আপডেট :

        চুক্তিতে যেতে আগ্রহ নন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন

        গণহত্যার প্রতিবাদে চীন বর্জনের ডাক

        রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির আশা

        টানা তাপপ্রবাহের মধ্যে আবহাওয়ায় ব্যপক পরিবর্তন

        হানিফ ফ্লাইওভারের উপরের যানজটকে সহনীয় পর্যায়ে আনার জন্য সমন্বয় সভা

        মালদায় দেবের হেলিকপ্টারে আগুন

        প্যারিসের সায়েন্সেস পো ইউনিভার্সিটি থেকে গাজাপন্থী কিছু শিক্ষার্থীকে সরিয়েছে পুলিশ

        চাঁদের উদ্দেশে যাত্রা পাকিস্তানের স্যাটেলাইট

        চাঁদের উদ্দেশে যাত্রা পাকিস্তানের স্যাটেলাইট

        এজলাস কক্ষে এসি স্থাপন সময়ের দাবি

        জিম্বাবুয়ের দেওয়া ১২৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করছে বাংলাদেশ

        জিম্বাবুয়ের দেওয়া ১২৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করছে বাংলাদেশ

        ট্রেনে গুনতে হবে বাড়তি ভাড়া

        রাজশাহীর গোদাগাড়ির ছেলে রাফায়েল টুডু ১২ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা

        রাজশাহীর গোদাগাড়ির ছেলে রাফায়েল টুডু ১২ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা

        স্বাধীন সাংবাদিকতাকে নিরুদ্দেশ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব

        কেজরিওয়াল ও রাহুলকে ঘিরে চড়ছে ভোটের পার

        রাজধানী ঢাকায় ঝুম বৃষ্টির সম্ভাবনা

        এক টেবিলে গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা দিলেন ১৮ জন!

        এক টেবিলে গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা দিলেন ১৮ জন!

ঋণনির্ভর বাজেট জনগণের পকেট কাটবে: ফখরুল

ঋণনির্ভর বাজেট জনগণের পকেট কাটবে: ফখরুল

নতুন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটকে ঋণনির্ভর বাজেট অভিহিত করে বিএনপি বলেছে, ‘এর ফলে করের মাধ্যমে, ভ্যাটের মাধ্যমে বা অন্যান্য মাধ্যমে এই টাকা সরকার সাধারণ মানুষের পকেট কেটে নেবে।’

শনিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘বাজেটের পরিকল্পনা, বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া, খাতভিত্তিক বরাদ্দ ও সমস্যা নির্ধারণ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হচ্ছে। অনুৎপাদনশীল খাতে খরচ অত্যধিক। প্রতিবছরই বাজেটে বিপুল পরিমাণ ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। ঘাটতি মেটাতে ঋণের পরিমাণও বাড়ছে। বাজেট বাস্তবায়নের হারেও দেখা যায় নিম্নমুখীতা। বেসরকারি বিনিয়োগ স্থবির হয়ে আছে। কোথাও  যেন আস্থার অভাব আছে। প্রকৃতপক্ষে সরকারের ওপর কেউ আস্থা রাখতে পারছে না। কারণ, সরকারই যে জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। এর ফলে  জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহিতাও নেই।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অনির্বাচিত সরকারের বাজেট দেওয়ার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। কারণ, তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধও নয়। দেশের অর্থনীতি কিছু সংখ্যক মানুষের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে। তারা বাজেট প্রণয়ন করছে। তারা অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। আবার তারাই সরকার পরিচালনা করছে। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ঋণনির্ভর বাজেট দিতে হচ্ছে। দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে প্রকল্প ব্যয় বহুগুণ বাড়িয়ে বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। করের মাধ্যমে, ভ্যাটের মাধ্যমে বা অন্যান্য মাধ্যমে এই টাকা সরকার সাধারণ মানুষের পকেট কেটে নেবে।’

বিএনপির মহাসচিব  বলেন, ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ বন্ধ, শেয়ার বাজারে অস্থিরতা, ব্যাংকে তারল্য সংকট চলছে। সরকার দেশকে ঋণনির্ভর অর্থনীতির বৃত্তে আবদ্ধ করে রেখেছে। এই ঋণ শোধ দিতে দেশের মানুষের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়বে। নাগরিকদের ভুগতে হবে চরমভাবে।

তিনি বলেন, রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বেশি বেকার বাংলাদেশে। প্রবৃদ্ধির যে কথা বলা হচ্ছে, তার সত্যতা নিয়ে মারাত্মক প্রশ্ন আছে। দেশের অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা একটি শ্রেণির কাছে জিম্মি হয়ে রয়েছে। অনির্বাচিত সরকারের নৈতিক অধিকার নেই বাজেট দেওয়ার। সরকার জনগণকে বাইরে রেখে যেভাবে নির্বাচন করেছে, একইভাবে বাজেটও দিচ্ছে। যেভাবে জনগণ এই নির্বাচন গ্রহণ করেনি, তেমনি বাজেটও তারা গ্রহণ করবে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে বিশাল আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যার সিংহভাগই ধরা হয়েছে এনবিআর থেকে। অথচ চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রায় বেশ ঘাটতি রয়েছে। তার ওপর এবার আরো বড় আকারের আদায়ের পরিকল্পনা। এটা রাতারাতি সম্ভব না। বর্তমানে যে ব্যবস্থাপনা রয়েছে তাতে ঘাটতি বরং আরো বাড়বে।

তিনি বলেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে বিপুল অংকের ব্যয়ের আকাঙ্ক্ষা থাকলেও সরকারের আয়ের সামর্থ্য কমে গেছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা প্রয়োজনীয় রাজস্ব আহরণে ব্যর্থতা  ও নাজুক আর্থিক খাত। চলতি অর্থবছরে এনবিআরকে ২ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হলেও সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) এনবিআর আদায় করতে পেরেছে ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা। বাকি ৩ মাসে ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য কীভাবে পূরণ হয়, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

তিনি বলেন, ঋণের পরিমাণ ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে সুদ-আসল পরিশোধ করতেই বিশাল ব্যয় হচ্ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ খাতে রাজস্ব ব্যয়ের ১৮ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ফলে দেশের গুণগত সার্বিক রূপান্তরে অত্যধিক প্রয়োজনীয় মানবপুঁজি বা দক্ষ শ্রমশক্তি বিনির্মাণে, তথা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে না। উপরন্তু ঋণের পরিমাণ সুদসহ জমতে জমতে পাহাড়সম হলে পরিশোধের কোনো দিকনির্দেশনা এই বাজেটে নেই। বলা বাহুল্য, এর দায়ভার কিন্তু চাপবে ভবিষ্যত প্রজন্মেও ওপর।

বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির ৮.২০ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৮.১৩ শতাংশ অর্জিত হবে বলে আশা করা হয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮.১৩ হলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষ কেন সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে সলিল সমাধি হচ্ছে। শিক্ষা খাত প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। সংখ্যায় বাড়লেও শিক্ষার গুণগত মানে ধ্বস নেমেছে। শিক্ষা খাতে ব্যয় মোট জিডিপির ৩.২ শতাংশেরও কম। স্বাস্থ্য খাতে ১ শতাংশেরও কম। মানবসম্পদ আশানুরুপভাবে উন্নত হয়নি। দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে করের টাকা দিয়ে ক্ষতির রাষ্ট্রীয়করণ করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, সরকার প্রত্যক্ষ করের তুলনায় পরোক্ষ কর আদায় করছে বেশি। আর পরোক্ষ করের বোঝা সাধারণ মানুষের ওপর পড়ে বেশি। এদিকে, সাধারণ মানুষের অর্থে যে বাজেট তৈরি হয় তার ব্যয় থেকে ধনীদের ভর্তুকি দেওয়া হয়। দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে রাষ্ট্রীয় অর্থে তাদের বেইল আউট করা হচ্ছে। অপরদিকে, প্রতি বছর ১০ থেকে ১১ লাখ লোককে সামাজিক নিরাপত্তা ভাতার আওতায় এনে যে সাহায্য দেয়া হয় সেটা সমুদ্রের এক বিন্দু শিশিরের মতো। সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ জিডিপি’র ৩ শতাংশের কথা বলা হলেও পেনশন বাদ দিলে তা ১.৭ শতাংশ মাত্র।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশের সাধারণ করদাতারাই ঋণ শোধ ও উন্নয়নের মূল উৎস হিসেবে কাজ করছেন। বারবার বলা হলেও আয়কর এখনো কর আদায়ের প্রধান উৎস নয়। মূল্য সংযোজন করের মাধ্যমেই ব্যয় নির্বাহ করতে হচ্ছে। এই আয়-নিরপেক্ষ পরোক্ষ করের বোঝা পুরোটাই সাধারণ জনগণের কাঁধে চেপে বসে। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত জনগণের ওপর করের ভার বর্তাচ্ছে। বিপরীত দিকে উচ্চবিত্তদের কর পরিহার ও ফাঁকি দেওয়াটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর পরেও এবারের বাজেটে দুর্নীতিবাজদের কালো টাকা সাদা করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাজেটে সোনার দাম কমানো হয়েছে, যা ব্যবহার করে সমাজের সুবিধাভোগী শ্রেণি। অথচ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষ, সেই মোবাইল, সিম ও সার্ভিসের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাজেটে অর্থমন্ত্রী সিগারেটের দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু সিগারেটের ওপর শুল্ক না বাড়ায় সিগারেট কোম্পানির ৩১% আয় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ সারা বিশ্বে সিগারেট নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এ এক শুভঙ্করের ফাঁকি।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতাদের মধ্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত