মলদোভায় রাশিয়ার অভ্যুত্থান চেষ্টা
ইউরোপের অন্যতম গরিব দেশ মলদোভাকে ইউক্রেনের সাথে বন্ধুত্ব রক্ষার বড় খেসারত দিতে হচ্ছে। দেশটির বর্তমান ইইউপন্থি সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের চক্রান্ত করছে রাশিয়া। মিউনিখে অনুষ্ঠিত নিরাপত্তা সম্মেলনে ১৭ ফেব্রুয়ারি এমনটাই অভিযোগ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মাইয়া সান্দু।
ইউক্রেন ও রোমানিয়ার প্রতিবেশী দেশটিতে কয়েক দিন ধরেই রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। মূল্যস্ফীতি ও বিভিন্ন চাপে পড়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারি মলদোভার প্রধানমন্ত্রী তার পুরো মন্ত্রিসভা নিয়ে পদত্যাগ করেন। এরপর দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দোরিন রেচানকে বেছে নেন মাইয়া সান্দু। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘তথাকথিত বিরোধীরা বিক্ষোভ আয়োজনের মাধ্যমে ওই চক্রান্তে জড়িত হয়েছে। তারা সাংবিধানিক সরকারকে উৎখাত করতে চায়।’
মলদোভার প্রেসিডেন্টের এই অভিযোগের পর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন মিউনিখে নিরাপত্তা সম্মেলনের ফাঁকে মলদোভার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের পর তিনি জানিয়েছেন তারা ‘ভীষণ উদ্বিগ্ন।’ এ ব্যাপারে ব্লিঙ্কেন বলেছেন, মলদোভার নিরাপত্তা, স্বাধীনতা, অখণ্ডতা নিশ্চিতে প্রেসিডেন্ট এবং সরকার যে চেষ্টা চালাচ্ছে সেগুলোর প্রতি আমরা শক্তিশালী সমর্থন জানাচ্ছি।’
হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জন কির্বিও বিষয়টি গভীরভাবে উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন। রাশিয়ার অভ্যুত্থানের চেষ্টা হলে, সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র চুপ করে বসে থাকবে না বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি। সেই সঙ্গে মলদোভার সরকার এবং জনগণের পাশে থাকারও বার্তা দিয়েছেন হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র।
প্রেসিডেন্ট সান্দু অভিযোগ করেন, রাশিয়া ‘সেনাবাহিনীতে কাজ করছে এমন ব্যক্তিদের নাশকতায় ব্যবহারে পরিকল্পনা করেছে। তারা বেসামরিক পোশাক পরে ছদ্মবেশে হিংসাত্মক পদক্ষেপ নেওয়ার এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর আক্রমণ ও জিম্মি করার চক্রান্ত করেছে।’ রাশিয়ার ওই চক্রান্তে মন্টেনেগ্রো, বেলারুশ ও সার্বিয়ার নাগরিকরাও জড়িত আছেন। তারা মলদোভায় প্রবেশ করে নাশকতার পরিকল্পনা করেছে।
এর আগে গত সপ্তাহে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছিলেন, মলদোভাকে ধ্বংসের পরিকল্পনা করেছে রাশিয়া। কিয়েভের গোয়েন্দা সংস্থা এ তথ্য পেয়েছে। সরকারি ভবনে হামলা এবং মলদোভার বর্তমান সরকারের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে বন্দি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। সেই সঙ্গে অন্তর্ঘাতমূলক কাজ এবং বেসামরিক লোকের ছদ্মবেশে সামরিক ব্যক্তির ওপর হামলারও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানান। এর পরেই সামরিক অভ্যুত্থানের আশঙ্কা করে বিবৃতি দেন মলদোভার প্রেসিডেন্ট মাইয়া সান্দু।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর সে দেশ থেকে প্রচুর মানুষ প্রাণ বাঁচাতে মলদোভায় আশ্রয় নিয়েছে। মাত্র ২৬ লাখ জনসংখ্যার পূর্ব ইউরোপের ছোট্ট দেশটি গত গ্রীষ্মে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার আবেদন করে।
মস্কোপন্থি অঞ্চল ত্রান্সনিসত্রিয়া নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছে সান্দু সরকার। যেখানে প্রায় দেড় হাজার রুশ সেনা ঘাঁটি গেড়েছে।
যদিও মলদোভার প্রেসিডেন্টের এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়া। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মারিয়া যাখারোভা বলেন, এ দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ মলদোভা দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া দেশটির জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা শুরু করলে তার প্রভাব মলদোভাতেও পড়ে। ইউক্রেনের মতো মলদোভাতেও লোডশেডিং দেখা দেয়।
মিউনিখে শুরু হওয়া তিন দিনের নিরাপত্তা সম্মেলনের প্রথম দিন শুক্রবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়া একটি নতুন আক্রমণের পরিকল্পনা করছে। ইউক্রেনে হামলা চালাতে নতুন নতুন পরিকল্পনা করছে তারা। তাদের হামলায় জরুরি অবকাঠামোর পাশাপাশি বেসামরিক স্থাপনা শেষ হয়ে যাচ্ছে। রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে বিজয় অর্জনের জন্য দ্রুত আরও অস্ত্র পাঠাতে পশ্চিমাদের প্রতি আহ্বান জানান জেলেনস্কি। রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের সমর্থনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে জেলেনস্কি বলেন, যা করার আমাদের দ্রুত করতে হবে। রাশিয়াকে থামাতে আমাদের সামরিক গতির দরকার, কারণ এর ওপর নির্ভর করছে আমাদের জীবন। ভাষণে তিনি আরও যোগ করেন, বিলম্ব সব সময়ই হচ্ছে, যা বড় ধরনের ভুল।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন