আপডেট :

        পৌরসভা "খ" শ্রেণি থেকে "ক" শ্রেণিতেও উন্নীত হলো কিন্তু আলোর মুখ দেখছে না

        সর্বমোট ৫ হাজার ৪৫৬ জন সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছে

        ৪৮ ঘণ্টার জন্য হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া বিভাগ

        ৪৮ ঘণ্টার জন্য হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া বিভাগ

        ২-৩ বছরের মধ্যে মহাকাশে যাবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্যাটেলাইট

        ব্যাংক নির্বাহীদের সন্দেহজনক লেনদেন ও বিলিয়ন ডলার ঋণ খেলাপির জন্য তারল্য সংকটে ভুগছে বাংলাদেশ

        নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের মধ্যে অস্বস্তি ছিল

        জিসিসি গ্রান্ড ট্যুর’ নামে নতুন ভিসা চালু করতে যাচ্ছে উপসাগরীয় ছয় দেশ

        বায়ু দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই করা তরুণ কর্মীদের ক্ষমতায়ন পর্যন্ত বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করে যাবে যুক্তরাষ্ট্র

        দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র নেই

        মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে ফাঁসির আসামিদের কনডেম সেলে না রাখার সিদ্ধান্ত

        নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে প্রার্থী হওয়া ৪৫ জনকে কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়েছে বিএনপি

        নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে প্রার্থী হওয়া ৪৫ জনকে কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়েছে বিএনপি

        ঢাকাসহ রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু'এক জায়গায় আজ বৃষ্টি হতে পারে

        নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে প্রার্থিতা বাতিল

        গাড়ির জন্য মায়ের সঙ্গে অপেক্ষা করছিল ৪ বছর বয়সী শিশু, অতঃপর লরির ধাক্কায় মৃত্যু

        আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে

        আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে

        পঞ্চমবারের মতো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন

        দখলদার ইসরায়েলকে ১০০ কোটি ডলার মূল্যের অস্ত্র সরবরাহ করতে চায় হোয়াইট হাউস

ভেতরের আইরিন

ভেতরের আইরিন

আইরিন খান। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক মহাসচিব। বর্তমানে সকাল সকাল ই-মেইল দেখেন আইরিন খান। ছবি: সুমন ইউসুফইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ল অর্গানাইজেশনের মহাপরিচালক। ভালোবাসেন রান্না করতে, বই পড়তে। প্রথম আলোর আমন্ত্রণে ১৬তম বর্ষপূর্তির উৎসবে যোগ দিতে এসেছিলেন ঢাকায়। রোমে ফিরে যাওয়ার আগের দিন ১৫ নভেম্বর কথা হয় তাঁর ঢাকার বাসায়। জানান তাঁর জীবনযাপনের নানা দিক।
কথা শুরু হয়েছিল গাড়িতে বসে, তাঁর বাসায় যেতে যেতে। যানজটে বসেই বললেন, ‘রোমে আমি হেঁটেই অফিস যাই। আমার বাড়ি থেকে ৩০ মিনিটের পথ। আমি দ্রুত হাঁটি বলে ২০ মিনিট লাগে। সারা দিনের ব্যায়ামও তখন হয়ে যায়। কাজ করার শক্তি বেশি পাওয়া যায়। আর এখানে যানজটে এত সময় নষ্ট হয়। ফুটপাতও তো নেই হাঁটার মতো।’ কথাগুলো বলছিলেন আইরিন খান, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক মহাসচিব। বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ল অর্গানাইজেশনের মহাপরিচালক। কাজের সূত্রে এখন ইতালির রাজধানী রোমেই থাকেন।মাঝে মধ্যে হালকা গয়না পরেনপ্রথম আলোর আমন্ত্রণে ঢাকায় এসেছিলেন। উঠেছিলেন গুলশানে তাঁর মায়ের বাড়িতে। বসার ঘরে টেবিলের পাশে একটি রেকর্ডারের দিকে চোখ যাওয়াতে বললেন, ‘আমার মা সুরাইয়া খানের কথা রেকর্ড করছি। একটি বই লিখব। গত ১০০ বছরে এ দেশের নারীদের জীবনের গল্প নিয়ে।’ এর আগে আইরিন খানের বই বেরিয়েছে একটাই—দ্য আনহার্ড ট্রুথ।
কী করতে সবচেয়ে ভালো লাগে? অবাক করে দিয়ে বলেন, ‘রান্না’। ফিউশনধর্মী রান্নার প্রতি ঝোঁক বেশি। ঢাকার গ্রিন হেরাল্ড স্কুল (আগের সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স) থেকে ও লেভেল পাস করে ১৯৭৩ সালে আয়ারল্যান্ডে সেন্ট লুই কলেজ থেকে এ লেভেল করেন। তখন থেকে নিজে নিজেই রান্না করেন। কাঁচা বাজার করতে ভালো লাগে। মানবাধিকারকর্মী না হলে তিনি রান্নাবিদ বা শেফ হতেন। ইচ্ছা আছে রান্না নিয়ে বই লেখার। নিজে রান্না করলেও আইসক্রিম ও গুড়ের সন্দেশ খেতে খুবই ভালোবাসেন।১৯৭৮ সালে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টার থেকে এলএলবি পাস করে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলএম করতে। প্রথমদিকে আইন বিষয়ে খুব একটা আগ্রহ পাচ্ছিলেন না। কিন্তু একটি সেমিস্টারে আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার পড়ানো হয়। তখন নিজের আগ্রহেই এ বিষয়ে আরও পড়াশোনা শুরু করেন। এর মধ্যে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় মানবাধিকারের ওপর একটি ফেলোশিপ পান। সেখান থেকে ১৯৮০ সালে যোগ দেন জাতিসংঘের হাইকমিশনার ফর রিফিউজিসে লিগ্যাল অফিসার হিসেবে। ২১ বছর পর উপপরিচালক হিসেবে এই চাকরি বদল করেন। এই বদলও তাঁর জীবনে আরেক মাত্রা এনে দিয়েছে। কারণ, ২০০১ সালে তিনি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০০৯ সালে অ্যামনেস্টিতে চাকরির মেয়াদ শেষ হয়। তিনি বলেন, ‘আমি অ্যামনেষ্টিতে ২০০১ সালে যোগ দেই। এর কিছু দিন পরে ঘটে যুক্তরাষ্ট্রের ৯/১১–এর হামলার ঘটনা। এরপর পুরো পৃথিবীর মানবাধিকারের দৃশ্যপট পরিবর্তন হয়। তখন আমার মনে হয় এটিই আসল সময় মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার। ’২০১০ সালে তিনি বেশ কিছুদিন বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার-এর উপদেষ্টা সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন। এ ছাড়া ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনাল, সেভ দ্য সিলড্রেন, সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড সোস্যাল রাইটস বোর্ডের সদস্য ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই)–এর উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য।
