কি জন্য সৌদি জোট গঠন ?
সৌদি আরবের উদ্যোগে ৩৪টি মুসলিমপ্রধান দেশ
মঙ্গলবার বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে যে
সন্ত্রাসবিরোধী জোট গঠনের ঘোষণা
দিয়েছে, তাকে পশ্চিমা শক্তিগুলো স্বাগত
জানিয়েছে। সৌদি কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই জানিয়ে
দিয়েছে, এর মধ্য দিয়ে মুসলিম দেশগুলো
ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গিদের বিরুদ্ধে
নিজেদের অবস্থান সুস্পষ্ট করেছে। একই
সঙ্গে এই জোট আইএসবিরোধী লড়াইয়ে
পশ্চিমা মিত্রদের পাশে থাকার অঙ্গীকারও ব্যক্ত
করেছে। তবে অনেক বিশ্লেষকই এই জোট
গঠনের নেপথ্যে সৌদি আরবের আসল উদ্দেশ্য
কী, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
আরব সমালোচকেরা সৌদি আরবের প্রতি সরাসরি
আঙুল তুলে বলেছেন, যে দেশের বিরুদ্ধে
সন্ত্রাসে মদদ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে; যে
দেশকে কেউ কেউ আইএস উত্থানের মূল
হোতা মনে করেন, এখন সেই সৌদি আরব
সন্ত্রাসবিরোধী জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছে।
আরব বুদ্ধিজীবী আইয়াদ আল বাগদাদি এই
জোটকে ‘রাজনৈতিক স্টান্টবাজি’ বলে উল্লেখ
করেছেন।
লন্ডনভিত্তিক এনজিও চ্যাথাম হাউসের ইরাকবিষয়ক
বিশেষজ্ঞ হায়দার আল খোই টুইট করেছেন, ‘সৌদি
আরব আগে থেকেই জাতিসংঘের একটি মানবাধিকার
পরিষদ প্যানেলের প্রধান হয়ে বসে আছে; এখন
দেশটি সন্ত্রাসবিরোধী জোটের নেতা। এমন
কৌতুকের পাঞ্চলাইনের দরকার হয় না।’
সৌদি গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার জন্য পরিচিত
সংগঠন গালফ রিসার্চ সেন্টারের বিশেষজ্ঞ মুস্তাফা
আলানি বলেছেন, সৌদি আরব বুঝতে পেরেছে
যে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আইএস উত্থানের
জন্য তাকে দায়ী করা হচ্ছে। এ কারণে সৌদি মনে
করছে, এর পাল্টা প্রচারণা হিসেবে শুধু মুখের কথা
ধোপে টিকবে না; তাকে বাস্তবমুখী
পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে এগোতে হবে।
আলানি বলছেন, সামরিকভাবেই আইএসের বিরুদ্ধে
এগোতে হবে। তিনি মনে করেন, সন্ত্রাসবাদের
ধরন পাল্টাচ্ছে। সন্ত্রাসের লক্ষ্য এখন শুধু ‘হিট
অ্যান্ড রান’ বা আত্মঘাতী হামলা নয়; তারা এখন
রাষ্ট্রগঠনের উদ্দেশ্য নিয়ে এগোচ্ছে। ফলে
তাকে মোকাবিলা করতে আন্তর্দেশীয় সমন্বয়
দরকার।
সাবেক একজন কূটনীতিক বলেছেন, অনেকের
ধারণা, আইএস এবং সৌদি অভিন্ন শক্তি। এই জোট
গঠনের মধ্য দিয়ে বিশ্বকে সৌদি বোঝাতে চায়
যে আসলে তারা আইএসের পক্ষে কাজ করছে
না।
জোট থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান, ইরাক ও
সিরিয়াকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সৌদি আরবের
সঙ্গে শিয়াপ্রধান ইরান ও ইরাকের সম্পর্ক ভালো
নয়। আর সিরিয়ার বাশার আল-আসাদ সরকার উৎখাতে সৌদি
আরব পশ্চিমাদের সঙ্গে আগে থেকেই এক
জোট হয়ে আছে।
অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, সৌদি আরবের ভয়,
পরমাণু কার্যক্রম ইস্যুতে ইরানের ওপর যেসব
নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেগুলো তুলে নিলে
দেশটি আবার মধ্যপ্রাচ্যে প্রাধান্য বিস্তার করে
বসতে পারে। এই জোট গঠনের পেছনে সেই
ভাবনাও কাজ করে থাকতে পারে।
রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের
বিশেষজ্ঞ মাইকেল স্টিফেনস এই জোট
গঠনকে সামরিক অভিযানভিত্তিক কৌশল নয়, বরং এটিকে
একটি ‘রাজনৈতিক বার্তা’ বলে মনে করেন। তিনি মনে
করেন, এটি সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থানের একটি
সূচনামাত্র।
অবশ্য সৌদি কর্তৃপক্ষ বলেছে, জোট গঠনের
মধ্য দিয়ে একটা আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলো।
পরবর্তী সময়ে এর কার্যক্রম বিস্তৃত হবে।
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল যুবায়ের
বলেছেন, জোটভুক্ত দেশগুলো নিজেদের
মধ্যে সন্ত্রাসবিরোধী গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়
করবে। প্রয়োজনে সামরিক অভিযানে সেনা
পাঠাবে।
শেয়ার করুন