রিশাদের দাপটে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানো জয়
সবই ছিল বিপক্ষে। প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ তো বটেই, ওয়ানডেতে নিজেদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স, যে মাঠে দুই বছর পর ওয়ানডে খেলতে নামল বাংলাদেশ দল, সেই মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সর্বশেষ ওয়ানডে স্মৃতিও। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২-০–তে সিরিজ হারের পর আজই আবার প্রথম মিরপুরে ওয়ানডে খেলল বাংলাদেশ এবং জিতল।
কাটা ঘাস ছিটানোর ‘বিজ্ঞান’ থেকে বেরিয়ে দীর্ঘদিন পর মিরপুরের উইকেট পুরোনো রূপে ফিরেছে। ঘাসবিহীন কালো মাটির উইকেটে বাংলাদেশ ২০৭ রান করে ফেলার পর সম্ভাব্য ফলাফলের আলোচনায় প্রেসবক্সে বাংলাদেশের ব্যালটেই ভোট পড়ল বেশি। ৫০ ওভার খেলতে না পারার ধারাবাহিকতা ধরে রেখে তারা ৪৯.৪ ওভারে অলআউট হলেও এই উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০৭ রান তাড়া করে জিততে পারবে না বলে মনে করছিল প্রেসবক্সের বড় অংশ।
শেষ পর্যন্ত সেটিই সত্যি হয়েছে। রিশাদ হোসেনের লেগ স্পিনে বিভ্রান্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৯২ রানেই হারিয়ে ফেলে ৫ উইকেট। প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানকেই ফিরিয়ে রিশাদই জয়ের ভীত গড়েছেন। ইনিংসের ৩৯তম ওভারের শেষ বলে জেইডেন সিলসকে গুগলিতে স্লিপে মেহেদী হাসান মিরাজের ক্যাচ বানিয়ে রিশাদই দিয়েছেন ফিনিশিং টাচ। ৩৫ রানে ৬ উইকেট, ওয়ানডেতে এই প্রথম এক ম্যাচে ২ উইকেটের বেশি পেলেন রিশাদ। বাংলাদেশের স্পিনারদের মধ্যেও ওয়ানডেতে এটিই প্রথম ৬ উইকেট পাওয়ার রেকর্ডও গড়লেন। রিশাদের সৌজন্যেই ৭৪ রানের জয় দিয়ে শুরু হলো বাংলাদেশের সিরিজ।
জয়ের পর মাঠ ছাড়ছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা
জয়ের পর মাঠ ছাড়ছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাপ্রথম আলো
পেসার তাসকিন আহমেদ ও বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলামের করা ইনিংসের প্রথম দুই ওভার গেছে মেডেন। তাসকিন বাউন্স পেয়েছেন, ভালো লেংথে বল ফেললে খেলা কঠিন হবে বলে মনে হচ্ছিল তাঁর সামনে ক্যারিবীয় ওপেনার ব্রেন্ডন কিংয়ের অস্বস্তি দেখে। তানভীরের করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভার ইঙ্গিত দিল, মিরপুরের উইকেটে উৎসব হতে পারে স্পিনারদের। তবে তাসকিন পরের ওভারে এক ছক্কা আর এক চার খেয়ে কিংকেই দিয়েছেন ১০ রান। চতুর্থ ওভারে তানভীর তো আরও খরুচে! ১৮ রান দিয়েছেন, দুই ছক্কা আর দুই চারে ১৮-ই অ্যাথানেজের।
সরাসরি: বাংলাদেশ–ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ওয়ানডে