যেখানেই যান সঙ্গে থাকে বইমাঝে কিছুদিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক ল স্কুলে শিক্ষকতাও করেছেন। এই কাজ খুব উপভোগ করেন। যখন সব রকম কাজ থেকে অবসর নেবেন তখন শুধু শিক্ষকতাই করবেন।বই ছাড়া বেশিক্ষণ থাকতে পারেন না আইরিন খান। পড়াশোনার এই অভ্যাস হয়েছে মায়ের কারণে। আইরিন খান বলেন, আমার মা অত লেখাপড়া না করলেও চিন্তাভাবনায় প্রগতিশীল ছিলেন। মা সব সময় চাইতেন আমরা তিন বোন যেন স্বাবলম্বী হই। স্কুলে থাকতেই আমরা তিন বোন ফুলার রোডের ব্রিটিশ কাউন্সিলের লাইব্রেরিতে যেতাম বই আনতে। তখন থেকে এমন অভ্যাস হলো বই পড়ার। এখন মনে হয়, এসব বই থেকে পাওয়া শিক্ষাই আমার জীবনের গতিপথকে বদলে দিয়েছে।ইংরেজি সাহিত্যের সব ধরনের বই তাঁর ভালো লাগে। রবীন্দ্র ও শরৎচন্দ্রসমগ্র নিজের বাড়িতে রাখেন। যখনই মন চায় পড়া বই আবার পড়েন। এ ছাড়া সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, হুমায়ূন আহমেদ ও সুচিত্রা ভট্টাচার্যের বই পড়তে ভালো লাগে। সময়ের সঙ্গে চলার জন্য আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও উন্নয়নবিষয়ক লেখা নিয়মিত পড়েন। সময় পেলে গানও শোনেন। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, ভুপেন হাজারিকা প্রিয় শিল্পী। রোমে গ্রীষ্মের সময় অপেরা দেখতে ভালোবাসেন। নিউইয়র্কের থিয়েটারও ভালো লাগে।রোেম থাকলে সাড়ে সাতটার দিকে ঘুম থেকে ওঠেন। এরপর বসে যান মেইল দেখতে। ই-মেইল খুলে সবার উত্তর দিয়ে কাজের জন্য তৈরি হন।তিনি পাকা রাঁধুনিওসকালে হালকা কোনো নাশতা খেয়ে বেরিয়ে পড়েন। দুপুরে একটু ভারী খাবার খান। অফিস থেকে সন্ধ্যায় ফিরে সম্ভব হলে কিছুক্ষণ ব্যায়াম করেন। ‘আমি অলস প্রকৃতির মানুষ। বাড়তি ব্যায়াম করতে ইচ্ছে করে না। ভাবছি এবার গিয়ে নিয়মিত জিমে যেতে শুরু করব।’ বলেন আইরিন খান। রাত জাগার অভ্যাস আছে তাঁর। লেখালেখি থেকে যেকোনো বিষয়ে ভাবনা সব রাতেই করেন। রাতের গভীরতার সঙ্গে তাঁর চিন্তার গভীরতা বাড়ে। ফলে বেশ রাত করেই ঘুমাতে যান তিনি।স্বামী অর্থনীতিবিদ জোসেফ আওয়ার ও মেয়ে সুরাইয়া আওয়ারকে নিয়ে আইরিন খানের সংসার। স্বামীর কর্মস্থলও রোমে। আর মেয়ে সাংবাদিকতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়া করছেন। আইরিন খান মনে করেন, পরিবার থেকে শতভাগ সমর্থন না পেলে কোনো মেয়ের এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আমার বাবা চিকিৎসক সেকেন্দার আলী খান সব সময় মায়ের সিদ্ধান্তকে সমর্থন দিয়েছেন। আমার স্বামী-মেয়েও আমাকে সমর্থন দেয়। ওরা আমার কাজটা বুঝতে পারে। তবে আমার মেয়ে আমার পরিচয়ে বড় হতে চায় না। সে চায় নিজের চেষ্টায় কিছু করতে। তাঁর এই সিদ্ধান্তকে আমিও সমর্থন দিয়েছি।
‘আপনার চুল কি ছোটবেলা থেকেই এমন?’ এ কথা শুনে বেশ হাসেন। আইরিন খান বলেন, ‘একদম জন্ম থেকেই এমন। ছোটবেলায় অনেকে বলেছে, চুল সোজা করে ফেলতে কিন্তু করিনি। কোঁকড়া চুলটাই ভালো লাগে। কয়েক দিন আগে ৩২ বছর পর এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলো। সে তো পেছন থেকে আমার চুল দেখেই আমাকে চিনে ফেলল।’
আইরিন খানের প্রিয় পোশাক শাড়ি। বিভিন্ন শাড়ির ইতিহাস সম্পর্কে তাঁর অনেক আগ্রহ। যেকোনো রঙের সিল্ক, জামদানি ও টাঙ্গাইলের সুতির শাড়ি পরতে ভালোবাসেন। দেশে থাকলেই তাঁর শাড়ি পরা হয় বেশি। সাধারণত ঢাকার বেইলি রোড থেকে শাড়ি কেনেন। শাড়ির বুনন কেমন সেটিকে খুব গুরুত্ব দেন। কোথাও গেলে সেখানকার ঐতিহ্যবাহী শাড়ি সংগ্রহ করেন।স্বামী–সন্তানের সঙ্গেবিদেশে থাকলে আবহাওয়া ও পরিবেশের কারণে খুব একটা শাড়ি পরেন না। বিশেষ অনুষ্ঠান থাকলে পরেন। এমনিতে প্যান্ট, টপ পরতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এসবের সঙ্গে হালকা গয়না পরেন মাঝেমধ্যে। সব সময় বড় আকারের ব্যাগ ব্যবহার করেন।
হাতঘড়ি তাঁর এতটাই প্রিয় যে ঘুমাতেও যান ঘড়ি পরে। পুরোনো দিনের আসবাবপত্র তাঁর ভালো লাগে। বেড়াতেও পছন্দ করেন। তাই তো আজ এ দেশে কাল ওদেশে—এই চাকরি উপভোগ করছেন। টুইটার ব্যবহার করলেও ভাবছেন ফেসবুক ও ইন্সট্রাগ্রামেও যোগ দেবেন শিগগির। নতুন প্রজন্মের ভাবনা বুঝতে হলে এর দরকার আছে।
জীবনে সফল হওয়ার জন্য পড়াশোনা ঠিকমতো করা উচিত বলে মনে করেন আইরিন খান। আর নিজের চাওয়ার প্রতি দৃঢ় হতে হবে। আমাদের কথা শেষের দিকে। ফোন এল রোম থেকে। পরদিন সকালে আবার উড়ে যাবেন গন্তব্যে...।

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত