পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবার পরে রিনিউ... জরিমানা দিতে হবে?
মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট এর কিন্তু রিনিউ হয় না, নতুন করে নতুন পাসপোর্ট দেয়া হয়।
দেশের
বাইরে যেতে চাইলে পাসপোর্ট ছাড়া গতি নেই। সেটা হতে পারে হজ্জ, ঘুরতে
যাওয়া, চিকিৎসা, শিক্ষা বা অনেক কিছুই। আবার অনেকে একবার ভ্রমণ করে
পাসপোর্ট সেই যে আলমিরাতে তুলে রাখেন, ভুলেই যান যে তার একটা পাসপোর্ট আছে।
এর পরে যখন দরকার হয়, তখন দেখা যায়, সেটার মেয়াদ শেষ, করাতে হবে রিনিউ।
আর মেয়াদ শেষ হলে তার জন্য দিতে হবে জরিমানা।
পাসপোর্ট রিনিউ করানো কঠিন বিষয় নয়। পাসপোর্ট করাবার সময় যে পদ্ধতিতে করানো হয়েছিল, সেটাই কমবেশি অনুসরণ করলেই কাজ হয়ে যাবে।
তবে একটা মজার কথা জেনে রাখুন, আগের হাতে লেখা পাসপোর্ট রিনিউ করা গেলেও, নতুন এম আর পি বা মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট এর রিনিউ হয় না।
আপনাকে সরাসরি নতুন একটি পাসপোর্ট ধরিয়ে দেয়া হয় আগের টার সাথে। রিনিউ
করার সময় আগের নিয়মেই সাধারণ হলে ৩০০০ + ১৫% ভ্যাট = ৩৪৫০ টাকা ও জরুরী
হলে ৬০০০ + ১৫% ভ্যাট = ৬৯০০ টাকা জমা দিতে হবে। পাসপোর্ট এর জন্য সোনালি
ব্যাংকসহ বেশ কিছু ব্যাংক এ টাকা জমা নেয়, তবে যারা করিয়েছেন তারা জানান,
ট্রাস্ট ব্যাংকে ভিড় কম হয় বলে সেখানে দেয়াটা সুবিধাজনক।
ট্রাস্ট ব্যাংক ছাড়াও অনলাইনে করতে যেতে
পারেন ওয়ান ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও ঢাকা ব্যাংক।
সোনালি ব্যাংক থেকে আগের মত করে হাতে হাতেও জমা দিতে পারবেন।
যেহেতু এম আর পি এর রিনিউ হয় না, নতুন
পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়, তাই সেখানে গিয়ে রিনিউ এর জন্য টাকা জমা দিতে
গেলে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। কেবল বলতে হবে পাসপোর্ট ফী। যে রশিদটা
দেবে, সেটা যত্ন করে রাখতে হবে, হারিয়ে গেলে আবার টাকা জমা দিতে হবে।
রিনিউ করার জন্য যেসকল সাপোর্টিভ ডকুমেন্টস প্রয়োজন হবে:
নতুন করে পাসপোর্ট করতে ব্যাংকে টাকা জমা দেয়া এবং নির্ধারিত ফর্ম পূরণের পর ওই ফর্মের সাথে কিছু ডকুমেন্টস বা পেপার জমা দিতে হয়।
* পুরনো পাসপোর্ট এবং এর সত্যায়িত কপি
* জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা জন্ম
নিবন্ধন (BIRTH CERTIFICATE) -এর সত্যায়িত কপি (আগেরবার পাসপোর্ট করাবার
সময় যেটা দিয়েছেন, সেটা হলে ভাল হয়।)
* ছবির কোন প্রয়োজন হয় না, তবে যদি তারা চায়, তাই সাথেই রাখুন কয়েক কপি।
* এছাড়াও যদি কোন ধরনের সংশোধনী থাকে
তবে যে ধরনের সংশোধন আপনি করতে চাচ্ছেন তার প্রমাণস্বরূপ ডকুমেন্টস সাথে
দিতে হবে। (যেমন, নাম সংশোধন করতে চাইলে একাডেমিক সার্টিফিকেট এবং জাতীয়
পরিচয় ইত্যাদি)
* এর পরে Re-Issue ফর্ম সংগ্রহ করতে হবে, যেটা পাওয়া যায় কেবলমাত্র ছয় তলায়।
কীভাবে বানানো হয় মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট।
এবারে আসুন প্রসেস নিয়ে কথা বলা যাক: এই অভিজ্ঞতা ও গাইডলাইন সবচেয়ে বেশি কাজে লাগবে পাসপোর্ট এর আগারগাঁও অফিসের জন্য।
আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের ছয় তলায়
পাওয়া যায় "Re-issue" ফরম। যেহেতু নতুন পাসপোর্ট পাবেন, কোন তথ্য আপডেট
করাতে হলে এটা একটা চমৎকার ঝামেলা-মুক্ত সুযোগ। এই ফরমেই যা যা তথ্য
পরিবর্তন করতে চান সেগুলো লিখতে হবে। পরিবর্তন করার কিছু না থাকলে শুধু
"এক্সটেন্ড ভ্যালিডিটি" লিখে দেবেন। নাম, জন্মতারিখ, বর্তমান / স্থায়ী
ঠিকানা বাদে আর সবই পরিবর্তন করতে পারবেন, এমনকি নিজের ছবিও।
কোন পরিবর্তন না থাকলে আগের এম আর পি-এর
তথ্যই নতুন পাসপোর্টে চলে আসবে। ন্যাশনাল আইডি অথবা নতুন ১৭ ডিজিট বার্থ
সার্টিফিকেট, যেটাই দেন, তার সত্যায়িত ফটোকপি লাগবে। বর্তমান এম আর পি এর
সত্যায়িত ফটোকপি দিতে হবে। বর্তমান অরিজিনাল পাসপোর্ট অবশ্যই সাথে করে
নিয়ে যাবেন, ওটার কভার পেজ ছিদ্র করে আপনাকে ফেরত দিয়ে দেবে।
যেখানে যেখানে যাবেন:
প্রথমেই আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের গেটে লাইন দিয়ে ঢুকতে হবে, সেখানে আর্মি
পারসন আপনার ফরমে সিল মেরে ৩০৪ নম্বর রুমে যেতে বলবে। যেহেতু আপনি রিনিউ
করাবেন, আপনি ৩০৪ রুমের লাইনে দাড়িয়ে সময় নষ্ট করবেন না, এই লাইন
একেবারে নতুনদের জন্য।
সোজা
৬ তলায় গিয়ে রি-ইস্যু ফরম নিয়ে আসুন, পূরণ করে ৩০৩ নম্বর রুমে চলে যান
তৃতীয় তলায়। ওখানে "রি-ইস্যু" ফরম এ্যাপ্রোভ করে দেবে, পুরানো পাসপোর্টের
কভার ছিদ্র করে আপনাকে ফেরত দেবে। এবার আপনাকে ছবি তোলার লাইনে দাঁড়াতে
হবে ৪ তলায়; যদিও আপনার ছবি তোলা লাগবে না, তারপরেও ঘণ্টা দু'য়েক এই
লাইনে থাকতেই হবে। সরাসরি ৪ তলায় গেলেও আবার হবে না, নিচ তলায় গিয়ে ১০২
নম্বর গেট থেকে ফরমে সিল নিয়ে তারপরে ৪ তলায় যেতে হবে।
ছবি তোলার সিরিয়াল নেয়ার সময় বলবেন
