আপডেট :

        ভারতে ভোটারদের আগ্রহ বাড়াতে বিনামূল্যে খাবার

        থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির আশা প্রধানমন্ত্রীর

        বাজারে বেড়েই চলছে অস্থিরতা

        ইংরেজ গায়ক, গীতিকার ও সঙ্গীতজ্ঞ জন লেননের গিটার

        ইংরেজ গায়ক, গীতিকার ও সঙ্গীতজ্ঞ জন লেননের গিটার

        ভারতে আজ চলছে ৭ দফা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফা

        উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল

        মানবাধিকারের উল্লেখযোগ্য উন্নতি

        প্রচণ্ড এই গরম থেকে মুক্তি পেতে বৃষ্টির জন্য বিভিন্ন জায়গায় নামাজ পড়ে দোয়া

        যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ, শতাধিক শিক্ষার্থী গ্রেফতার

        এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো

        মার্কিন বিমান আটকে দিলো ‘যুদ্ধবিরোধী’ কুমির!

        চিতাবাঘের আক্রমণে আহত জিম্বাবুয়ের সাবেক ক্রিকেটার হুইটাল

        যুক্তরাষ্ট্রে গরুর দুধেও বার্ড ফ্লু শনাক্ত

        পবিত্র হজ পালনের অনুমতি দেওয়া শুরু করেছে সৌদি আরব

        গোপনে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

        পার্লামেন্টে জুতা চুরি, খালি পায়ে ঘরে ফিরলেন পাকিস্তানের এমপিরা

        অনির্দিষ্টকালের জন্য চুয়েট বন্ধ ঘোষণা

        কুড়িগ্রামে হিটস্ট্রোকে মৃত্যু

        চীন সফর করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন

দেশে মাশরুমের মতো বেসরকারি মেডিকেল কলেজ গড়ে উঠেছে

দেশে মাশরুমের মতো বেসরকারি মেডিকেল কলেজ গড়ে উঠেছে

দেশে মাশরুমের মতো বেসরকারি মেডিকেল কলেজ গড়ে উঠেছে, বেশিরভাগই মানহীন। দেশের চিকিৎসা সেবার মান উন্নত করতে হলে চিকিৎসকদের লাইস্যান্সিং পরীক্ষা নেয়ার কোন বিকল্প নেই। দেশের সব সরকারি এবং বেসরকারি মেডিকেল কলেজে একই রকম শিক্ষার পরিবেশ, উপকরণ ও শিক্ষকের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। মান উন্নত করতে বিএমডিসির পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা। জাতি ঐকবদ্ধ থাকলে যে কোন সমস্যা মোকাবেলা করা সক্ষম বলেও মনে করেন দেশের বিশিষ্টজনরা।

বাংলাদেশ সময় ২৯ নভেম্বর রাতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরাম আয়োজিত এক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব মন্তব্য করেন। সাপ্তাহিক এই অনুষ্ঠানে এ পর্বের আলোচনার মূল বিষয় ছিল- সদ্য পাশ করা চিকিৎসকদের নিবন্ধন, লাইস্যান্সিং এবং মান নিয়ন্ত্রণ।

ওয়েবিনারে আলোচক অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি ও ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ কে এম আমিরুল মোরশেদ খসরু।

কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেন থেকে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র হেলথ স্পেশালিস্ট এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার।

নিজ বক্তব্যের শুরুতে ডা. খসরু স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরামকে ধন্যবাদ জানান৷ তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের যে কোন মেডিকেল কলেজ থেকে যে কেউ পাশ করলে কোন পরীক্ষা ব্যতিরেকে তাকে প্র‍্যাকটিসের লাইস্যান্স দেয়া হচ্ছে। দেশের চিকিৎসা সেবার মান উন্নত করতে হলে চিকিৎসকদের লাইস্যান্সিং পরীক্ষা নেয়ার কোন বিকল্প নেই। বিদেশফেরত শিক্ষার্থীদের একটি নমিনাল পরীক্ষা নিয়ে লাইস্যান্স দেয়া হচ্ছে। কেউ একবার লাইস্যান্স পেয়ে গেলে পাঁচ বছর পরপর কোনো ধরণের মান নিয়ন্ত্রনের প্রক্রিয়া ছাড়াই নবায়নের মাধ্যমে সারাজীবন প্র‍্যাকটিসের সুযোগ পেয়ে যায়। কিন্তু যুগোপযোগী জ্ঞান চর্চা করছেন কিনা তা আর দেখা বা পরীক্ষা করা হয় না। পৃথিবীর প্রায় সব উন্নত এবং মধ্যম আয়ের দেশই এর ব্যতিক্রম।

মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ার মতো পাশের দেশগুলোর উদাহরণ টেনে তিনি জানান, সেসব দেশগুলোর মেডিকেল কলেজ থেকে কেউ পাশ করার পর তার লাইস্যান্স পরীক্ষা নেয়া হয়। ওই পরীক্ষা পাশের পরই প্র‍্যাকটিসের সুযোগ পাওয়া যায়৷ ভারতও সে লক্ষ্যে এগুচ্ছে। বাংলাদেশকেও এসব বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে। দেশে অনেক মানহীন মেডিকেল কলেজ গড়ে উঠেছে যেগুলো আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। কিন্তু একটা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকা খুব জরুরি।

অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনার আয়োজন করার জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরামকে ধন্যবাদ জানিয়ে ডা. শহীদুল্লাহ বলেন, আমি ডা. খসরুর বক্তব্যের সাথে সম্পূর্ণ একমত।যিনি যতো বেশি রোগী দেখবেন তিনি ততো ভালো চিকিৎসক হবেন। দেশে মেডিকেল কলেজগুলোতে আগে যেমন রোগী ছিল অনেক, তেমনি ভালো মানের অনেক শিক্ষকও ছিলেন। দেশের অনেক নতুন সরকারি মেডিকেল কলেজেও অতীতের মতো এখন আর এসব রকম সুবিধা নেই। দেশের সব সরকারি এবং বেসরকারি মেডিকেল কলেজে একই রকম শিক্ষার পরিবেশ, উপকরণ ও শিক্ষকের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

ভারত এবং শ্রীলঙ্কার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো কোন দেশে জনসংখ্যার অনুপাতে এতো বেসরকারি মেডিকেল কলেজ নেই। শ্রীলঙ্কার একটি থাকলেও অভিজ্ঞতা সুখকর না হওয়ায় তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দেশে মাশরুমের মতো বেসরকারি মেডিকেল কলেজ গড়ে উঠেছে। সর্বোচ্চ ৩০টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজকে মানসম্পন্ন বলা চলে৷ গোটা বিশেক একেবারেই মানহীন। তাদের বেড, রোগী ইত্যাদি না থাকলেও তদন্ত করতে গেলে আগে থেকেই 'ভুয়া' জিনিসপত্র প্রস্তুত করে রাখে৷ দোষটা শিক্ষার্থীদের নয়, যারা এসব মেডিকেল কলেজ খুলছেন তাদের। ভবিষ্যতে যে কেউ ওইসব কলেজ থেকে পাশ করা চিকিৎসকদের কাছে চিকিৎসা নিয়ে বিপদে পড়তে পারেন। তাই চিকিৎসক হিসেবে কেউ ন্যূনতম মানদন্ডে পৌঁছেছে কিনা তা যাচাই করতে স্বাধীন ভাবে চিকিৎসক হিসাবে প্রাকটিস শুরু করার পূর্বে একটি লাইস্যান্সিং পরীক্ষা নেয়া অতি জরুরি। তখন মানহীন কলেজগুলো তাদের মান বাড়াতে বাধ্য হবে।

