আপডেট :

        ২০১৫ সালের মামলা থেকে মুক্তি পেলেন খালেদা জিয়া, কুমিল্লায় আদালতের রায়

        রাশিয়ার পরিবহনমন্ত্রীকে অপসারণ করলেন পুতিন

        ঐতিহাসিক মুহূর্ত: জেনিফার সাইমনস সুরিনামের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনীত

        শ্রীলঙ্কার ওয়ানডে সিরিজের দল ঘোষণা: দুই মালিঙ্গার জোড়া হুমকি

        মালয়েশিয়ার আকাশে অদ্ভুত পরীর আবির্ভাব: রহস্যের জালে ঘেরা গল্প

        ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস, ৭ অঞ্চলে পাহাড়ধসের সম্ভাবনা

        শিক্ষা উপদেষ্টার পরামর্শ: কারিগরি শিক্ষায় জোর দিন

        ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত ও হেফাজত আমিরের বৈঠক: শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি

        বিশ্ব বাণিজ্যে ট্রাম্পের নতুন পদক্ষেপ: কমছে স্বর্ণের দাম

        ফলের রস না স্মুদি: কোনটি আপনার সকালকে করবে আরও স্বাস্থ্যকর?

        লালনশিল্পী ফরিদা পারভীনের চিকিৎসা: ছেলে চাইলেন সকলের দোয়া

        এশিয়ান কাপের ইতিহাস গড়ে নারী ফুটবল দলকে মধ্যরাতে বাফুফের সংবর্ধনা

        ইলন মাস্কের দল নিয়ে ট্রাম্পের বিদ্রূপ: ‘হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দিলেন

        আসন্ন নির্বাচন: পুলিশের প্রস্তুতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ঘোষণা

        ট্রাম্পের বাণিজ্য চাপের মুখে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কড়া বার্তা

        “ফরিদপুরে এ.কে. আজাদ বাড়িতে বিএনপি মিছিল নিয়ে চড়াও, গণসংহতি আন্দোলনের তীব্র প্রতিবাদ

        ক্লাব বিশ্বকাপে খেলায় Musiala ইনজুরিতে পরাজিত বায়ার্ন — PSG সেমিতে জয়ী

        করোনা ও ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়ছে: একদিনে ২৯৪ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত, একজনের মৃত্যু

        “সাইফুল হক: রাজনৈতিক মতপার্থক্যের মধ্যেও জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে হবে”

        পাওয়ার প্লেতে ব্যাটিং-ঝড় তোলায় দম বন্ধ করা পরিবেশ

আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ

আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ

আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা-সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক অনন্য দিন। সুদীর্ঘকালের আপসহীন আন্দোলনের একপর্যায়ে ১৯৭১ সালের এই দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তদানীন্তন রেসকোর্স ময়দান) বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সংগ্রামের ডাক দেন।
এ দিন লাখ লাখ মুক্তিকামী মানুষের উপস্থিতিতে জাতির অবিসংবাদিত মহান নেতা বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
৭ মার্চ তাঁর এই উদ্দীপ্ত ঘোষণায় বাঙালি জাতি পেয়ে যায় স্বাধীনতার দিকনির্দেশনা। এরপরই দেশের মুক্তিকামী মানুষ ঘরে ঘরে চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।
বঙ্গবন্ধুর এই বজ্রনিনাদে আসন্ন মহামুক্তির আনন্দে বাঙালি জাতি উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। যুগ যুগ ধরে শোষিত-বঞ্চিত বাঙালি ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে যায় কাঙ্ক্ষিত মুক্তির লক্ষ্যে।
১৯৪৭ সালে ধর্মীয় চিন্তা, সাম্প্রদায়িক মানসিকতা ও দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে গঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিসত্তা, জাতীয়তাবোধ ও জাতিরাষ্ট্র গঠনের যে ভিত রচিত হয়, তারই চূড়ান্ত পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর ছাত্র-কৃষক-শ্রমিকসহ সর্বস্তরের বাঙালি স্বাধীনতা অর্জনের জন্য মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে বাঙালি জাতি। বিশ্ব মানচিত্রে জন্ম নেয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ভাষণের দিনটি প্রতিবছর যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
দিনটি যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার এবং জাতীয় পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে।
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণে গর্জে ওঠে উত্তাল জনসমুদ্র। লাখ লাখ মানুষের গগনবিদারী স্লোগানের উদ্দামতায় বসন্তের মাতাল হাওয়ায় সেদিন পতপত করে ওড়ে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত লাল-সবুজের পতাকা। লাখো শপথের বজ্রমুষ্টি উত্থিত হয় আকাশে।
সেদিন বঙ্গবন্ধু মঞ্চে আরোহণ করেন বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে। ফাগুনের সূর্য তখনো মাথার ওপর। মঞ্চে আসার পর তিনি জনতার উদ্দেশে হাত নাড়েন। তখন পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান লাখ লাখ বাঙালির ‘তোমার দেশ, আমার দেশ—বাংলাদেশ বাংলাদেশ; তোমার নেতা, আমার নেতা—শেখ মুজিব, শেখ মুজিব’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে।
বঙ্গবন্ধু দরাজকণ্ঠে তাঁর ভাষণ শুরু করেন, ‘ভাইয়েরা আমার, আজ দুঃখ-ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি...।’
এরপর জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বাংলা ও বাঙালির স্বাধীনতার মহাকাব্যের কবি ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম..., এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
মাত্র ১৯ মিনিটের ভাষণ। এই স্বল্প সময়ে তিনি ইতিহাসের পুরো ক্যানভাসই তুলে ধরেন। তিনি তাঁর ভাষণে সামরিক আইন প্রত্যাহার, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর, গোলাগুলি ও হত্যা বন্ধ করে সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া এবং বিভিন্ন স্থানের হত্যাকা-ের তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবি জানান।
বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ভাইয়েরা আমার, আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, মানুষের অধিকার চাই। প্রধানমন্ত্রিত্বের লোভ দেখিয়ে আমাকে নিতে পারেনি। আপনারা রক্ত দিয়ে আমাকে ষড়যন্ত্র-মামলা থেকে মুক্ত করে এনেছিলেন। সেদিন এই রেসকোর্সে আমি বলেছিলাম, রক্তের ঋণ আমি রক্ত দিয়ে শোধ করব। আজো আমি রক্ত দিয়েই রক্তের ঋণ শোধ করতে প্রস্তুত।’ তিনি বলেন, ‘আমি বলে দিতে চাই, আজ থেকে কোর্ট-কাচারি, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সব অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। কোনো কর্মচারী অফিসে যাবেন না। এ আমার নির্দেশ।’
বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সর্বশেষ দুটি বাক্য, যা পরে বাঙালির স্বাধীনতার চূড়ান্ত লড়াইয়ের দিকনির্দেশনা ও প্রেরণার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।’

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত