চলে গেলেন প্রেম ও প্রতিবাদের কবি রফিক আজাদ
যদি ভালোবাসা পাই আবার শুধরে নেবো
জীবনের ভুলগুলি;
যদি ভালোবাসা পাই ব্যাপক দীর্ঘ পথে
তুলে নেবো ঝোলাঝুলি
যদি ভালোবাসা পাই শীতের রাতের শেষে
মখমল দিন পাবো
যদি ভালোবাসা পাই পাহাড় ডিঙ্গাবো আর
সমুদ্র সাঁতরাবো
অগণন মানুষের ভালোবাসা নিয়ে চিরতরে চলে গেলেন প্রেম ও দ্রোহের কবি রফিক আজাদ। কবি বেশ কিছুদিন হলো বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। আরোগ্য লাভে ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। কিন্তু আশাজাগানিয়া কোনো খবর আমরা পাচ্ছিলাম না। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসাবিজ্ঞানকে পাশ কাটিয়ে শনিবার দুপুর ২টা ১০ মিনিটে চলে গেলেন তিনি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে কবি ভর্তি ছিলেন। এর আগে তিনি গত ফেব্রুয়ারি থেকে ওই হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।
কবি রফিক আজাদের জন্ম ১৯৪১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইলের গুণী গ্রামে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন কবির বালক মনে গভীর প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ভাষার প্রতি এই ভালোবাসা থেকেই পরবর্তী জীবনে তার কাব্যপ্রেমের সূচনা। মধ্যবিত্তের সংকট, জীবনযন্ত্রণা এবং প্রেম তার কবিতার মুখ্য বিষয়। রফিক আজাদের প্রেমের কবিতায় নারীপ্রেমের আলাদা বৈশিষ্ট্য সহজেই চোখে পড়ে। তার কাব্যে স্বদেশপ্রেমেরও সন্ধান মেলে। অসম্ভবের পায়ে, পাগলা গারদ থেকে প্রেমিকার চিঠি, হৃদয়ের কী বা দোষ তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ।
চিরপ্রতিবাদী কবি তার দ্রোহ শুধু কবিতার লেখনীতে আবদ্ধ না রেখে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন জাতির চরম ক্রান্তিকালে, ১৯৭১ এ হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধের সময় রণাঙ্গনের সৈনিক হিসেবে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে অংশ নেন তিনি। কর্মজীবনে রফিক আজাদ বাংলা একাডেমির মাসিক সাহিত্য পত্রিকা উত্তরাধিকারর সম্পাদক ছিলেন। রোববার পত্রিকাতেও রফিক আজাদ নিজের নাম ঊহ্য রেখে সম্পাদনার কাজ করেছেন। এ ছাড়া অধ্যাপনাও করেছেন তিনি কিছুদিন। সাহিত্য সাধনার স্বীকৃতিস্বরূপ রফিক আজাদ ১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
রফিক আজাদের কবিতায় প্রেম, নারী ও প্রকৃতির রূপায়ণ যেন এক নতুন পৃথিবী। তার চুনিয়া আমার আর্কেডিয়া কাব্যগ্রন্থ (১৯৭৭ সালে প্রকাশিত ) পাঠ করলে তারই প্রতিচ্ছবি যেন আমাদের চোখে ভেসে ওঠে। তার প্রেমের কবিতার মধ্যে নারীপ্রেমের একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। ষাটের দশকের অন্যতম প্রধান এই কবি একধরনের স্বপ্নাচ্ছন্ন অনুভূতিলোক সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা ও যন্ত্রণা- যা তার স্বপ্নের নারীর ভেতরে দেখতে চেয়েছেন। তার স্বপ্নের জগৎ স্মৃতিঘন চিত্রপট সমর্পিত হতে চায় বারবার। অপার বেদনা তাকে গ্রাস করে। অন্তরঙ্গ আশ্চর্য জীবনধারা অভিন্ন সত্তায় রূপান্তরিত করে। পঞ্চাশের পর বাংলা কবিতার জমিতে যে তুমুল আধুনিকতার বীজ বপনের যাত্রা শুরু হয়েছিল, রফিক আজাদ সে সময়কার প্রধান কবিতা নির্মাতা।
কবি রফিক আজাদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন দেশের সুশীল সমাজ, লেখক-সাংবাদিক, সংস্কৃতি কর্মী এবং রাজনীতিবিদরা।
কবির মৃত্যুতে এলএ বাংলা পরিবারের পক্ষ থেকে রইল গভীর শ্রদ্ধা।
শেয়ার করুন