ব্রিটেন কি আদৌ বের হতে পারবে ইইউ থেকে?
যুক্তরাজ্য আর ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকতে চায় না- এ ব্যাপারে সে দেশের নাগরিকরা ভোটও দিয়েছে না থাকার পক্ষে, যা কি না ব্রেক্সিট নামে পরিচিতিও পেয়েছে।
চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে গেলে দেখা যায় দেশটি দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গেছে। এক পক্ষ ইউনিয়নে না থাকার পক্ষে, আরেক পক্ষ থাকার পক্ষে। দুই পক্ষেই ভোট পড়েছে প্রায় সমান। এ অবস্থায় এখন কি ঘটতে পারে সেখানে?
২৪ জুন সন্ধ্যা ঠিক ৬টায় নিশ্চিত হয়ে যায় যে, ইউরোপিয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসছে যুক্তরাজ্য। কিন্তু যুক্তরাজ্য কি এখনই বেরিয়ে আসবে ইউনিয়ন থেকে ? এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, না।
বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে বেশি ভোট পড়লেও আদৌ তারা এখান থেকে বের হতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বের হতে সক্ষম হলেও দুই বছর বা তারও বেশি সময় লাগবে এ প্রক্রিয়া সস্পন্ন হতে। কিন্তু এরই মধ্যে শুরু করেছে নজীরবিহীন সব ঘটনা।
প্রয়োজন হবে নতুন প্রধানমন্ত্রীর
গণভোটের ফল প্রকাশের পর ডাউনিং স্ট্রিটের ঠিক বাইরে এক বিবৃতিতে ডেভিড ক্যামেরন বলেন, সরকার এ ফল মেনে নেবে। সেই সঙ্গে পালন করবে ব্রিটিশ জনগণের নির্দেশ। যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিকদের নিশ্চিন্তে থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ভোটের ফল যাই হোক না কেন, তারা মোটেও ক্ষতিগ্রস্থ হবেন না।
‘জাহজটিকে সঠিক’ রাখার জন্য তিনি ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে থেকে যাবেন। একই সঙ্গে ঘোষণা দেন যে, আসছে শরতে তিনি পদত্যাগ করবেন। কেননা ‘দেশকে পরবর্তী গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার সঠিক ক্যাপ্টেন’ তিনি নন।
নতুন কনজারভেটিভ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন সেপ্টেম্বর মাসের শেষদিকে অনুষ্ঠিত হবে বলে ধারণ করা হচ্ছে।
বাজার প্রতিক্রিয়া
গণভোটের ফল বলতে গেলে প্রায় সঙ্গে সঙ্গে নাটকীয় প্রতিক্রিয়া ফেলে বাজারে। লন্ডন শেয়ার বাজারে দিনের শুরুতে শেয়ারের দাম পড়ে যায় ৮ শতাংশ। বার্কলেস ও আরবিএস এক পর্যায়ে ৩০ শতাংশেরও বেশি হ্রাস পায়। তবে দিনের শেষ দিকে শেয়ার বাজারের মূল্য সূচক কিছুটা বেড়ে যায়। আর দিন শেষ হয় ২ দশমিক ৮ শতাংশ কমে।
বৈদেশিক মূদ্রাবাজারে পাউন্ডের মূল্যমানও হ্রাস পায়। ১৯৮৫ সালের পর পাউন্ডের বিনিময় মূল্য কখনোই এতো হ্রাস পায়নি। এক পর্যায়ে পাউন্ডের বিনিময় মূল্য হ্রাস দাঁড়ায় ১.৩৩০৫ ডলার। অর্থাৎ পাউন্ডের বিনিময় মূল্য হ্রাস পায় ১০ শতাংশেরও বেশি। তবে দিনের শেষে পাউন্ডের বিনিময় মূল্য সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১ দশমিক ৩৬ ডলার।
ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গবর্নর মার্ক কার্নে বলেছেন, ব্রেক্সিটের পর বাজার ও অর্থনীত যে অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে তা আশা করা হচ্ছিল। তবে তার ব্যাঙ্ক যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। আর্থিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রযোজনে সব ধরনের সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
ইউরোপীয় নেতাদের হতাশা
ইউরোপিয় নেতাদের সবাই চেয়েছিলেন, যুক্তরাজ্য ইউরোপিয় ইউনিয়নে থেকে যাক। তাই গণভোটের ফল ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি করেছে।
তড়িঘড়ি করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত কিভাবে মোকাবিলা করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা। আগামী সপ্তাহের ইইউ শীর্ষ সম্মেলনের আগে জার্মানি,ফ্রান্স ও ইতালির নেতারা সোমবার বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন।
ইউরোপীয় কাউন্সিলরের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক ইউনিয়নের ২৭টি দেশের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই ভোট ঐতিহাসিক। কিন্তু তা ইইউ’র জন্য ঐতিহাসিক মুহূর্ত নয়।
জার্মানির নেতা অ্যাঙ্গেলা ম্যারকেল বলেছেন, ভোটের এই ফল ইইউ’র জন্য খুবই দঃখজনক। এখন কি ঘটবে তা আন্দাজ করা খুবই কঠিন।
প্রত্যাহার
ইইউ থেকে সদস্য পদ প্রত্যাহারের বৈধ আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া ২০০৯ সালের লিসবন চুক্তির ৫০ অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে। তবে কখনো ব্যবহার করা হয়নি।
ক্যামেরন বলেছেন, কখন প্রত্যাহার করা হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন নতুন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু ইইউ থেকে কোনো সদস্য দেশ ইচ্ছে করলেই বের হয়ে যেতে পারবে না। যদি কেউ বের হয়ে যেতে চায়, সে ব্যাপারে আলোচনা করে তা সকলকেই অনুমোদন করতে হবে।
এই আলোচনা শেষ করতে হবে দুই বছরের মধ্যে। কিন্তু কোনো কোনো সদস্য দেশ মনে করে, এই আলোচনা শেষ হতে দুই বছরের চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগবে। যেকোনো নুতন চুক্তির ব্যাপারে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ভেটো দেয়ার অধিকার রয়েছে।
তবে যুক্তরাজ্যোর বেরিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে প্রবল যুক্তিতর্ক হবে। এর ফলে এক-দুই বছরের মধ্যে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়া হবে না।
এছাড়া যুক্তরাজ্যের প্রত্যাহারের বিষয়টি অনমোদনের প্রয়োজন রয়েছে পার্লমেন্টেও।
এলএবাংলাটাইমস/সি/এলআরটি
শেয়ার করুন