আপডেট :

        ট্রাফিক পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপে রক্ষা পেল রিকশাচালকের প্রাণ

        আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশের সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা বন্ধ রাখার নির্দেশ

        তাপদাহের দোহায় দিয়ে এসির দাম রাখা হচ্ছে বেশি

        বঙ্গবন্ধু কন্যার শেখ হাসিনার কমিউনিটি ভিশন সেন্টার

        নাইরোবির উত্তরে একটি শহরে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় কমপক্ষে ৪২ জন নিহত হয়েছে

        নাইরোবির উত্তরে একটি শহরে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় কমপক্ষে ৪২ জন নিহত হয়েছে

        রাজধানীতে অবৈধভাবে ফুটপাত দখল করে চলে বেচাকেনা

        রাজধানীতে অবৈধভাবে ফুটপাত দখল করে চলে বেচাকেনা

        হিট‌স্ট্রো‌কে আক্রান্ত হ‌য়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার মিরা অসুস্থ‌

        জেনে নেওয়া যাক ঢাকাসহ দেশের কোথাও কোথাও বৃষ্টি হতে পারে

        দেশের বাজারে সোনার দাম আবারও কিছুটা কমানো হয়েছে

        ইরাকে নতুন আইন, সমকামিতার সাজা সর্বোচ্চ ১৫ বছরের জেল

        বিমানবন্দরে বিশ্বের সবচেয়ে ‘বড় টার্মিনাল’ বানাচ্ছে দুবাই!

        কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির ঘাড়ে হাঁটু গেড়ে বসে ছিল পুলিশ, পরে মৃত্যু

        ক্ষমা চাইলেন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভকারী

        যুক্তরাষ্ট্রে টর্নেডোর তাণ্ডবে ৫ জনের মৃত্যু

        গরমে আরামের তিন রেসিপি

        ছোট ছোট কিছু পদক্ষেপে সহজেই হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব

        একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ ড. প্রণব কুমার বড়ুয়া শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন

        অতিরিক্ত গরমের কারণে অসুস্থ হয়ে মারা গেলেন আব্দুস সালাম

ঢাকায় করোনায় মৃত ব্যক্তির ছেলে ফেসবুকে যা জানালেন

ঢাকায় করোনায় মৃত ব্যক্তির ছেলে ফেসবুকে যা জানালেন

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মিরপুরের এক বাসিন্দা গতকাল শনিবার মারা গেছেন। এরপর তিনি যে বাসাটিতে থাকতেন, সেটি লকডাউন করা হয়েছে। করোনাভাইরাসে বাবার মৃত্যু নিয়ে তাঁর ছেলে নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা এই ছেলে বলেন, তাঁর বাবার মৃত্যু নিয়ে নানা ধরনের ভুল তথ্য ও বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ দেওয়া হচ্ছে। এটি পরিষ্কার করতে তিনি ফেসবুকে স্ট্যাটাসটি দিয়েছেন। তাঁর পরিবার এখন বাসায় কোয়ারেন্টিনে আছেন।

পোস্টটি হুবহু তুলে দেওয়া হলো:

‘পিতার মৃত্যু এবং সন্তানের ব্যর্থতা
আমি কখনো ভাবিনি যে আমার পিতার মৃত্যুর ঘটনা আমাকে এই ভাবে লিখতে হবে। কিন্তু কিছু মিডিয়ার মিথ্যা রিপোর্ট দেখে আমি বাধ্য হলাম ফেসবুকে কিছু সত্য প্রকাশ করতে।

গত ১৬ তারিখে আব্বা অসুস্থ বোধ করলে আমাদের ড্রাইভার ওই দিন বিকেলে তাঁকে কল্যাণপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসে। ওই সময় আমরা ভাইয়েরা সবাই অফিসে। আমি অফিস থেকে বাসায় এসে শুনলাম ডাক্তার ধারণা করছে উনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং কোভিড–১৯ টেস্ট এর জন্য প্রস্তাব করেছে। অতঃপর ওই রাত্রেই আমরা টেস্ট এর জন্য IEDCR (আইইডিসিআর) এর হান্টিং নম্বরে ফোন দেওয়া শুরু করি। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর তাদের সঙ্গে আমরা কমিউনিকেশন করতে সমর্থ হই, তারা আমাদের জানায় যেহেতু অসুস্থ ব্যক্তি বিদেশ ফেরত না এবং বিদেশফেরত কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শে উনি আসেন নাই, সেহেতু এই টেস্ট ওনার জন্য প্রযোজ্য নয়, আমি তাদের বলেছিলাম উনি মসজিদে যান এবং ওখান থেকে এই ভাইরাস আসতে পারে কি না। তারা আমাদের বলেছেন যে এই ভাইরাস বাংলাদেশে কমিউনিটিতে মাস লেভেলে এখনো সংক্রমিত হয়নি সুতরাং আপনারা চিন্তা করেন না, এটা সাধারণ শ্বাস কষ্টের প্রবলেম।

ওই রাত্রেই আনুমানিক সাড়ে ১০টায় আমি তাঁকে শ্যামলীর একটি বড় হাসপাতালে নিয়ে যাই এবং আমাদের পরিচিত একজন স্পেশালিস্ট ডক্টরকে দেখাই। উনি আমাকে বলেন, রোগীর নিউমোনিয়া হয়েছে। তাঁকে নিউমোনিয়ার ট্রিটমেন্ট দিতে হবে। তবে বাংলাদেশের কোনো হসপিটাল এই রোগীর ভর্তি নেবে না, আপনারা বাসায় ট্রিটমেন্ট করেন। আমি ওই রাতে বাসায় চলে আসি এবং আব্বাকে নেবুলাইজার দেওয়া এবং মুখে খাওয়া অ্যান্টিবায়োটিক দিতে থাকি। পরের দিন ১৭ তারিখে দুপুরে আমি আব্বাকে নিয়ে যাই শ্যামলীর ওই হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে। তারা রোগী দেখে বলে যে রোগীর অবস্থা ভালো না, তাঁকে আইসিইউ সাপোর্ট দিতে হবে। এবং তাদের আইসিইউ তারা দিতে পারবে না। এরপর আমি অন্য একটি হাসপাতালে কথা বলি। ওরা বলে ওদের আইসিইউ খালি আছে। আমরা দ্রুত আব্বাকে নিয়ে কেয়ার হাসপাতালে যাই এবং আইসিইউতে ভর্তি করি। ১৫ মিনিট পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের বললেন এই রোগী তারা রাখতে পারবে না।


অতঃপর আমরা রোগী নিয়ে কল্যাণপুর একটি হসপিটালে যাই। তারা আমাকে কেবিন দিয়ে সাহায্য করে কিন্তু তাদের আইসিইউ খালি নেই। রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টায় হাসপাতালের ডাক্তার আমাকে বলেন, এই রোগীর আইসিইউ লাগবে, আপনারা দ্রুত আইসিইউর ব্যবস্থা করেন। আমি বিভিন্ন হাসপাতালে কথা বলতে থাকি, কোথাও আইসিইউ খালি নেই। অতঃপর মিরপুরের ওই হাসপাতাল তাদের আইসিইউ দিতে রাজি হয়। আমি এবং আমার ছোট ভাই রাত্রে ৪টার সময় আব্বাকে নিয়ে সেখানে আসি এবং দুপুর ১২টার পর থেকে আব্বা লাইফ সাপোর্টে চলে যান। ১৮ তারিখ দুপুর থেকে আমরা এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ IEDCR–এর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি কিন্তু ব্যর্থ হই। অতঃপর ১৯ তারিখ বিকেলে IEDCR রাজি হয় এবং রাত্রে টেস্ট করে এবং পরের দিন ২০ তারিখ দুপুরে IEDCR আমাদের জানায় যে রিপোর্ট পজিটিভ। আমাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলে ১৫ দিন।

রিপোর্ট পজিটিভ আসার পর থেকে ওই হাসপাতাল আমাদের প্রেশার দিতে থাকে লাইফ সাপোর্ট খুলে দেওয়ার অনুমোদন দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমরা অনুমতি না দিয়ে তাদের বলতে থাকি ট্রিটমেন্ট দিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তারা আর রোগীর কাছেও যায়নি এবং আমাদের আইসিইউর ভেতর ঢুকতেও দেয়নি। যাহোক আমার আব্বু অবশেষে ২১ তারিখ ভোর তিনটার সময় ইন্তেকাল করেন।

আমরা সন্তানরা ব্যর্থ, পিতার সঠিক ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করতে এবং এমনকি তাঁর জানাজাতে আমরা উপস্থিত থাকতে পারিনি। সন্তান হিসেবে, একজন পুত্র হিসেবে এর চেয়ে কঠিন কষ্ট আর কিছুই হতে পারে না। আমার বুকে পাথর বেঁধে বাসায় অবস্থান করছি সরকারের আইন মেনে ১৫ দিন। কিন্তু কিছু পেজ এবং ফ্রন্ট লাইনের মিডিয়া আমাদের নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে যে আমার ভগ্নিপতি বিদেশ থেকে আমাদের বাসায় এসেছে, যেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। আমার দুই ভগ্নিপতি, বড় বোন এবং তার স্বামী চিটাগংয়ের দুটি সরকারি কলেজের অধ্যাপক। অন্য ভগ্নিপতি জাপানে থাকে। সে গত এক বছরের মধ্যে আসেনি, আমার বাবা যেদিন আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে চলে যায়, সেদিন মানে ১৯ তারিখে আমার বড় বোন এবং বড় দুলাভাই চিটাগং থেকে আমাদের বাসায় আসে এবং তারাও হোম কোয়ারেন্টিন পালন করছে।

আমাদের এই বিপদের সময় দয়া করে আমার পরিবার সম্পর্কে মিথ্যা রিপোর্ট করবেন না। এখন পর্যন্ত আমাদের পরিবারের বাকি সদস্যরা সুস্থ আছে। কারও মধ্যে করোনার লক্ষণ দেখা দেয়নি, আমার ছোট ভাই এবং আমার ড্রাইভারের কোভিড–১৯ টেস্ট করা হয়েছে, যেটা নেগেটিভ এসেছে। আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন যেন আল্লাহ আমাদের হেফাজত করেন, বাংলাদেশের সবাইকে যেন আল্লাহ হেফাজত করেন।
আমিন।

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত