আপডেট :

        হোয়াইট হাউসের একাংশ ভেঙে ফেলছেন ট্রাম্প

        LAX-এর টার্মিনাল ৫-এ পরিবর্তন, ২০২৮ অলিম্পিকের জন্য সংস্কার শুরু

        ক্যালিফোর্নিয়ার কম্পটনে নারী ক্রেতার গুলিতে দোকানে এক ব্যক্তি নিহত

        মাত্র ২৯ বছর বয়সে প্রয়াত আমেরিকান দাবা গ্র্যান্ডমাস্টার ড্যানিয়েল নারডিটস্কি

        ইসরায়েল সফরে ভ্যান্স, যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্বেগ

        আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য ‘তৃতীয় নিরাপদ দেশ’ হিসেবে কাজ করতে সম্মত হলো বেলিজ

        চীনের আধিপত্য রুখতে বিরল খনিজ সরবরাহে যুক্তরাষ্ট্র–অস্ট্রেলিয়া ঐতিহাসিক চুক্তি

        চোখে মাইক্রোচিপ বসিয়ে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাচ্ছেন দৃষ্টিহীনেরা

        প্রথম ম্যাচে জয়ের পরও ফাঁকা মিরপুরের গ্যালারি

        ১০ মাসেও জুটেনি নতুন বই, বিপাকে ৫৪ শিক্ষার্থী

        পাকিস্তান-আফগানিস্তানের অস্ত্রবিরতি টিকবে?

        বাংলাদেশের আকাশে উল্কাপাত দেখা যাবে মঙ্গলবার রাতে

        দেব-রুক্মিণীর ‘বিচ্ছেদ’ নিয়ে ফের গুঞ্জন

        পিআর পদ্ধতির নামে নির্বাচন ‘ভণ্ডুলের ষড়যন্ত্র চলছে’

        সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করবেন বিএনপি মহাসচিব

        আইএমএফের কঠোর শর্ত: নির্বাচিত সরকার ছাড়া ঋণের অর্থ নয়

        সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা দায়েরের নির্দেশ

        রোনালদোর স্বপ্নপূরণের পথে আরও এক ধাপ এগোলেন তার ছেলে

        ইংল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাড়ছে টিউশন ফি

        বর্ষা নিজেই গলায় কোপ দেয় জুবায়েদকে

উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ রোধে ধর্ম চর্চা বাড়াতে হবে : লস এঞ্জেলেসে বড়দিন উৎসবে কন্সাল জেনারেল

উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ রোধে ধর্ম চর্চা বাড়াতে হবে : লস এঞ্জেলেসে বড়দিন উৎসবে কন্সাল জেনারেল

যথাযথ মরযাদা ও ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্যে লস এঞ্জেলেসে খৃষ্টান ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড়ো ধর্মীয় উৎসব বড়দিন পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে  আনন্দময় এক আয়োজন করে বাংলাদেশী খৃষ্টান ফেলোশীপ অব ক্যালিফোর্নিয়া (বিসিএফসি)। ২৫শে ডিসেম্বর বিকেলে ট্রিনিটি ইপিস্কোপ্যাল চার্চে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

প্রতি বছর বড়দিন উৎসব উপলক্ষে খ্রিষ্টানদের ঘরে ঘরে বয় আনন্দধারা। বহুবর্ণ আলোকসজ্জায় সাজানো হয় চার্চ ও ঘরসহ নানা স্থাপনা। সাজানো হয় গোশালা ও ক্রিসমাস ট্রি। পাপীকে নয়, ঘৃণা করো পাপকে- এই আহ্বান নিয়ে যিশুখ্রিষ্ট এদিন আসেন এই পৃথিবীতে। তাই খ্রিষ্টান সমপ্রদায় নানা আনুষ্ঠানিকতায় পালন করেন এই উৎসব। ধর্মীয় গান, কীর্তন, অতিথি আপ্যায়ন আর পরমানন্দে দিনটি উদযাপিত হয়।

খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, ঈশ্বরের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য একজন নারীর প্রয়োজন ছিল। সেই নারীই কুমারী মেরি-মুসলমানদের কাছে যিনি পরিচিত বিবি মরিয়ম হিসেবে। ধর্ম বিশ্বাস বলে, ‘ঈশ্বরের অনুগ্রহে ও অলৌকিক ক্ষমতায়’ মেরি কুমারী হওয়া সত্ত্বেও গর্ভবতী হন। ঈশ্বরের দূতের কথামতো শিশুটির নাম রাখা হয় যিশাস, যা বাংলায় ‘যিশু’। আজ থেকে দুই হাজার ১৩ বছর আগে জেরুজালেমের বেথলেহেম শহরের এক গোয়ালঘরে জন্ম হয়েছিল যিশুর। শিশুটি কিন্তু মোটেও সাধারণ শিশু ছিল না। ঈশ্বর যাঁকে পাঠানোর কথা বলেছিলেন মানবজাতির মুক্তির জন্য। যিশু নামের সেই শিশুটি বড় হয়ে পাপের শৃঙ্খলে আবদ্ধ মানুষকে মুক্তির বাণী শোনালেন। তিনি বললেন, ‘ঘৃণা নয়, ভালোবাসো। ভালোবাসো সবাইকে, ভালোবাসো তোমার প্রতিবেশীকে, এমনকি তোমার শত্রুকেও। মানুষকে ক্ষমা করো, তাহলে তুমিও ক্ষমা পাবে। কেউ তোমার এক গালে চড় মারলে তার দিকে অপর গালটিও পেতে দাও।’ তিনি বললেন, ‘পাপীকে নয়, ঘৃণা করো পাপকে। গরিব-দুঃখীদের সাধ্যমতো সাহায্য করো, ঈশ্বরকে ভয় করো।’ যিশুর কথা শুনে অনেকে তাদের মন ফেরাল। রাষ্ট্রীয়, ধর্মীয় এবং সমাজনেতারা এসব সহ্য করতে পারলেন না। যিশুখ্রিষ্টকে তারা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে শুরু করলেন। তারা যিশুকে বন্দী করে ক্রুশে বিদ্ধ করে হত্যা করলেন। যিশুর জন্মের অনেক বছর পর থেকে খ্রিষ্টানরা এ দিনটিকে আনন্দ ও মুক্তির দিন হিসেবে পালন করতে শুরু করেন। ৪৪০ সালে পোপ এ দিবসকে স্বীকৃতি দেন। তবে উৎসবটি জনপ্রিয়তা পায় মধ্যযুগে। সে সময় এর নাম হয় ‘ক্রিসমাস ডে’।

লস এঞ্জেলেসে অনুষ্ঠিত এই উৎসবকে ঘিরে এক মিলনমেলা বসে খৃষ্ট ধর্মবালম্বীদের। এতে অংশ নেন অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও। অনুষ্ঠানের শুরুতে খৃষ্টান প্রতিনিধিদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়ে অংশ নেন সবাই। এরপর অনুষ্ঠিত হয় পিঠা পর্ব।

তারপর লস এঞ্জেলেসে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল প্রিয়তোষ সাহাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান আয়োজকরা। তিনি এই উতসব উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী বক্তব্যে কন্সাল জেনারেল সবাইকে বড়দিনের শুভেচ্ছা জানান। তিন বলেন, যিশু খ্রিস্টের জন্ম হয়েছিল শান্তির বাণী নিয়ে। তিনি সাবিইকে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির শিক্ষা দিয়েছিলেন। আমরা যদি সম্মীলিতভাবে এই শিক্ষাকে সামনে রেখে এগিয়ে যেতে পারি তাহলে পৃথিবীতে শান্তির হাওয়া নেমে আসবে।

