ইমিগ্র্যাশনের কাছে অসহায় এক বাংলাদেশী!
স্ত্রী এবং তিন ছেলেমেয়েকে রেখে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত সৈয়দ আহমেদ জামালকে ডিপোর্ট করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেবার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে আমেরিকার ইমিগ্রেশন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা Immigration and Customs Enforcement (ICE)। চলমান ইমিগ্র্যাশন আইন ও অবৈধ ইমিগ্র্যান্ট বিরুধী অভিযানের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছেন তিনি।
জানায় যায়, গত ৩০ বছর ধরে ক্যানসাস অংগরাজ্যের লরেন্স সিটিতে পরিবার নিয়ে বসবাসরত পেশায় বিজ্ঞানী ৫৫ বছর বয়স্ক সৈয়দ আহমেদ জামালকে লরেন্সে তাঁর বাড়ির সামনে থেকে ICE গ্রেফতার করে গত ২৪শে জানুয়ারি সকালে । তখন ছেলে-মেয়েদেরকে স্কুলে নিয়ে যাবার জন্য বাড়ির বাইরে বেরিয়েছিলেন তিনি ।
আইস বলেছে , ইমিগ্রেশন জাজের রায় লংঘন করে বেঅইনীভাবে এদেশে অবস্থান করার কারণে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । তিনি এখন ডিপোর্টেশন সেন্টারে আইসের হেফাজতে আছেন । আইনি প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করে তাঁকে নিজ জন্মভূমি বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেবার প্রস্তুতি চলছে ।
গত তিন দশক ধরে এদেশে বসবাসরত জনাব জামাল এদেশ থেকেই বিজ্ঞানে নিয়েছেন আন্ডার গ্র্যাজুয়েট ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রী । সভ্য, রুচিশীল ভদ্রলোক এবং পরিবারের প্রতি দায়িত্ববান ব্যক্তি হিসেবেই সবাই তাঁকে জানে ।
তাঁদের তিন সন্তানের সবাই এদেশে জন্ম নেয়া আমেরিকান সিটিজেন । এখন তাঁর স্ত্রীর আশংকা, পরিবার তাঁকে হয়তো আর কোনদিন দেখতে পাবে না । একই আশংকা তাঁর সন্তানদেরও । “ আমার বাবা একজন আগাগোড়া ভালো মানুষ । কখনো কারো ক্ষতি করেন নি ।” মেয়ে নাহিন কাঁদতে কাঁদতে বললো । বড ছেলে বললো, “ বাবা হলেন একজন পরিবার অন্ত:প্রাণ মানুষ ।”
সৈয়দ জামালকে ডিপোর্ট না করে এদেশে থাকতে দেবার জন্য একটি অনলাইন পিটিশন খোলা হয়েছে যাতে স্বাক্ষর পড়েছে ৮০০০টি । সবাইকে এই পিটিশনে স্বাক্ষর করার জন্য পরিবার এবং বন্ধু বান্ধবদের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে ।
পিটিশনে তাঁকে একজন পরিবার অন্ত:প্রাণ , সামাজিক মানুষ ও বিজ্ঞানী বলে উল্লেখ করা হয়েছে ।
আইসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জামাল যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার শর্ত ভঙ্গের কারণে নিজ দেশে ফিরে যাবার জন্য দেয়া মার্কিন আদালতের দেয়া রায় লংঘন করে এদেশে অবৈধভাবে অবস্থান করছিলেন ।
আইসের বিবৃতি অনুযায়ী, সৈয়দ জামাল ১৯৮৮ সালের জুলাই মাসে টেম্পরারি নন ইমিগ্র্যান্ট ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন । কিন্তু ভিসার মেয়াদ শেষেও অনেকদিন ওভারস্টে করেন । ফলে একজন ফেডারেল ইমিগ্রেশন জাজ তাঁকে ১২০ দিনের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেন আমেরিকা ছাড়ার । তিনি আদালতের নির্দেশ মেনে দেশে ফিরে যান । তবে তিনমাস পরে আবারো একই ভিসা নিয়ে আমেরিকায় পরিবারের কাছে আসেন । আবারো ভিসার মেয়াদ শেষে ওভারস্টে করেন । সে কারণে আবারো ফেডারেল ইমিগ্রেশন জাজ তাঁকে ১২০ দিনের সময় সীমা বেঁধে দিয়ে আমেরিকা ছাড়তে বলেন । কিন্তু এবার তিনি ফিরে যান নি । আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে থেকে যান । আদালতের কাছে এব্যাপারে রিপোর্ট দাখিল করা হলে আদালত ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে ধরে আমেরিকা থেকে বের করে দিতে ইমিগ্রেশনকে নির্দেশ দেন । সেই থেকে তিনি আইসের কালো তালিকাভুক্ত হন এবং তাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে তারা । এরই ধারাবাহিকতায় এবার তাঁকে ধরা হয় ।
এলএবাংলাটাইমস/এএল/এলআরটি
শেয়ার করুন