ঐতিহাসিক মুহূর্ত: জেনিফার সাইমনস সুরিনামের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনীত
স্লোভাকিয়ার জঙ্গলে নিখোঁজ বিশ্বনাথের ফরিদ
খেতে হয় শূকরের মাংস
রাশিয়া থেকে ইউক্রেন গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফ্রান্স যাওয়ার জন্য দালালকে টাকা দিয়েছিলেন। ফ্রান্স যাওয়ার পথে স্লোভাকিয়ার জঙ্গলে হারিয়ে গেছেন ফরিদ উদ্দিন আহমদ (৩৫)। সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার সদর ইউনিয়নের কারিকোনা গ্রামের সমশাদ আলীর ছেলে ৫ সঙ্গী ও দালালের সাথে ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিলেন। বাকিরা সোমবার ফ্রান্স পৌছলেও নিখোঁজ রয়েছেন ফরিদ। তার সঙ্গীরা জানিছেন ফ্রান্স যাত্রাপথে স্লোভাকিয়ার একটি জঙ্গলে নিখোঁজ হয়ে যান ফরিদ উদ্দিন।
ফরিদের পরিবার সুত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত ফুটবল বিশ্বকাপ দেখতে রাশিয়া যান ব্যাংক কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার মাসখানেক পর তিনি রাশিয়া থেকে ইউক্রেন যান এবং সেখানেই অবস্থান করছিলেন। সম্প্রতি ইউক্রেন থেকে ফ্রান্স যাওয়ার জন্য বাংলাদেশে থাকা দালালের সাথে চুক্তি করেন ফরিদের পরিবার। সেই চুক্তি অনুযায়ী মধ্যস্থতাকারী এক ব্যক্তির কাছে ৭ লাখ টাকা জমাও রাখেন ফরিদের পরিবার। ফরিদকে ফ্রান্স পৌঁছানোর পর জমাকৃত এ টাকা হস্তান্তর করা হবে দালালের কাছে। চুক্তি সম্পাদনের পর ইউক্রেনে দালালের প্রতিনিধির আশ্রয়ে ১ মাস অবস্থান করেন ফরিদ। ২৭ আগস্ট ফোন করে ফরিদ জানান পরদিন তিনি ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন। এরপর আর পরিবার ফরিদের কোনো খোঁজ পাননি।
সোমবার ফরিদের এক সঙ্গী ফোন করে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত ফরিদের ভাই কাওছার আলীকে জানান, ২৮ আগস্ট দালালের সঙ্গে ফরিদ উদ্দিনসহ তারা ৬ জন ইউক্রেন থেকে ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। পায়ে হেঁটে ফ্রান্স পৌঁছতে তাদের ৫ দিন সময় লাগে। কিন্ত তাদের সাথে খাবার ছিল মাত্র দু’দিনের। তাই সাথে থাকা খাবার শেষ হয়ে গেলে তাদেরকে শূকরের মাংস খেতে দেয় দালাল। কিন্ত এই খাবার খেতে অপারগতা জানান ফরিদ। তাই তিনি সাথে থাকা খেজুর খেয়ে আরোও একদিন কাটান। দুই দিন পায়ে হেঁটে তারা পৌঁছেন স্লোভাকিয়ার একটি জঙ্গলে। সেখানে পৌঁছার পর সাথে থাকা খেজুরও শেষ হয়ে গেলে শুকরের মাংস খেতে বাধ্য হন ফরিদ। এই খাবার খাওয়ার সাথে সাথেই অসুস্থ হয়ে পড়েন ফরিদ। নাকে ও মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে এবং বমি আর ডায়রিয়া হতে থাকলে একেবারেই দুর্বল হয়ে যান তিনি। ওই জঙ্গলে সেদিন রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে একটি বিকট শব্দ পেয়ে সবার ঘুম ভেঙে যায়। এসময় ঘুম থেকে উঠে ফরিদকে তাদের সাথে দেখতে না পেয়ে রাঁতের অন্ধকারেই খুঁজতে শুরু করেন তারা। কিন্তু কোথাও ফরিদকে খুঁজে না পেয়ে এক পর্যায়ে বাধ্য হয়েই তাকে ছাড়াই ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন দালাল ও ফরিদের সঙ্গী অন্য ৫ জন।
নিখোঁজ ফরিদ উদ্দিন আহমদের ভাই আলাউদ্দিন বলেন, আমরা ধারণা করছি আমার ভাই অসুস্থ হয়ে পড়লে ওই জঙ্গলে তাকে ফেলে রেখে অথবা তাকে হত্যা করে দালাল ও তার সঙ্গীরা ফ্রান্সে চলে যান। আল্লাহ যেন আমার ভাইকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেন সকলের কাছে এই দোয়াই কামনা করছি। পাশাপাশি ওই জঙ্গল থেকে তার ভাই ফরিদ উদ্দিনকে উদ্ধারের প্রদক্ষেপ গ্রহনের জন্য তিনি সরকারের কাছে আবেদন জানান।
৬ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে সবার বড় ফরিদ উদ্দিন আহমেদ’র স্ত্রী সেলিনা সুলতানা উপজেলার রামধানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত আছেন। ফরিদ-সেলিনা দম্পতির দাম্পত্য জীবনে ইরা তাসফিয়া নামে ৩ বছর বয়সী এক কন্যা সন্তান রয়েছে।
শেয়ার করুন