বিশ্ব পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রিয়তোষ সাহা বলেন, বর্তমান বিশ্ব এক কঠিন পরিস্থিতর মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। দেশে ধর্মের নামে উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এত্থেকে উত্তরণের জন্য ধর্ম চর্চা বাড়াতে হবে।  ধর্ম সবসময়ই মানুষকে সহনশীল করে তুলে।

প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, প্রবাসীরা আমাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। আমি মনে করি, আপনারা বহির্বিশ্বে দেশের দূত হিসেব কাজ করছেন। আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও দেশের সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। কন্সাল জেনারেল এসময় দেশে বেশি বেশি বিনিয়োগ করার জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশ একটি উদার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার দেশে সব দল-মত ও ধর্মের মানুষের সহাবস্থান নিশ্চিত করেছে। এভাবে সম্মিলীতভাবে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এসময় তিনি প্রবাসীদের সব ধর্মীয় অনুষ্ঠানে কন্সাল জেনারেলের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে বলে জানান।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর পবিত্র উপাসনা পরিচালনা করেন ট্রিনিটি এপিস চার্চের সহকারী পুরহিত রেভাঃ বিরবল হালদার।উপাসনায় সহযোগিতায় ছিলেন মনি বোস। প্রার্থনা করেন মিসেস রোজী সরকার। এরপরে পবিত্র প্রভুর ভোজ অনুষ্ঠিত হয় এবং সকল খ্রিষ্টান সম্প্রদায় সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।

প্রার্থনার সময় পুরহিত রেভাঃ বিরবল হালদার বলেন, বড়দিনকে ঘিরে দীর্ঘ ১ মাস ধরে ঘরে ঘরে গিয়ে ধর্মের বাণী প্রচার করা হয়েছে। আজ  চূড়ান্ত উৎসব পালিত হচ্ছে। এসময় তিনি উপস্থিত সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও অতিথিদের ধন্যবাদ জানান। এই উৎসবের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য চার্চ কর্তৃপক্ষকেও তিনি ধন্যবাদ।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন (বিসিএফসি) এর সহ-সভানেত্রী সোফিয়া কেকা মণ্ডল।

মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের পরিবেশনা, মহিলাদের দলীয় নৃত্য প্রভৃতি আয়োজন দিয়ে সাজানো ছিল অনুষ্ঠানটি।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রথম পর্বে ছিল শিশুদের পরিবেশণায় অংশগ্রহণ করেন অক্ষর বোস, মেলিসা অন্তরা, নীল হালদার, বেথেল রায় ও শ্রেষ্ঠ কর্মকার।

এরপরে অনুষ্ঠিত হয় বড়দের পর্ব। প্রথমে মহিলাদের অংশগ্রহণে দলীয় নৃত্য পরিবেশন। সঙ্গীত পরিবেশন করেন ফ্লোরেন্স নীতু হালদার। দ্বৈত নৃত্য পরিবেশন করেন হৃদি ও গল্প। কবিতা আবৃত্তি করেন জনি হালদার। একক নৃত্য পরিবেশন করেন রিমি মধু। দলীয় লোক সঙ্গীত পরিবেসন করেন মিন্টু  বৈদ্য ও তার দল। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন শ্যামল পল। সমাপনিতে একটি দেশের গান পরিবেশন করেন জেমস হালদার সাবু।

সবশেষে উপস্থিত সবার জন্য আয়োজন ছিল নৈশ ভোজের। নৈশভোজে অতিথিসহ উপস্থিত সবাই অংশ নেন। এসময় শিশুদের বিনোদনের জন্য সান্টা উপস্থিত হন তার উপহার সামগ্রী নিয়ে এবং সব শিশুদের উপহার বিতরণ করেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিসিএফসি সাধারণ সম্পাদক মিঃ হিমাংশু ব্যানেট। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জুলি হালদার। অনুষ্ঠানের সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন জন হালদার।


এলএবাংলাটাইমস/এল/এলআরটি

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত