কূটনীতিক বহিষ্কার : পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি রাশিয়ার
যুক্তরাজ্য ও তার মিত্র দেশগুলো রাশিয়ার শতাধিক কূটনীতিককে বহিষ্কার করায় এর বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে মস্কো বলেছে, এ ধরনের পদক্ষেপ ‘সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক আইন বিরুদ্ধ’। রাশিয়া অবশ্যই এ ধরনের উসকানিমূলক কার্যকলাপের জবাব দেবে।
গত ৪ মার্চ সাবেক রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার মেয়েকে যুক্তরাজ্যের সলসবারির একটি পার্ক থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। যুক্তরাজ্যের সন্দেহ, পক্ষত্যাগী স্ক্রিপাল ও তার মেয়েকে বিষাক্ত রাসায়নিক গ্যাস হামলা চালিয়ে হত্যাচেষ্টার পেছনে রাশিয়া জড়িত। তবে রাশিয়া এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। ওই ঘটনার জেরে প্রথমে ১৪ মার্চ ২৩ রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। জবাবে ১৭ মার্চ সমানসংখ্যক ব্রিটিশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
যুক্তরাজ্য ও রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনার এই রেশ ধরে যুক্তরাজ্যের মিত্র ২০টির বেশি দেশ রুশ কূটনীতিক বহিষ্কার শুরু করে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সর্বোচ্চ ৬০ জন, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্স ৪, জার্মানি ৪, পোল্যান্ড ৪, চেক প্রজাতন্ত্র ৩, লিথুয়ানিয়া ৩, ডেনমার্ক ২, নেদারল্যান্ডস ২, ইতালি ২, স্পেন ২, এস্তোনিয়া ১, ক্রোয়েশিয়া ১, ফিনল্যান্ড ১, হাঙ্গেরি ১, লাটভিয়া ১, রোমানিয়া (১), সুইডেন ১ জন রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করে। এ ছাড়া ইউক্রেন ১৩ জন, আলবেনিয়া ২, নরওয়ে ১, মেসিডোনিয়া ১ জনকে বহিষ্কার করেছে। কানাডা ৪ কূটনীতিক বহিষ্কারের পাশাপাশি ৩ কূটনীতিকের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে।
এই তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। দেশটি দুই রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম ইউরোপে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে কাউকে হত্যার চেষ্টাকে খুবই দুঃখজনক বলে সমালোচনা করেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল।
এ দিকে আইসল্যান্ড রাশিয়ার সাথে উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক আলোচনা স্থগিত করার ঘোষণা দিয়ে বলেছে, তাদের সরকারের নেতারা জুনে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে যাবেন না। অস্ট্রিয়া, গ্রিস ও পর্তুগাল যুক্তরাজ্যের প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করেছে। তবে এসব দেশ জানিয়েছে, তারা কোনো রুশ কূটনৈতিককে বহিষ্কার করবে না।
কূটনীতিক বহিষ্কারের জবাবে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া তাৎক্ষণিক এক বিবৃতিতে বলা হয়, রাশিয়ার কূটনীতিকদের বহিষ্কার উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের শামিল এবং এটা আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে নষ্ট করবে, ব্যাহত করবে ঘটনার তদন্তকে। বিবৃতিতে দাবি করা হয়, যেসব দেশ রাশিয়ার কূটনীতিকদের বহিষ্কার করেছে, তারা কেবল লন্ডনের হাতে (পুতুল হিসেবে) নেচেছে, যারা (লন্ডন) কার্যত ঘটনার কোনো ব্যাখ্যা ছাড়া এবং প্রকৃত সহযোগিতা প্রত্যাখ্যান করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সমানে অভিযোগ তুলে একপেশে, পক্ষপাতদুষ্ট ও ভণ্ডামিপূর্ণ অবস্থান নিয়েছে। রাশিয়াও তাদের নাগরিককে (স্ক্রিপাল) যুক্তরাজ্যের মাটিতে আক্রমণের ঘটনার সত্য জানতে আগ্রহী উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, লন্ডনকে বারবার অনুরোধ করলেও রাশিয়ার কাছে এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই।
রাশিয়ার প্রভাবশালী সিনেটর ভøাদিমির জাবারভ বলেন, ওয়াশিংটনকে জবাব দিতে রাশিয়াও ৬০ মার্কিন কূটনীতিককে বহিষ্কার করবে। এটা এখন স্পষ্ট যে পদক্ষেপটি হবে ‘টিট ফর ট্যাট’ (আঘাতের পাল্টা আঘাত), তারাও সমানসংখ্যক কূটনীতিককে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবে।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরো নিষেধাজ্ঞা আসছে : ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে এবং নতুন আলটিমেটাম দিতে যাচ্ছেন। অনুরূপ বাড়তি ব্যবস্থা নেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নও।
সংবাদমাধ্যমগুলো তেরেসা মের মুখপাত্রের বিবৃতির বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাজ্য ও ইইউ আগামী জুন মাসের আগে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। স্যালিসবুরি শহরে শুধু পক্ষত্যাগী রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার মেয়ে ইউলিয়া ছাড়াও প্রায় ১৩০ জন বিষাক্ত স্নায়ুগ্যাস হামলার শিকার হয়েছেন মর্মে তেরেসা মে দাবি করেছেন। তার এই বক্তব্যের পরপরই তার মুখপাত্র এই বিবৃতিটি দিলেন।
বহিষ্কার করার মতো রুশ গুপ্তচর খুঁজে পাচ্ছে না নিউজিল্যান্ড : যুক্তরাজ্যে নার্ভ এজেন্ট হামলার ঘটনায় রাশিয়ার গুপ্তচরকে বহিষ্কার করতে চায় নিউজিল্যান্ড। কিন্তু বহিষ্কার করার মতো কোনো গুপ্তচরকে খুঁজে পাচ্ছে না দেশটি। মঙ্গলবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী এ কথা জানিয়েছেন।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরদার্ন বলেন, আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি এখানে অঘোষিত কোনো রুশ গোয়েন্দা কর্মকর্তা নেই। যদি আমরা জানতে পারি তাহলে তাদের বহিষ্কার করব। তিনি জানান, সলসবুরি হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ও পদক্ষেপের বিষয়টি পর্যালোচনায় রাখা হবে।
অতীতে রুশ কূটনীতিক বহিষ্কারের ঘটনা : ১৯৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান স্নায়ুযুদ্ধকালীন ৮০ জন রুশ কূটনৈতিক বহিষ্কার করেন। ২০১৬ তে বারাক ওবামা প্রশাসন হিলারি ক্লিনটনের ২০১৬-এর নির্বাচনী প্রচারণা হ্যাক করার অভিযোগে ৩৫ জন কূটনীতিক বহিষ্কার করেন। মস্কো অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করে।
শেয়ার করুন