তবে বহিষ্কার না করার জন্যে যদি কোন উপায় থেকে থাকে, তার সুযোগ পুরোপুরি সংশ্লিষ্টরা পেয়ে থাকেন। সকলকেই যথেষ্ঠ সুযোগ দেয়া হয় যাতে তারা এহেন প্রক্রিয়া থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন।’
আইস বলেছে, ‘বহিষ্কারের চূড়ান্ত নির্দেশ জারির আগে একজন ইমিগ্রেশন জজের এজলাসে পরিপূর্ণ এবং যথাযথ শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেকের এসাইলাম প্রার্থনার গুরুত্ব বিবেচনা করে মাননীয় জজ সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, তারা কোন ধরনের সুযোগ পাবার যোগ্য নন। এজন্যেই তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান আইন অনুযায়ীই আইস তাদেরকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।’
উল্লেখ্য, এর আগে আরো ১৬৫ জনকে একইভাবে বিশেষ ফ্লাইটে বাংলাদেশ পাঠিয়ে দেয়া হয়। আরো উল্লেখ্য, এরা সকলেই বিপুল অর্থ দালালকে দিয়ে বিভিন্ন দেশ ঘুরে মেক্সিকো হয়ে দুর্গম পথে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় গ্রেফতার হন। সাথে সাথে তারা নিজেদের বিএনপির কর্মী/সমর্থক দাবি করে এসাইলাম চান। এসাইলামের প্রাথমিক শুনানীতে কারোরই বক্তব্য গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় সকলকে ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো হয়। বছরাধিককাল ডিটেনশন সেন্টারে অবস্থান করে অতীষ্ঠ হয়ে তারা অনশন শুরু করেছিলেন। অনশনরতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে প্যারলে মুক্তি দেয়া হলেও অন্যদেরকে টেক্সাস থেকে ফ্লোরিডা, আলাবামা, লুইজিয়ানা, ক্যালিফোর্নিয়া, আরিজোনা, পেনসিলভেনিয়াসহ বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে নেয়া হয়। এখনও ৭ শতাধিক বাংলাদেশী বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে রয়েছেন। তারা সকলেই বিএনপির কর্মী হিসেবে এসাইলাম চেয়েছেন বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে।
স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট সূত্রে এনআরবি নিউজ জানতে পেরেছে যে, বাংলাদেশে তাদের জীবন বিপন্ন কিংবা তারা বিএনপির সক্রিয় কর্মী-এমন কোন নজির খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি মাননীয় জজের নির্দেশ অনুযায়ী, মামলা-মোকদ্দমা কিংবা অন্য কোন আলামতের কপিও সরবরাহে সক্ষম হননি এসব বাংলাদেশীরা।
স্টেট ডিপার্টমেন্ট সূত্রে আরো জানা গেছে, ভিসা নিয়ে বিভিন্ন প্রোগ্রাম/এসাইনমেন্টে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর বেশ কিছু সাংবাদিক এসাইলাম চেয়েছেন। এসব আবেদনও আগের মত গুরুত্ব পাচ্ছে না ঐ একইকারণে। অর্থাৎ প্রকৃত অর্থে যারা বাংলাদেশ থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন, তাদের আবেদনও এখন সন্দেহের তালিকায়। মিডিয়া কর্মী হিসেবে এসাইলাম প্রার্থনাকারীদের মধ্যে কেউ কেউ নিউইয়র্কে মানবাধিকার সংস্থা কিংবা মিডিয়ার সাথে কাজ করছেন। এ সুবাদে তারা এমন কিছু ঘটনার অবতারণা করছেন, যাতে এসাইলাম সহজ হয়-এ তথ্য জানান ইমিগ্রেশন এটর্নীরা। সাম্প্রতিক সময়ে এমন কিছু সংবাদও সংশ্লিষ্টরা তৈরী করে, তার অনুবাদ ইমিগ্রেশন কোর্টে দিয়েছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এটর্নীরা জানান। বাংলাদেশীদের রাজনৈতিক প্রার্থনার আবেদন প্রসেসকারী কয়েকজন নাম গোপন রাখার শর্তে এনআরবি নিউজকে ৫ আগস্ট জানিয়েছেন, ‘দালাল ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবতরণের পর যারা মিথ্যা বর্ণনা দিয়ে এসাইলাম তথা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করছেন, তারা কখনোই ইমিগ্রেশন জজকে সন্তুষ্ট করতে পারেন না। এহেন প্রবণতা অব্যাহত থাকলে, প্রকৃত অর্থেই যারা হুমকির কারণে দেশ ছাড়ছেন বা ছাড়বেন, তাদের কথাও জজরা বিশ্বাস করবেন না।’
নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র এনআরবি নিউজকে জানায় যে, ‘অতি সম্প্রতি ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য মেন্দি সাফাদির সাথে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বৈঠকের অবান্তর যে সংবাদ রটনা করা হয়, তার নেপথ্যেও ৩ বাংলাদেশীর এসাইলাম আবেদনের প্রক্রিয়া কাজ করেছে। বানোয়াট ঐ সংবাদ রটনার পর বাংলাদেশে সৃষ্ট প্রতিক্রিয়াকে ঐ ৩ বাংলাদেশী তাদের এসাইলাম প্রার্থনার ভিত্তি হিসেবে দাঁড় করাতে চাচ্ছেন।’ সূত্রটি জানায়, এদের আবেদন ইতিপূর্বে নাকচ হয়ে যাওয়ায় তারা পুনরায় গ্রাউন্ড তৈরীর জন্যে মরিয়া হয়ে উঠেছেন যে, বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিলে তাদেরকে ভয়ংকর পরিস্থিতির ভিকটিম হতে হবে।
এলএবাংলাটাইমস/আই/এলআরটি
শেয়ার করুন