এমন যুগোপযোগী একটি বিষয় নিয়ে আলোচনার আয়োজন করার জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরামকে ধন্যবাদ জানিয়ে
শফিউল ইসলাম এমপি বলেন, সব পেশা নিয়ে ব্যবসা করা ঠিক নয়। বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো তাই করতে নেমেছে। বেশিরভাগই মানহীন। শিক্ষার্থীরা সেখানে মানসম্পন্ন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হন। দেশে শুধু মেডিকেল শিক্ষাই নয়, সার্বিক শিক্ষার মানই নিম্নগামী। 'কোয়ানটিটি' অনেক হয়েছে, এখন নজর দিতে হবে 'কোয়ালিটি'তে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে শুধু মেডিকেল কলেজ বানালে বা চিকিৎসক পাঠালেই হবে না, তাদের পরিবারের নিরাপত্তা, সন্তানাদির সুশিক্ষার ব্যবস্থা এবং অন্যান্য অবকাঠামোও নিশ্চিত করতে হবে। কেমন যেনো সবাই ব্যবসায়ী হয়ে যাচ্ছে, মানকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না, মুনাফাটাই মুখ্য। শুধু লাইস্যান্স পেয়ে গেলেই হবে না, চিকিৎসক যেনো যুগের সাথে 'আপডেটেট' থাকেন সেদিকেও মনিটরিং করতে হবে।

ডা. শহীদুল্লাহ শফিউল ইসলাম এমপির সাথে একাত্মতা পোষণ করে বলেন, আধুনিক বিশ্বের দেশগুলোতে মেডিকেল শিক্ষাকে দিনের পর দিন কঠোর করা হচ্ছে মানুষ যেনো ভালো চিকিৎসা সেবা পায়৷ অন্যান্য বিষয়ে ছাড় দেয়া হলেও এ বিষয়ে কোন ছাড় নেই। বিএমডিসি'র কাজ অনেক বেশি, কিন্তু জনবল নেই বললেই চলে। ইংল্যান্ডে ২ লক্ষ চিকিৎসকের বিপরীতে রয়েল মেডিকেল কাউন্সিলএ কর্মকর্তা-কর্মচারী ২২০০। বাংলাদেশে ১ লক্ষ চিকিৎসকের বিপরীতে কর্মকর্তা-কর্মচারী দুই বছর আগেও ছিল ২৩ । তাই মাশরুমের মতো গজিয়ে উঠা কলেজগুলো থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন, লাইস্যান্সিং যাচাই-বাছাই করতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এখন সংখ্যাটা একটু বেড়ে ৪৭। তাছাড়া বিসিএমডিসি নামধারী 'ভুয়া' প্রতিষ্ঠান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে শিক্ষার্থীদের 'ভুয়া' রেজিস্ট্রেশন দিচ্ছে। চিকিৎসকদের 'মেডিকেল নেগলিজ্যান্স' এর জন্য ভুক্তভোগীরা তাদের মারধর না করে, হাসপাতাল না ভেংগে বিএমডিসি'র সহায়তা চাইলে বিএমডিসি যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে৷ কিন্তু বাস্তবে সেটা হাতেগোনা। সামগ্রিকভাবে সবকিছুর মান উন্নত করতে বিএমডিসির পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

দেশের ৩৭ টি সরকারি মেডিকেল কলেজের ২১ টির-ই কোন সংলগ্ন হাসপাতাল নেই বলে জানান ডা. খসরু। ওইসব শিক্ষার্থীদের ৮/১০ মাইল দূরের কোন পুরনো জেলা হাসপাতালে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হয়। উদাহরণস্বরুপ কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে যেতে-আসতে ৫ বছরের মধ্যে ৭ মাসই রাস্তায় যানজটে থাকতে হয়।

বিএমডিসি'র মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলো স্বাধীন কমিশনে রূপান্তর করেছে; প্রতিবেশী ভারতও সেই পথে এগুচ্ছে সঞ্চালক ড. জিয়া এমন এক প্রসঙ্গের অবতারণা করলে শফিউল ইসলাম এমপি বলেন, কোন সমস্যাই সমস্যা নয় যদি রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকে। জাতি ঐকবদ্ধ থাকলে যেকোন সমস্যা মোকাবেলা করা সক্ষম। সবাই মিলে প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়গুলোর গুরুত্ব তুলে ধরলে তিনি নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবেন। সবাই এক হলে মানহীন মেডিকেল কলেজগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

 

এলএবাংলাটাইমস/এলআরটি/এন

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত