দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার হোম ডিপো থেকে কোটি ডলারের পণ্য চুরি, ১৪ জন গ্রেপ্তার
পুতিনের সমালোচক সের্গেই লুকাশেভস্কির হাতে জার্মান মানবাধিকার পুরস্কার
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচক সের্গেই লুকাশেভস্কি জার্মান মানবাধিকার পুরস্কার পেয়েছেন। ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর সপরিবারে দেশ ছাড়েন সেরগেই। দীর্ঘ দিন দেশে তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়েছেন।
মস্কোয় থাকাকালীন লুকাশেভস্কি একটানা ১৪ বছর মস্কোর সাখারভ সেন্টারের প্রধান ছিলেন তিনি। এই শাখারভ সেন্টার রাশিয়ার সবচেয়ে বিখ্যাত মানবাধিকার সংগঠন।
সোভিয়েত আমলের নাগরিক অধিকার কর্মী আন্দ্রেই শাখারভের নামে এই সংগঠনের নাম। দীর্ঘ দিন ধরে এই সংগঠনটি বর্তমান রুশ নেতৃত্বের সমালোচনা করে। ২০১২ সালে পুটিন সরকার তাদের ‘বিদেশি এজেন্ট' ঘোষণা করলে ২০২৩ সালে অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে যায় সংগঠনটির কাজ।
মুক্ত রাশিয়ার জন্য ‘রেডিও সাখারভ'
হাজার হাজার রাশিয়ান বুদ্ধিজীবীদের মতোই সের্গেই এখন বার্লিনের বাসিন্দা। ৪৮ বছর বয়সী এই ইতিহাসবিদ বলেন, ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারির পর প্রথম কয়েক মাস আমরা থ মেরে যাই। কিন্তু তারপর ঘুরে দাঁড়ান তিনি।
গবেষণা সংস্থা কারেক্টিভের সহায়তায় সহকারীদের সাথে মিলে নির্বাসনেই শুরু করেন রেডিও শাখারভ, একটি রেডিও ও পডকাস্ট মাধ্যম। মূল শাখারভ সেন্টারের আদর্শে গড়া এই রেডিও শাখারভকে সেরগেই চান বৈশ্বিক তথ্য আদানপ্রদানের নির্ভরযোগ্য মাধ্যম করে তোলা, যা পুতিন-পরবর্তী রাশিয়াকে নতুন করে গড়তে সাহায্য করবে।
তার এই কাজের প্রতি সম্মান হিসাবেই তিনি পেলেন ২০২৪ সালের মানবাধিকার পুরস্কার। পুরস্কার দেওয়া হয় ২৮ জানুয়ারি ড্যুসেলডর্ফে। দশ হাজার ইউরো অর্থ মূল্যের এই পুরস্কার চালু করেন হাঙ্গেরিতে জন্মানো সংগীত পরিচালক অ্যাডাম ফিশার, যিনি নিজের জীবনেও স্বৈরাচারকে কাছ থেকে দেখেছেন। ফিশারের পূর্ব প্রজন্ম হলোকস্টে মারা যান।
পুরস্কার দানের মুহূর্তে ফিশার বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বে যেভাবে যুদ্ধ ও সংঘর্ষ চলছে, তা সে রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসন হোক বা হামাসের ইসরায়েল হামলার পর গাজায় চরম সহিংসতা, সেই পরিস্থিতিতে মানবাধিকারকে শুধু রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার করলে চলবে না। যদিও নিরপেক্ষ থাকা কঠিন, তাও আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে মানবাধিকারই শেষ কথা।
লুকাশেভস্কি ও তার সহকর্মীদের জন্য, এই পুরস্কারের মূল্য অনেক। জার্মান সমাজে যে সমর্থন রয়েছে, তার সাহায্যে রাশিয়ার গণতন্ত্রপন্থি কন্ঠকেও আজ চিনতে পারছে বিশ্ব।
লুকাশেভস্কি বলেন, পশ্চিম ইউরোপের টিকে থাকার জন্যেও এই উপলব্ধি খুব গুরুত্বপূর্ণ। তিনি নিশ্চিত, পুতিনের শাসন আর খুব বেশি দিন চলবে না। এই সরকারের পতন হবেই। আমরা জানিনা তা ঠিক কখন হবে, কিন্তু সেটা হবেই, মত সের্গেইয়ের।
একজন ইতিহাসবিদ হিসেবে তিনি ভাবিত পুতিন-পরবর্তী রাশিয়া নিয়ে। কেমন হবে সেই দেশ?
সের্গেইয়ের মতে, রাশিয়ায় পুতিনবিরোধী অনেকেই, এবং সবাই নীরব নন, তার মতো সমালোচকও আছেন। রাশিয়ার সঙ্গে ইউরোপের সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাশিয়ায় যাই হোক না কেন, রাশিয়াও ইউরোপের অংশ। পশ্চিমা দেশগুলির এটাও জানা উচিত যে রাশিয়া মানেই শুধু পুতিন ও তার ঘনিষ্ঠ মহল নয়, এবং এটা রাশিয়ার ভবিষ্যতের জন্য অর্থবহ।
রাশিয়ার কেন্দ্রীয় টিভি চ্যানেলের একটি সমীক্ষা বলছে, রাশিয়ার ১২ শতাংশ মানুষ ইউক্রেনের যে যুদ্ধকে পুতিন ‘বিশেষ সামরিক অভিযান' বলছেন, তাকে সমর্থন করেননা।
লুকামেভস্কি বলেন, ১৪ কোটির জনসংখ্যার দেশে এমন সাহসী মানুষদের সংখ্যা কয়েক লাখ। তার এই পুরস্কার একই সঙ্গে মুক্তভাবে নিজের কথা বলতে চেয়ে জীবন দেওয়া মানুষদেরও, বলেন তিনি।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন