ক্রিমিয়া নিয়ে আপস নয়, চুক্তি না হলে "পিছিয়ে আসবে" যুক্তরাষ্ট্র: ভ্যান্স
ছবিঃ এলএবাংলাটাইমস
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এক কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন যদি যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে সম্মত না হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র "এই প্রক্রিয়া থেকে সরে আসবে।"
ভ্যান্স ভারতের সফরে সাংবাদিকদের বলেন, "রাশিয়া ও ইউক্রেনের কাছে আমরা একটি স্পষ্ট প্রস্তাব দিয়েছি। এখন সময় এসেছে – তারা রাজি হবে, নাকি আমরা সরে আসব।"
এই মন্তব্য আসে লন্ডনে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইউক্রেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এক শান্তিচুক্তির লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক বাতিল হওয়ার পর। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ হঠাৎ করে বৈঠক থেকে সরে দাঁড়ান।
যুক্তরাষ্ট্রের ফোকাস এখন মস্কোয় এই সপ্তাহের আলোচনা ঘিরে, যেখানে উইটকফ চতুর্থবারের মতো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করবেন।
অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একটি “তাৎক্ষণিক, পূর্ণ ও শর্তহীন যুদ্ধবিরতি”-র দাবি জানিয়েছেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেন, “হত্যা বন্ধ করাই এখনকার প্রধান কাজ।”
যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, রাশিয়া যদি বর্তমানে দখলকৃত এলাকা ধরে হামলা বন্ধ করে, তবে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারে – এমন খবর বের হয় Financial Times-এ। তবে রাশিয়ার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ একে “গুজব” বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এই প্রস্তাবের কথা অস্বীকার করে বলেন, “ইউক্রেন আইনগতভাবে ক্রিমিয়ার দখল স্বীকার করে না। এ নিয়ে কোনো আলোচনা হতে পারে না।”
ইউক্রেনের কৌশলগত শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ইউরি সাক বলেন, “ক্রিমিয়া নিয়ে আপস করার আশা করা একেবারেই ‘নির্বোধ’।”
বুধবার রাশিয়া আবার ইউক্রেনে হামলা শুরু করে। পূর্ব ইউক্রেনের মারহানেটে একটি বাসে ড্রোন হামলায় ৯ জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হন।
দক্ষিণাঞ্চলের খেরসন অঞ্চলে এক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রুশ হামলায় ধ্বংস হয়, যা গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো হিসেবে পরিচিত ছিল।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক স্থগিত করা হয়েছে, তবে অফিসিয়াল পর্যায়ের আলোচনা “গোপনে” চলবে।
মার্কো রুবিও শেষ মুহূর্তে বৈঠক থেকে সরে দাঁড়ানোয় ব্রিটিশ কর্মকর্তারা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন। যুক্তরাষ্ট্র ব্যাখ্যা দেয়, “লজিস্টিক কারণে” এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি রুবিওর সঙ্গে “গঠনমূলক” আলাপের কথা জানিয়েছেন এবং বলেন, এটি ইউরো-আটলান্টিক নিরাপত্তা ও ইউক্রেনের ভবিষ্যতের জন্য “গুরুত্বপূর্ণ সময়”।
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হেইলি পার্লামেন্টে বলেন, “পুতিন শান্তির কথা বলেন, কিন্তু যুদ্ধবিরতি মানেন না। তিনি শুধু সময় নষ্ট করছেন।”
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২-এ রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের পর থেকে শত-সহস্র মানুষ নিহত বা আহত হয়েছে, আর প্রায় ৭০ লক্ষ ইউক্রেনীয় এখনো বিশ্বজুড়ে শরণার্থী।
এই সংঘাতের মূল শিকড় ২০১৪ সালের ইউক্রেন বিপ্লবে, যখন একটি রাশিয়াপন্থী সরকার উৎখাত হয়, আর রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করে ও পূর্ব ইউক্রেনে বিদ্রোহীদের সমর্থন দিতে শুরু করে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই কড়া অবস্থান এবং ইউক্রেনের অনমনীয় মনোভাব মিলে দ্রুত সমাধান সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে বিশ্লেষকরা সন্দিহান। তবে আলোচনার গতি বাড়ছে এবং আগামী সপ্তাহগুলোতে কূটনৈতিক অগ্রগতি ঘটার সম্ভাবনা অস্বীকার করা যাচ্ছে না।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
শেয়ার করুন