"রি-ইস্যু", এতে করে "রি-ইস্যু" এর জন্য সিরিয়াল দেবে আপনাকে। ছবি তোলার
রুমে ঢুকলে আপনার "রি-ইস্যু" ফরম দেখে ডাটাবেজ আপডেট করে দেবে, প্রিন্ট
দিয়ে দিবে। ওখানে সব বানান মিলিয়ে দেখবেন ঠিক আছে কিনা। এমন কোন তথ্য যদি
মনে পড়ে "রি-ইস্যু" ফরমে লিখতে ভুলে গেছেন, হতাশ হবেন না, আবার ৬ তলায়
চলে যান, আরেকটা রি-ইস্যু ফরম নিয়ে ওখান থেকেই আপডেট করিয়ে নিন ডাটাবেজ।
মনে রাখবেন, এম আর পি-তে একটা
দাঁড়ি-কমাও সংশোধন করা যায়না, সেটা করতে হলেও সম্পূর্ণ প্রসেস আবার প্রথম
থেকে করে আসতে হবে। কাজেই তথ্যগুলো বার বার চেক করে দেখবেন যেন কোন ভুল না
থাকে।
ফর্ম ফিলআপ এর বিষয়টি এখান থেকে জেনে নিতে পারেন ডিটেলে।
নতুন পাসপোর্ট হাতে কীভাবে পাবেন:
আগারগাঁও অফিসে পাসপোর্ট জমা দেয়ার ২১
দিন পর সাধারণত নতুন পাসপোর্ট ডেলিভারি করে। এই সময়ের মধ্যে 6969 এ আপনার
স্লিপ নম্বরটা এসএমএস করে জানা যাবে পাসপোর্ট এখন কি অবস্থায় আছে এবং কবে
পাওয়া যাবে। আপনি চাইলে পাসপোর্ট হয়েছে কি না সেটা জানার জন্য স্লিপে
লেখা পদ্ধতিতে 6969 নম্বরে এস এম এস পাঠাতে পারেন। সেখানে আপনি আপনার
পাসপোর্ট এর অগ্রগতি দেখতে পারবেন।
সবশেষে, পাসপোর্ট সংগ্রহ করার জন্য
নির্দিষ্ট তারিখ জানিয়ে কনফার্মেশন ম্যাসেজ পাওয়ার পর পাসপোর্ট অফিসে
গিয়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে হয়। এসময় ২০১ নাম্বার রুমে গিয়ে যেই স্লিপ
দিয়েছিল, সেটি জমা দিতে হয়। যদি মোবাইলে পাসপোর্ট অফিস থেকে ম্যাসেজ
গিয়ে থাকে তাহলে একটু অপেক্ষা করলেই পাওয়া যাবে।
বি:দ্র: অনেক সময় স্লিপে দেয়া ডেলিভারি
ডেটে অনেকেই পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দাড়িয়ে থাকেন পাসপোর্ট সংগ্রহের জন্য।
কিন্তু প্রায় সময়ই তাদের শূন্য হাতেই বাড়ি ফিরতে হয়। তাই মোবাইল ফোনে
ম্যাসেজ পাওয়ার পরেই পাসপোর্ট অফিসে যেতে হয়। এছাড়াও মেয়াদ শেষ হওয়ার
কিছু দিন আগেই প্রসেস শুরু করা উচিৎ।
জরিমানা: আপনার
পাসপোর্ট এর মেয়াদ শেষ হয়ে যাবার পরে যদি আপনি সেটা রিনিউ করাতে নিয়ে
যান, প্রথম বছরে ৩৪৫ টাকা জরিমানা দিতে হবে, এবং এর পরে প্রতি বছরে ৩৪৫
টাকা করে যোগ হতে থাকবে।
মনে করুন, আপনার পাসপোর্ট পাঁচ বছর আগে
মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে সেটার জন্য জরিমানা দিতে হবে ৫ * ৩৪৫ = ১,৭২৫ টাকা।
যত বছর যাবে, পরিমাণ বাড়তে থাকবে। সুতরাং সময় মত পাসপোর্ট রিনিউ করিয়ে
নিন, ঝামেলা-মুক্ত থাকুন।
শেয়ার করুন