ধর্ষণ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুরাদনগরে রাজনৈতিক উত্তেজনা: কে দায়ী?
কুমিল্লার মুরাদনগরে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসা এক নারীকে ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এই ঘটনায় সবকিছু ছাপিয়ে অভিযুক্ত কোন দলের সেই বিতর্কই শেষ পর্যন্ত মুখ্য হয়ে উঠেছে।
এই বিষয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের একটি টকশো অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা বলেন, এই যে রাজনীতিতে নারীর শরীরকে ব্যবহার করা হচ্ছে, একদল আরেক দলকে ঘায়েল করার চেষ্টা করছেন; এই চেষ্টার মাঝে ওই নারীর ভিডিওটি ভাইরাল করা হলো। তারা প্রত্যেকে ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে এই কাজটি করলেন যেটা আসলে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
তিনি বলেন, এই যে প্রক্রিয়া পুরো প্রক্রিয়াটার মধ্যে যিনি ভুক্তভোগী, তার চাইতে জরুরি হয়ে দাঁড়াচ্ছে ওই এলাকার যে বিএনপি আওয়ামী লীগ এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের যে কে কাকে আসলে ঘায়েল করে সামনের দিকে এগিয়ে যাবেন। এছাড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুইয়া লিখেছেন— মুরাদনগরের সব আওয়ামী সন্ত্রাসীদের আশ্রয় প্রশ্রয় পুনর্বাসন এবং ক্ষমতায়নের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার নির্যাতন চাঁদাবাজি ধর্ষণের উদ্দেশ্যে যারা ছেড়ে দিয়েছেন তারাই আজকের পরিস্থিতির জন্য দায়ী।
উপদেষ্টা আসিফের কথার প্রেক্ষিতে ড. সামিনা বলেন, বিগত সরকারের আমলেও কোনো একটি ঘটনা ঘটলে, মন্ত্রী-এমপিরা কি করে যেন বলে দিতে পারতেন; কে বা কারা এর সঙ্গে জড়িত বা দায়ী। এখনো দেখি তদন্ত ছাড়াই যারা চেয়ারে বসে আছেন তারা আগাম রিপোর্ট দিয়ে থাকেন যে, কারা বা কে এর সঙ্গে দায়ী।
তারা কিভাবে তদন্ত ছাড়াই দায়ীদের খুঁজে পান?
এ বিষয়ে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম বলেন, মুরাদনগরে যে পৈশাচিক ঘটনা ঘটেছে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। এ বিষয়ে রাষ্ট্রের দায়িত্ব রয়েছে এবং এই গুরুদায়িত্ব অনেকাংশে পড়েছে আসিফ মাহমুদের ওপর।
তিনি আরও বলেন, এই ঘটনা ঘটার পরপরই একটা গোষ্ঠী বিএনপির ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করেছে। তবে বিএনপি কিন্তু কারো ওপর রাজনৈতিক দায় চাপায়নি।
পরবর্তীতে দেখা যায়, ওই ঘটনার সঙ্গে ইতিমধ্যে প্রাথমিকভাবে যাদেরকে চিহ্নিত করা গিয়েছে, তারা কেউই বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না। তারা এক সময় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল অথবা ছত্রছায়ায় ছিল। কিন্তু যে দায়টা বিএনপির ওপর চাপানোর অপচেষ্টা, সেটাও আমরা মনে করি যে আসিফ মাহমুদের ওখানকার রাজনৈতিক কর্তৃত্ব নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করার জন্য।
এই বিষয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. রেজাউল করিম বলেন, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসীদের কোনো দল নেই। এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার পরিচয় হচ্ছে সে একজন অপরাধী।
সুতরাং তাকে সেইভাবেই চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। এতে সে যেই দলের ছত্রছায়ায় সেটি করুক না কেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, যদি ব্যবস্থাটি নেওয়া যায় তাহলে সেই দলের পপুলারিটি এবং মানুষ এটাকে সমর্থন জানায় এবং এটি হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, আমরা ৫৩ বছরের বাংলাদেশকে যদি পর্যালোচনা করে দেখি তাহলে প্রত্যেকটি অধ্যায়ে কিন্তু নারীদের ঐতিহাসিক অবদান রয়েছে। তাই এই অপরাধগুলোকে কোন দল আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে এটি না হয়ে বরং তাদের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া, এটাই রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব হওয়া উচিৎ।
টকশোতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদ বলেন, শুরুতে আমি বলতে চাই, আসিফ মাহমুদ মুরাদনগরের কোনো পলিটিশিয়ান না, তিনি মুরাদনগরের নির্বাচিত কোনো জনপ্রতিনিধি না বা তিনি কোনোদিন ঘোষণাও দেন নাই যে মুরাদনগর থেকে তিনি এমপি ইলেকশন করবেন। আসিফ মাহমুদ গোটা বাংলাদেশের দায়িত্বে আছেন। তার মন্ত্রণালয়টা কিন্তু স্থানীয় সরকার নির্বাচন। যে নিরাপত্তার কথা বলা হচ্ছে সেটি কিন্তু মোটা দাগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের।
সরকারের অংশ হয়ে আসিফ মাহমুদ আওয়ামী লীগের ওপর দোষ চাপাতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে রিফাত রশিদ বলেন, আমি মনে করি যে আসিফ মাহমুদের আরো দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। তিনি দায় কারো ওপর না চাপিয়ে তার বরং একটি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া যাতে ত্বরান্বিত হয় সেদিকে তার লক্ষ্য করা উচিত। ফেসবুকে এসে স্ট্যাটাস দেওয়ার মাধ্যমে কোনো কিছু সমাধান হয় না। বরং তিনি যদি এটা বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জনগণের কাছে একটা উদাহরণ সেট করতে পারতেন, তাহলে তিনি ভালো করতেন।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন