বাংলাদেশে জাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে ২৩ জনের মৃত্যু
ময়মনসিংহ পৌরসভার কাছে নুরানী জর্দ্দা ফ্যাক্টরিতে জাকাতের কাপড় নিতে এসে আজ ভোরে
পদদলিত হয়ে কমপক্ষে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরো অর্ধ শতাধিক। এদের মধ্যে ৪
জনকে গুরুতর অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার মঈনুল হক মৃতের সংখ্যা ২৩ জন বলে নিশ্চিত করেছেন। তবে এ সংখ্যা আরো বাড়তে
পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। এঘটনায় ফ্যাক্টরির মালিক শামীম তালুকদারসহ ৭ জনকে আটক
করেছে পুলিশ।
ঘটনার তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুনকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি
গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে কমিটিকে রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
নিহতরা হলো- শহরের পাটগুদাম বিহারী ক্যাম্পের সিরাজুলের ছেলে সিদ্দিক (১২), নুরু ইসলামের
স্ত্রী সখিনা (৪০) ও তার মেয়ে লামিয়া (০৫), মৃত বারেকের স্ত্রী সামু বেগম (৬০), মৃত জুম রাতির
স্ত্রী হাজেরা খাতুন (৭০), শহরের ধোপাখলা এলাকার গবিন্দ বসাকের স্ত্রী মেঘলা বসাক (৫৫),
নারায়ন চন্দ্র সরকারের স্ত্রী সুধা রানী সরকার (৫৫), মৃত বজেন্দ্র’র স্ত্রী রিনা (৬০), মৃত সুলতান
মিয়ার স্ত্রী জামেনা বেওয়া (৬৫), চরপাড়া এলাকার হায়দার আলীর স্ত্রী হাসিদা বেগম (৫৫), আকুয়া
দক্ষিণ পাড়ার জালালের স্ত্রী নাজমা বেগম (৫০), সালামের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৫৫), রবি হোসেনের
স্ত্রী ফাতেমা আক্তার (৫২), কাঠগোলা বাজারের আব্দুল মজিদের স্ত্রী রেজিয়া আক্তার (৫৫),
কাঁচারীঘাট এলাকার মাহাতাব উদ্দিনের স্ত্রী ফজিলা বেগম (৭৫), থানাঘাট এলাকার আব্দুস
সালেকের স্ত্রী খোদেজা বেগম (৫০), চর ঈশ্বরদিয়ার লাল মিয়ার স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৬০), তারাকান্দা
থানার বালিডাঙ্গা গ্রামের মোসলেম মিয়ার স্ত্রী মরিয়ম (৫০) ও অজ্ঞাত দুজন।
প্রতি বছরের মতো এবারও জাকাতের কাপড় বিতরণ করতে চান ময়মনসিংহ শহরের অমৃত বাবু
রোড এলাকার বাসিন্দা নুরানী জর্দ্দা ফ্যাক্টরির স্বত্ত্বাধিকারী শামীম তালুকদার। শহরের বিহারী ক্যাম্প,
দুলদুল ক্যাম্প ও থানাঘাট বস্তিসহ শহরের বস্তি এলাকায় হতদরিদ্রদের মাঝে ৬’শ কার্ড বিতরণের
মাধ্যমে আজ শুক্রবার সকাল থেকে জাকাতের ওই শাড়ী-লুঙ্গি প্রদানের দিন ধার্য্য করা হয়। সেই
লক্ষে সেহরির পর থেকে আনুমানিক দুই থেকে তিন হাজার লোক অপেক্ষা করতে থাকে ওই বাড়ীর
সামনেসহ আশপাশের অলিগলিতে। ভোর পৌণে ৫টার দিকে জাকাতের জন্য গেটের ভিতর প্রবেশ
করতে চাইলে ফ্যাক্টরির কর্মচারীরা বাঁধা দেয় এবং ভিতর থেকে লাঠিপেটা করে। এসময় হুড়োহুড়ো
করে ভীড়ের চাপে পদদলিত হয়ে ঘটনাস্থলেই ৮ থেকে ১০ জনের মৃত্যু হয়। আহত হয় অর্ধ
শতাধিক। পরে স্থানীয়রা আহতদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে
মারা যায় আরো ১০/১২ জন।
ঘটনার পর পুলিশ সুপার খন্দকার মঈনুল হক ২০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বলেন, এ সংখ্যা
আরো বাড়তে পারে। নিহতদের মধ্যে ১০টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হাসপাতাল মর্গ থেকে পুলিশ ১২
জনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছেন। নিহতের মধ্যে মহিলার সংখ্যাই বেশি।
এদিকে জাকাত নিতে আসা হতদরিদ্র জয়নাল, খসরু ও রেবেকা বেগমসহ স্থানীয়দের অভিযোগ,
ভীড় এড়াতে তাদের লাঠিপেটা করেছে। ফলে দ্বিগবিদিক ছুটোছুটি করে এতগুলো মানুষ লাশ হয়ে
ফিরছে।
তারা জানায়, মৃতের সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০ জন হবে। আশপাশের অলিগলি থেকেও কয়েকটি লাশ
রাস্তার উপর পড়ে থাকতে দেখেছেন তারা। এদিকে নিহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম।
শেয়ার করুন