মিরপুরের উইকেট এরপর বাংলাদেশের বোলারদের এমনই বন্ধু হয়ে উঠল যে পঞ্চম ওভারে মোস্তাফিজুর রহমানকে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে কিংয়ের বাউন্ডারির পর আবার বাউন্ডারি পেতে ক্যারিবীয়দের অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে ১৩তম ওভার পর্যন্ত। তার আগের ওভারের শেষ বলে অবশ্য অ্যাথানেজেকে এলবিডব্লু করে ফেরান রিশাদ। ২০তম ওভারে কিসি কার্টি, ২২তম ওভারে কিং ও শেরফান রাদারফোর্ড এবং ২৪তম ওভারে রোস্টন চেজের উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য ২০৭ রানের লক্ষ্যটাকে অনেক বড় বানিয়ে দেন রিশাদই।
বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৫১ রান করেছেন তাওহিদ হৃদয়
বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৫১ রান করেছেন তাওহিদ হৃদয়প্রথম আলো
ব্যাটিংয়ের শুরুতে ভুগেছে বাংলাদেশও। দলের ৮ রানের মধ্যে দুই ওপেনার সাইফ হাসান ও সৌম্য সরকারকে হারানোটা বড় হয়ে ওঠেনি তৃতীয় উইকেটে নাজমুল হোসেন-তাওহিদ হৃদয়ের ১২২ বলে ৭১ রানের জুটির সৌজন্যে। মিরপুরের উইকেটে সংগ্রাম করতে হয়েছে দুই দলের সব ব্যাটসম্যানকেই। নাজমুল-হৃদয়ের ধীরলয়ের ব্যাটিংটাকে তাই সময়ের দাবি বলেই মনে হয়েছে।
রিশাদ বল ঘুরালেন, ঘুরিয়ে দিলেন ম্যাচও
১ ঘণ্টা আগে
রিশাদ বল ঘুরালেন, ঘুরিয়ে দিলেন ম্যাচও
উইকেটে বেশ টার্ন পাচ্ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ স্পিনাররাও, কিছু বল নিচুও হয়ে এসেছে। পরিণতি—২১.৫ ওভার থেকে ৩৫.৩ ওভার পর্যন্ত ৮২ বলে একটিও বাউন্ডারি পায়নি বাংলাদেশ। এর মধ্যে নাজমুল ও হৃদয় দুজনেরই বিদায় ঘটে। ২৩তম ওভারে দলের ৮১ রানে খ্যারি পিয়েরের বলে রিভিউতে এলবিডব্লু নাজমুল (৬৩ বলে ৩২)। ৮৭ বলে ওয়ানডেতে নিজের ১১তম ফিফটি করা হৃদয় (৯০ বলে ৫১) ফেরেন গ্রিভসের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে কাট করতে গিয়ে হোপের ক্যাচ হয়ে। আম্পায়ার প্রথমে আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে আবারও সফল ক্যারিবীয় অধিনায়ক হোপ।
ওয়ানডে অভিষেকে ৪ রানের জন্য ফিফটি পাননি মাহিদুল ইসলাম
ওয়ানডে অভিষেকে ৪ রানের জন্য ফিফটি পাননি মাহিদুল ইসলামপ্রথম আলো
এ ম্যাচে আলাদা করে বলতে হয় অভিষিক্ত মাহিদুল ইসলামের কথা। মিডল অর্ডারের ভগ্নদশা ঘোচাতে নির্বাচকেরা যে আশা নিয়ে তাঁকে দলে ডেকেছেন, সেটির কিছুটা প্রতিদান ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডেতেই দিয়েছেন ২৬ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। ৪ রানের জন্য ফিফটি না পেলেও নাজমুল, হৃদয়ের পর তাঁর ৭৬ বলে ৪৬ রানই টেনেছে বাংলাদেশকে। মাহিদুলের ইনিংসে বাউন্ডারি ৩টি, গুড়াকেশ মোতির করা ৩৬তম ওভারে যার প্রথমটি ভেঙেছে টানা ৮২ বলে বাউন্ডারি না পাওয়ার বন্ধ্যত্ব। শেষ দিকে ২ ছক্কা আর এক চারে রিশাদের ১৩ বলে ২৬ রান বাংলাদেশকে দেখায় দুই শর পথ।
এরপর বল হাতেও তাঁর দাপট। ওয়ানডেতে টানা ৪ ম্যাচ হারার পর রিশাদের হাত ধরেই ঘুরে দাঁড়াল বাংলাদেশ।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন