ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর সম্ভাবনা অস্বীকার করলেন ট্রাম্প
ছবিঃ এলএবাংলাটাইমস
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর সম্ভাবনা খুবই কম, তবে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর ক্ষমতায় থাকার দিন “গোনা শুরু হয়ে গেছে।”
সিবিএসের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ৬০ মিনিটস-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়, যুক্তরাষ্ট্র কি ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুদ্ধে যাচ্ছে কিনা। জবাবে তিনি বলেন, “আমি তা মনে করি না। তারা আমাদের সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করেছে, কিন্তু আমি মনে করি না যুদ্ধ হবে।”
এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবিয়ান সাগরে সন্দেহভাজন মাদক পাচারকারী নৌকাগুলোর ওপর হামলা চালাচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, এসব হামলা যুক্তরাষ্ট্রে মাদক প্রবাহ ঠেকানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। তবে সমালোচকরা বলছেন, এই অভিযান আসলে মাদুরো সরকারকে উৎখাতের উদ্দেশ্যে চালানো হচ্ছে।
ট্রাম্প এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “এটা কেবল মাদক নয়, আরও অনেক কিছুর জন্য।” সিবিএস নিউজের তথ্যানুযায়ী, সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে ক্যারিবিয়ান ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় অন্তত ৬৪ জন নিহত হয়েছে।
ফ্লোরিডার মার-আ-লাগো বাসভবন থেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “প্রতিটি নৌকা ধ্বংস করার মাধ্যমে আমরা মাদকের মাধ্যমে ২৫ হাজার মানুষের মৃত্যু রোধ করি এবং যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অসংখ্য পরিবারকে রক্ষা করি।”
ভেনেজুয়েলায় স্থল হামলার পরিকল্পনা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে ট্রাম্প সরাসরি উত্তর দেননি। তিনি বলেন, “আমি এখনই বলব না আমরা করব কিনা। যদি করতে চাই, করব; না চাইলে করব না।”
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো এর আগে অভিযোগ করেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র “নতুন এক যুদ্ধ তৈরি করছে।” অপরদিকে, কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো বলেছেন, এই নৌ-হামলাগুলো লাতিন আমেরিকাকে “নিয়ন্ত্রণে রাখার” মার্কিন প্রচেষ্টা।
ট্রাম্প আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লোকজন আসছে, যা তিনি “সহ্য করবেন না।” তাঁর ভাষায়, “তারা কঙ্গো থেকেও আসে, সারা বিশ্ব থেকেই আসে, কিন্তু ভেনেজুয়েলা বিশেষভাবে খারাপ — সেখানে গ্যাং আছে, যেমন ‘ট্রেন দে আরাগুয়া’, যা পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর গ্যাং।”
সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা নিয়েও প্রশ্ন করা হয়। তিনি বলেন, “রাশিয়া ও চীন পারমাণবিক পরীক্ষা চালাচ্ছে, আমরা একমাত্র দেশ হতে চাই না যারা তা করছে না।”
যদিও আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশিয়া ১৯৯০ সালের পর এবং চীন ১৯৯৬ সালের পর থেকে কোনো পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়নি। ট্রাম্প দাবি করেন, “তারা করে, কিন্তু তা প্রকাশ করে না।”
একইদিনে, মার্কিন জ্বালানি সচিব ক্রিস রাইট বলেন, প্রশাসনের পরিকল্পনা অনুযায়ী কোনো “পূর্ণাঙ্গ পারমাণবিক বিস্ফোরণ” হবে না; বরং এটি অস্ত্রের অংশবিশেষে “অ-গুরুত্বপূর্ণ বিস্ফোরণ” হবে, যা শুধুমাত্র অস্ত্রের কাঠামো ও কার্যকারিতা যাচাইয়ের জন্য করা হবে।
সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প চলমান সরকারী শাটডাউন নিয়েও কথা বলেন, যা এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে। তিনি ডেমোক্র্যাটদের দায়ী করে বলেন, “তারা পাগল হয়ে গেছে, দিশেহারা হয়ে পড়েছে।” তবে ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, শেষ পর্যন্ত ডেমোক্র্যাটরাই “হেরে গিয়ে” শাটডাউন শেষ করতে ভোট দেবেন।
এটি ছিল ট্রাম্পের প্রথম সিবিএস সাক্ষাৎকার, ২০২৪ সালে ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিসের সঙ্গে নেওয়া একটি সাক্ষাৎকারকে কেন্দ্র করে চ্যানেলটির মূল কোম্পানি প্যারামাউন্টের বিরুদ্ধে মামলা করার পর।
ট্রাম্প অভিযোগ করেছিলেন, সেই সাক্ষাৎকারটি এমনভাবে সম্পাদনা করা হয়েছিল যাতে ডেমোক্র্যাট দলকে সুবিধা দেওয়া হয়। প্যারামাউন্ট মামলার নিষ্পত্তিতে ১ কোটি ৬০ লাখ ডলার (প্রায় ১৩.৫ মিলিয়ন পাউন্ড) দিতে রাজি হয়, তবে অর্থটি ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট লাইব্রেরির জন্য বরাদ্দ করা হবে—তাঁর কাছে সরাসরি নয়।
ট্রাম্প শেষবার ৬০ মিনিটস-এ উপস্থিত হয়েছিলেন ২০২০ সালে, যখন তিনি সাক্ষাৎকার চলাকালে প্রশ্ন “পক্ষপাতদুষ্ট” বলে দাবি করে মাঝপথে অনুষ্ঠান ত্যাগ করেছিলেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনের সময় তিনি আর কোনো সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হননি।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার করুন