২০০৯ সালের পর সর্বনিম্ন নিয়োগ পরিকল্পনা, চাকরির বাজারে অনিশ্চয়তা
মার্কিন কোম্পানিগুলো এখন ‘দুঃস্বপ্নের’ শুল্ক-দেয়ালে আটকে পড়েছে
ছবিঃ এলএবাংলাটাইমস
ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার প্রেসিডেন্ট হয়ে ফিরে আসার পর আমদানি পণ্যে নতুন ও উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে পুরো বিশ্বে বাণিজ্য খাতে ঝড় তুলে দিয়েছেন। তিনি প্রথমে চীনের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেন এবং এরপর তা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের প্রায় সব দেশের পণ্যের ওপর।
হুমকি, দরকষাকষি, সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসা ও কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার ধোঁয়াশা কেটে যাওয়ার পর এখন একটি নতুন অর্থনৈতিক চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ট্রাম্প এমন এক উচ্চ শুল্ক-দেয়াল তৈরি করছেন, যা গত এক শতাব্দীতে যুক্তরাষ্ট্রে দেখা যায়নি।
“এটা একেবারে দুঃস্বপ্নের মতো হয়ে গেছে,” বলছেন ইউটাহ-ভিত্তিক ভিলেজ লাইটিং কোম্পানির মালিক জ্যারেড হেনড্রিকস। তিনি তাঁর ব্যবসার অপ্রত্যাশিত খরচ সামাল দিতে বাড়ির মালিকানা বন্ধক রেখে ১৫ লাখ ডলারের ঋণ নিয়েছেন।
চলতি বছরের এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা বেশিরভাগ পণ্যের ওপর কমপক্ষে ১০% কর আরোপ করা হয়েছে।
ট্রাম্প কিছু সময়ের জন্য আরও উচ্চ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা থামিয়ে রেখেছিলেন, কিন্তু এখন সেই বিরতি শেষ হয়ে যাচ্ছে। আগামী ১ আগস্ট থেকে আরও বড় কর কার্যকর হতে যাচ্ছে।
সম্প্রতি ট্রাম্প বিভিন্ন দেশকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি তাদের পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক বসাতে যাচ্ছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপানের মতো প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদারদের সঙ্গে তিনি কিছু ‘ফ্রেমওয়ার্ক’ চুক্তিও করেছেন, যা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অমীমাংসিত রেখেই শুল্ক আরোপকে বৈধতা দিচ্ছে।
এখন গড়ে প্রতিটি পণ্যের ওপর ১০% থেকে ৫০% পর্যন্ত শুল্ক বসানো হচ্ছে, যেখানে বছরের শুরুতে এটি ছিল মাত্র ২.৫% এর কম।
ট্রাম্প যদিও কিছু চরম সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে এসেছেন, তবুও বিশ্লেষকরা বলছেন তাঁর পরিকল্পনা “নাটকীয় পরিবর্তন” এবং এটি অর্থনীতির জন্য “ব্যাপকভাবে ব্যাঘাতসৃষ্টিকারী” হবে। এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়েন্ডি কাটলার বলেন, “আমরা এখন স্পষ্টভাবে একটা শুল্ক-ভিত্তিক বিশ্বে আছি।”
ট্রাম্প বলছেন, তাঁর এই পদক্ষেপ একটি শীর্ষ নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করছে এবং তা “অবিশ্বাস্য” ফল দিচ্ছে।
তিনি দাবি করছেন, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন খাত ফিরছে, বিদেশি বাজার খুলছে এবং সরকারের রাজস্ব বাড়ছে—এই অর্থবছরে ইতোমধ্যেই শুল্ক থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে, যা একটি রেকর্ড। তিনি আরও বলেন, তিনি শুধু বাণিজ্য নয়, অন্যান্য বিষয়ে যেমন সামরিক ব্যয় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নীতিতেও অন্যান্য দেশকে চাপে ফেলতে শুল্ক ব্যবহার করছেন।
“আমরা এখন পৃথিবীর সবচেয়ে ‘হটেস্ট’ দেশ,” বলছেন ট্রাম্প।
তবে ব্যবসায়ী জ্যারেড হেনড্রিকস বলছেন, তাঁর মতো ছোট ব্যবসার জন্য এটা হয়ে দাঁড়িয়েছে এক কঠিন লড়াই। তিনি মূলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তৈরি ক্রিসমাস লাইট ও সাজসজ্জার পণ্য বিক্রি করেন। তাঁর বেশিরভাগ চালান ১ আগস্টের পর যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাবে বলে তিনি উদ্বিগ্ন।
বড় বড় কোম্পানিগুলো আগে থেকেই তাদের সরবরাহকারী ও শিপিং কোম্পানিগুলোকে চাপে ফেলে আগেভাগে পণ্য আনিয়ে নিচ্ছে, আর ছোট ব্যবসায়ীরা পিছিয়ে পড়ছে। উপরন্তু, বছরের এই সময়টায় তাঁর ব্যবসায় খুব বেশি আয় হয় না।
“ওরা ১০০ বিলিয়ন ডলারের শুল্ক নিয়ে উৎসব করছে?” ক্ষুব্ধ হেনড্রিকস বলেন। “এই টাকার ভার পড়ছে আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীদের ঘাড়ে, যারা এখন কর্মচারীদের বেতন কিভাবে দেবে, সেটা ভাবছে।”
শুধু ছোট ব্যবসা নয়, বড় কোম্পানিগুলোরও মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
জেনারেল মোটরস জানায়, এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে তারা ১ বিলিয়ন ডলার শুল্ক দিয়েছে, যদিও মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আমদানিকৃত গাড়ির যন্ত্রাংশে কিছু ছাড় পেয়েছে।
টেসলা এই সময়ের মধ্যে অতিরিক্ত ৩০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে।
খেলনা নির্মাতা হ্যাজব্রো ও ম্যাটেল বলছে, শুল্কের কারণে তারা এ বছর কয়েক কোটি ডলারের ক্ষতি মেনে নিয়েছে এবং তারা তাদের বিক্রির পূর্বাভাস কমিয়ে এনেছে।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
শেয়ার করুন