চীনের আধিপত্য রুখতে বিরল খনিজ সরবরাহে যুক্তরাষ্ট্র–অস্ট্রেলিয়া ঐতিহাসিক চুক্তি
বিদেশি সহায়তা ও রেমিটেন্স আয় কমেছে : অর্থমন্ত্রী
চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রাজস্ব আহরণ হয়েছে ৩৮ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। বাজেট লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় যা ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ। প্রথম প্রান্তিকে লক্ষ্যমাত্রার এক পঞ্চমাংশের চেয়েও কম রাজস্ব আহরিত হয়েছে। এদিকে এই সময়ে বৈদেশিক সহায়তা কমেছে, কমেছে রেমিটেন্স আয়ও।
সংসদে আজ সোমবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের বাজেটের বাস্তবায়ন চিত্র তুলে ধরেন। বাজেট ২০১৫-১৬ প্রথম প্রান্তিক বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয় ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন তিনি।
এতে তিনি বলেন, প্রথম প্রান্তিকে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম রাজস্ব আহরিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য অর্জনে আমাদের তৎপরতা আরো বাড়াতে হবে। এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
অর্থমন্ত্রীর উত্থাপিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকের নিট অর্থায়ন এবং ঋণ গত অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে। গত অর্থবছরে নিট অর্থায়ন ছিল এক হাজার ৬২৯ কোটি টাকা। এই অর্থবছরে যা হয়েছে ৯৬৩ কোটি টাকা। ঋণ দেয়া হয়েছে গত অর্থবছরে ৭৭৩ কোটি টাকা। বর্তমান অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকে যা ৬৪০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী জানান, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রেমিটেন্স প্রবৃদ্ধি বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় এক দশমিক ৯৩ শতাংশ কম। গত বছর মোট রেমিটেন্স আহরণ হয়েছে তিন হাজার ৯৩৩ দশমিক ৬৪ কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের এই সময়ে ছিল চার হাজার ১১ দশমিক ১১ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, প্রথম প্রান্তিকে মোট ব্যয় হয়েছে ৩৭ হাজার ১২৪ কোটি টাকা যা বাজেটের ১২ দশমিক ছয় শতাংশ। এর মধ্যে অনুন্নয়নসহ অন্যান্য ব্যয় ২৯ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা যা বাজেটের প্রায় ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় মোট ব্যয় বেড়েছে এক দশমিক ছয় শতাংশ এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ব্যয় ১০ দশমিক চার শতাংশ বেড়েছে। তবে অনুন্নয়নসহ অন্যান্য ব্যয় দশমিক চার শতাংশ কমেছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে সাত হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের হার বাড়ানোর লক্ষ্যে আমরা অর্থনৈতিক সর্ম্পক বিভাগ, দাতা গোষ্ঠী ও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থার মধ্যে কার্যকর সমন্বয় ও বৃহত প্রকল্পগুলোর অগ্রগতির নিয়মিত পরিবীক্ষণের ওপর জোর দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীকে প্রধান করে আটটি বৃহৎ প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পরিবীক্ষণের জন্য একটি ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাছাড়া বৈদেশিক সহায়তা ছাড়ের ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনয়নেও আমাদের প্রচেষ্ট অব্যাহত রয়েছে। মুদ্রা ও ঋণ পরিস্থিতি নিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর শেষে পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক নয় শতাংশ। একই সময়ে সরকারি খাতে নিট ঋণ গ্রহণ হ্রাস পেয়েছে এক দশমিক শতাংশ। অভ্যন্তরীন ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে নয় দশমিক নয় শতাংশ এবং রিজার্ভ মুদ্রার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক দুই শতাংশ।
অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক শেষে সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা হতে সাত হাজার ৪৮ কোটি টাকা ঋণ সংগ্রহ করেছে যা বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার ১৮ দশমিক তিন শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রয়ের পরিমান দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৬৮১ কোটি টাকা যা বাষিক লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৪৫ শতাংশ।
সুদের হার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় উল্লেখ করেন, তফসিলি ব্যাংকসমূহের আমানতের সুদের হার প্রথম প্রান্তিক শেষে ছয় দশমিক সাত শতাংশে নেমে এসেছে, গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ। ব্যাংক ঋণের সুদের হারও গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় কমে ১১ দশমিক পঁচ শতাংশ হয়েছে। আমানত ও ঋণের সুদের হারের ব্যবধান কমে ২০১৫ সালের প্রথম প্রান্তিক শেষে দাড়িয়েছে চার দশমিক আট শতাংশ। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় পর্যাপ্ত তারল্য বিদ্যমান থাকায় কলমানি রেট ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে আট দশমিক ছয় শতাংশ হতে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে শেষে পাঁচ দশমিক সাত শতাংশে নেমে এসেছে।
মূল্যস্ফীতি গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় কমেছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, কৃষিখাতের সন্তোষজনক উৎপাদন আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্য ও জ্বালানী তেলের মূল্য হ্রাস স্বাভাবিক সরবরাহ পরিস্থিতি এবং সরকারের দক্ষ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সতর্কতামূলক মুদ্রানীতি মূল্যস্ফিতি হ্রাসে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। সামনের দিনগুলোতে এই ধারা অব্যহত থাকবে এবং বছর শেষে মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যেই থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বৈদেশিক খাতে রফতানি পরিস্থিতি বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি দশমিক ৮৩ শতাংশ। আমদানি ব্যয় কমেছে আট দশমিক ৫৩ শতাংশ। মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে প্রাথমিক পণ্যর মূল্য হ্রাস পাওয়ায় আমদানি ব্যয় কমেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমান প্রায় ২৬ হাজার ৩৭৯ মিলিয়ন ডলার যা দিয়ে আট দশমিক চার মাসের আমদানি ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব হবে।
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ধারাবাহিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ ধরে অনেক সম্ভাবনাকে সামনে রেখে সূচনা হয়েছে ২০১৫-১৬ অর্থবচর। বছরের শুরু থেকেই সচল আছে অর্থনীতির চাকা সরকারের প্রাজ্ঞ ব্যবস্থাপনায় স্থিতিশীল রয়েছে সামষ্টিক অর্থনীতির সকল খাত, আছে রাজনৈতিক সুস্থিতি। বিদ্যুৎ জ্বালানী ও যোগাযোগ খাতে সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সৃজিত হচ্ছে বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ। সব মিলিয়ে ক্ষুধা দারিদ্রমুক্ত, সুষম, সমৃদ্ধ ও মর্যাদাপূর্ণ বাংলাদেশ গঠনের যে স্বপ্ন রচনা করেছি তা বাস্তবায়নের এখনই অনুকূল সময়।
শেয়ার করুন