চীনকে দেওয়া শুল্ক “অনেক কমে আসবে”: ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ থেকে সম্ভাব্য পিছু হটার ইঙ্গিত
ছবিঃ এলএবাংলাটাইমস
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের ওপর আরোপিত উচ্চ শুল্ক “অনেকটাই কমে আসবে, তবে শূন্য হবে না” বলে মন্তব্য করেছেন। এই বক্তব্য বিশ্ববাজারে চলমান অস্থিরতার মাঝে একটি সম্ভাব্য নীতিগত পিছু হটার ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
হোয়াইট হাউসে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, “১৪৫% শুল্ক খুব বেশি। এটা এতটা বেশি থাকবে না। অনেকটা কমে যাবে। কিন্তু একেবারে শূন্য হবে না।”
ট্রাম্পের এই মন্তব্য আসে এমন এক সময়ে, যখন মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট আগের দিন একটি বিনিয়োগ সম্মেলনে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-চীন উচ্চ শুল্ক কার্যত দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যকে অবরুদ্ধ করেছে এবং এই অবস্থান টেকসই নয়।
বেসেন্ট জানান, যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে কোনো ‘সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ’ চায় না, বরং বাণিজ্যে ‘পুনঃসাম্য’ আনাই মূল লক্ষ্য। তার এই মন্তব্যে ওয়াল স্ট্রিটে ইতিবাচক সাড়া পড়ে এবং প্রধান মার্কিন সূচকগুলো দিনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে।
এশীয় বাজারেও এর প্রভাব পড়ে – হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক ২%-এর বেশি বৃদ্ধি পায়, জাপানের নিকেই সূচকও ২% এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কসপিও ১.৫% উত্থানে বন্ধ হয়।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার জানায়, “যুক্তরাষ্ট্র যদি সত্যিই একটি চুক্তি করতে চায়, তবে হুমকি ও চাপে নয়, সমতা, পারস্পরিক সম্মান ও পারস্পরিক লাভের ভিত্তিতে আলোচনায় আসতে হবে।”
মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন বলেন, “চীন কখনও যুদ্ধ চায় না, কিন্তু যুদ্ধ এলে তা ভয়ও পায় না। আলোচনার দরজা খোলা, তবে চাপ প্রয়োগ করে চুক্তি আদায় করা যাবে না।”
চীনের সামাজিক মাধ্যমে ট্রাম্পের শুল্ক নীতিতে বদল আনার ইঙ্গিত দ্রুত ভাইরাল হয়ে পড়ে। বুধবার Weibo-তে “Trump chickened out” হ্যাশট্যাগটি ১৫ কোটির বেশি ভিউ পায়।
বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে চলমান এই রেকর্ড পরিমাণ শুল্ক যুদ্ধ বিশ্ববাজারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে, সরবরাহ চেইনে বিঘ্ন ঘটিয়েছে এবং মন্দার আশঙ্কা বাড়িয়েছে।
চীনও পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে আমেরিকান পণ্যের ওপর ১২৫% পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করে, বেশ কয়েকটি মার্কিন কোম্পানিকে ‘অবিশ্বস্ত সত্তা তালিকায়’ যুক্ত করে এবং iPhone থেকে শুরু করে সামরিক ক্ষেপণাস্ত্র পর্যন্ত ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ খনিজের রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়।
হলিউড চলচ্চিত্রের সংখ্যাও সীমিত করেছে চীনা কর্তৃপক্ষ এবং দু’টি বোয়িং বিমান ফেরত পাঠিয়েছে, যেগুলো চীনা এয়ারলাইনের জন্য নির্ধারিত ছিল।
এর মধ্যেও ট্রাম্প দাবি করেছেন, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সঙ্গে তার “খুব ভালো সম্পর্ক” রয়েছে এবং তিনি আশা করছেন শি আলোচনার টেবিলে বসবেন। তবে ট্রাম্প বলেছেন, আলোচনার জন্য প্রথম পদক্ষেপ আমেরিকা নয়, বরং চীনকেই নিতে হবে।
তিনি বলেন, “না, না, আমরা খুব ভালোভাবে এগোব। ওরাও ভালোভাবে এগোবে। আমরা দেখব কী হয়। তবে তারা যদি চুক্তি না করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা করতে পারবে না। আমরা চাই তারা যুক্ত থাকবে।”
একজন সূত্র জানায়, চীন ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালানোর জন্য একজন আলোচক নির্ধারণ করেছিল, কিন্তু মার্কিন পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট যোগাযোগের অনুপস্থিতি সমস্যা তৈরি করেছে।
এছাড়া, ট্রাম্প প্রকাশ্যে শিকে সম্মান জানানোর কথা বললেও, তার প্রশাসনের সদস্যদের চীনবিরোধী বক্তব্যের প্রতি নীরবতা অনেকের মতে তার প্রকৃত অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
এ মাসের শুরুতে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স “চীনা কৃষক” নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করলে তা চীনের ইন্টারনেটে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতিতে নমনীয়তা মার্কিন অর্থনীতির ওপর চীনের প্রতিক্রিয়ার একটি সরাসরি ফল, যা আগামী দিনে আরও আলোচনার পথ উন্মুক্ত করতে পারে।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
শেয়ার করুন