৮ জুলাই ঢাকায় আসছেন তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পপ্রধান হালুক গরগুন
রিজার্ভ চুরির ১১৯ কোটি টাকা ফেরতের নির্দেশ ফিলিপাইনের কোর্টের
বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া রিজার্ভের উদ্ধার হওয়া ৪৬ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার এবং ৪৮ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার পেসো বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দিতে আদেশ জারি করেছে ফিলিপাইনের রিজিওনাল ট্রায়াল কোর্ট। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১১৯ কোটি টাকা।
রাজধানীর মতিঝিলে সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে আদালতের আদেশের বিষয়টি জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) ও সহকারী মুখপাত্র এ এফ এম মোকাম্মেল হক।
মোকাম্মেল বলেন, ‘ফিলিপাইনের রিজিওনাল ট্রায়াল কোর্ট বাজেয়াপ্ত করা ও ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রক্ষিত ৪৬ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার ও ৪৮ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার পেসো বাংলাদেশের অনুকূলে অবমুক্ত করার আদেশ জারি করেছেন। বর্তমানে এ অর্থ ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রয়েছে। শিগগিরই আমরা এ অর্থ ফেরত পাব। যখন অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে, সেই সময়ের বিদ্যমান ডলার ও টাকার বিনিময় হারে আমরা অর্থ পাব। আমরা হিসাব করে দেখেছি এর পরিমাণ হবে প্রায় ১ কোটি ৫২ লাখ ৫০ হাজার ডলার।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সহকারী মুখপাত্র জানান, বাংলাদেশের অর্থ ফেরত পেতে ফিলিপাইন সরকার বনাম কিম অং-এর মামলায় বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে ফিলিপাইনের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস।
রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া বাকি অর্থ আইনি প্রক্রিয়ায় উদ্ধারের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে জানিয়ে মোকাম্মেল বলেন, ‘ফিলিপাইন সরকার ও ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক ও ফিলিপাইনে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে। আমরা অচিরেই সম্পূর্ণ চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধার করতে পারব।’
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানানো হয়, আদালত যে অর্থ বাংলাদেশকে ফেরত দিতে আদেশ জারি করেছে, ওই অর্থ ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত আছে। নগদে ওই অর্থ জমা আছে ডলার ও পেসোতে। পেসোকে যদি ডলারে কনভার্ট করা হয়, তাহলে পেসো ও ডলার মিলিয়ে অর্থের মোট পরিমাণ হবে প্রায় ১ কোটি ৫২ লাখ ৫০ হাজার ডলার। এটিকে বর্তমান বিনিময় হারে কনভার্ট করলেই টাকার পরিমাণ পাওয়া যাবে।
কবে নাগাদ চুরির যাওয়া অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের উত্তরে জানানো হয়, কোর্ট অর্ডার অফিশিয়ালি আবেদনকারীর (ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক) কাছে যাবে। এরপর ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা থাকা অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে চলে আসবে। এটি কীভাবে আসবে তা দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকই ঠিক করবে।
চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি হ্যাকিং-এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক পরিচালিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ লেনদেনকারী হিসাব থেকে ৭০টি ভুয়া পেমেন্ট ইনস্ট্রাকশন (পিআই)-এর মাধ্যমে ১৯২ কোটি ৬০ লাখ ডলার অবৈধভাবে স্থানান্তরের প্রচেষ্টা চালানো হয়।
এর মধ্যে ৪টি পিআই-এর বিপরীতে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইনের একটি ব্যাংকের চারজন গ্রাহকের হিসাবে পাঠানো হয়। ফিলিপাইনে পাঠানো ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার রিজেল কমার্শিয়াল ব্যাংক কর্পোরেশন (আরসিবিসি)-এর ৪টি হিসাবে জমা হয় এবং সমপরিমাণ অর্থ ব্যাংকের একই শাখায় পরিচালিত অপর একজন গ্রাহকের হিসাবে জমা হয়। যা পরবর্তীতে একটি মানি রেমিটেন্স কোম্পানি হয়ে ফিলিপাইনে পরিচালিত ক্যাসিনোতে চলে যায়। পরবর্তীতে তা একজন ফিলিপিনো-চীনা ব্যবসায়ী তুলে নেন। এই ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার আরসিবিসির জুপিটার স্ট্রিট, মাকাতি সিটি শাখায় পরিচালিত ভুয়া সুবিধাভোগীদের হিসাবে স্থানান্তর হয়।
এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতা চাওয়া হয়। ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের বাণিজ্যিক ব্যাংক আরসিবিসির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তের ভার তাদের অ্যান্টি-মানিলন্ডারিং কাউন্সিল (এএমএলসি)-এর ওপর অর্পণ করে।
এএমএলসি আনুষ্ঠানিক তদন্তের জন্য গত ২৯ ফেব্রুয়ারি আদালতে আবেদন করে এবং ফিলিপাইনের আদালত গত ১ মার্চ ওই বার্তাগুলোর মাধ্যমে পাঠানো অর্থের চূড়ান্ত সুবিধাভোগীদের হিসাবগুলো আরসিবিসির সংশ্লিষ্ট শাখাসহ তিনটি ব্যাংকের সম্পৃক্ত হিসাবগুলো স্থগিত করাসহ (ফ্রিজ) আনুষ্ঠানিক তদন্তের নির্দেশ জারি করে।
এরপর ফিলিপিনো-চীনা ব্যবসায়ী কিম অং ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার ফেরত দেয়। এই ব্যবসায়ীর ফেরত দেওয়া ওই অর্থ বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দিতে এন্টি-মানিলন্ডারিং কাউন্সিল ও কিম অং আদালতে একটি যৌথ প্রস্তাব (জয়েন্ট মোশন) দাখিল করে এবং আদালত থেকে গত ১ জুলাই আংশিক বাজেয়াপ্তকরণ আদেশ (পার্শিয়াল ফরফেইটার অর্ডার) জারি করা হয়। তারপর ফিলিপাইনের স্থানীয় আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক এফিডেভিটের মাধ্যমে আদালতে এ অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্য আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার ফিলিপাইনের রিজিওনাল ট্রায়াল কোর্ট বাংলাদেশের অনুকূলে ৪৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার এবং ৪৮ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার পেসো অবমুক্ত করার আদেশ জারি করেছে।
এলএবাংলাটাইমস/আই/এলআরটি
শেয়ার করুন