ভৈরব নদের সরু দড়াটানা ব্রিজ অপসারণ করে দৃষ্টিনন্দন নতুন প্রশস্ত ব্রিজ নির্মাণ
দেশের যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্র ভৈরব নদের সরু দড়াটানা ব্রিজ অপসারণ করে দৃষ্টিনন্দন নতুন প্রশস্ত ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। তবে প্রচলিত ব্রিজের পরিবর্তে স্টিল স্ট্রাকচারের ব্রিজের সম্ভাবনাকে সামনে রেখে কাজ করছে সড়ক ভবন। নীতিমালা মেনে যথাযথ দৈর্ঘ্য ও উচ্চতা রক্ষা; নদের দুই প্রান্তে পাঁচ সড়কের সংযোগকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হচ্ছে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে।
সওজ যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া ইত্তেফাককে বলেন, ভৈরব নদের দড়াটানা ব্রিজটি অপসারণ করে নতুনভাবে নির্মাণের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এজন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনাও পাঠানো হয়েছে। সড়ক ভবনে নকশা প্রণয়নের কাজ চলছে। যথেষ্ট জায়গা না থাকায় ব্রিজের দুই প্রান্তে উচ্চতা মেলানোটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে। ব্রিজকে ঘিরে অনেকগুলো সড়ক এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও রয়েছে। রয়েছে উচ্চতার নীতিমালা। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে স্ট্রিল স্টাকচারের নান্দনিক একটা ব্রিজ তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে। কারণ এতে উচ্চতা এক মিটার কমানো সম্ভব বলে দৈর্ঘ্যেও বিশেষ সুবিধা পাওয়া যাবে।
সূত্র জানায়, যশোরের প্রাণ ভৈরব নদ হত্যায় ভূমিকা রেখে চলেছে অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা ৫১টি ব্রিজ-কালভার্ট। এর মধ্যে যশোর সদরের ৩৪টি, চৌগাছা উপজেলায় ১৬টি এবং ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় একটি। এসব ব্রিজের মধ্যে এলজিইডির ২৩টি, সড়ক ও জনপথ বিভাগের চারটি, রেলওয়ের একটি, বিএডিসির তিনটি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের একটি, ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখার ১৯টি ব্রিজ রয়েছে। বর্তমান ম্যাপ অনুযায়ী নদের প্রস্থ শহরে ১৫০ মিটার এবং শহরের বাইরে ৩০০ মিটার রয়েছে। কিন্তু ব্রিজ-কালভার্ট করা হয়েছে ১২ থেকে ৭০ মিটার। এসব ব্রিজের কারণে পানিপ্রবাহে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। শহরের প্রাণকেন্দ্রে দড়াটানা ব্রিজও ভৈরবের গলার কাঁটা। মাত্র ২০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই ব্রিজটি অপসারণ করে নতুন ব্রিজ নির্মাণ করা নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। কেমন হবে দড়াটানার নতুন ব্রিজ; তা নিয়ে যশোরবাসীর আগ্রহের কমতি নেই। তবে নাগরিকদের সর্বোচ্চ সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে ব্রিজ নির্মাণে উদ্যোগী হচ্ছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
একটি সূত্র জানিয়েছে, দড়াটানায় ভৈরব নদের ওপর এখন মাত্র ২০ মিটার দৈর্ঘ্যের ব্রিজ রয়েছে। সেটি ভেঙে নির্মাণ করা হবে ৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের ব্রিজ। ব্রিজ নির্মাণে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নীতিমালা মেনে ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হবে। নীতিমালা অনুযায়ী ব্রিজের নির্ধারিত উচ্চতা রয়েছে। কিন্তু সেই উচ্চতায় সেতু নির্মাণ করতে হলে দুই প্রান্তে যে পরিমাণ জমি প্রয়োজন, তা নেই সওজের। ব্রিজের একপাশে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল রয়েছে, হাসপাতালের সামনে দিয়ে একটি সড়ক চলে গেছে। এই প্রান্তে মূল সড়কটি জেল রোড হয়ে খাজুরা বাসস্ট্যান্ডের দিকে গেছে। ব্রিজের অন্য পাশে একটি সড়ক গেছে বঙ্গবন্ধু ম্যুরালের দিকে, আরেকটি মুজিব সড়ক হয়ে চাঁচড়ার দিকে এবং অন্যটি গাড়িখানা সড়ক হয়ে চৌরাস্তার দিকে। ফলে নকশার সময় ব্রিজের দুই প্রান্তের এই পাঁচটি সড়কের কথা বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে। আবার দুই প্রান্তের পরিসর কম হলেও ন্যূনতম ৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের ব্রিজটির উচ্চতার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে। অর্থাত্ এক প্রান্তের ভূমি থেকে সর্বোচ্চ উচ্চতায় তুলে অন্য প্রান্তের ভূমিতে মিলিত হতে হবে। মৌলিক এই দুটি বিষয়ের পাশাপাশি শহরের প্রাণকেন্দ্রের এই ব্রিজটি দৃষ্টিনন্দন করার কথাও গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হচ্ছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া জানান, ভৈরব নদের দড়াটানা অংশে যে জায়গা রয়েছে, তাতে ব্রিজের কাজে তেমন একটা সমস্যা হবে না। তবে হাসপাতালে প্রান্তে জায়গা অনেক কম। সেখানে কিছু অধিগ্রহণ প্রয়োজন হবে। জনগুরুত্বসহ সবকিছু বিচার বিবেচনা করেই দড়াটানা সেতুটি নির্মাণ করা হবে বলে জানান তিনি।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন