বাংলাদেশ ব্যাংক কেলেঙ্কারি : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ জোহা অপহৃত!
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ডলার চুরির বিষয়ে বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় আসা তথ্যপ্রযুক্তিবিদ তানভীর হাসান জোহা নিখোঁজ রয়েছেন। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ইঙ্গিত দিয়েছেন যে জোহাকে আটক করা হয়ে থাকতে পারে।
রাজধানীর কচুক্ষেত এলাকা থেকে বুধবার দিনগত রাত ১টার দিকে তাকে অপহরণ করা হয় বলে দাবি করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। এ ব্যাপারে জিডি করতে থানায় থানায় ঘুরে ব্যর্থ হয়ে বাসায় বসে আছেন তারা।
জোহার পরিচিতরা জানান, বুধবার অফিস থেকে বাসায় ফেরার সময় রাত ১২টার দিকে স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা হয় তার। এর আগে দুইদিন তিনি বাসায় ফেরেননি।
অফিস থেকে বের হওয়ার পর সিএনজিতে ওঠেন জোহা। কচুক্ষেত এলাকায় দুই-তিনটি গাড়ি তার সিএনজিকে ঘিরে ধরে। এরপরই অপহৃত হন তিনি।
জোহার চাচা মাহবুবুল আলম (বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক উপমহাপরিচালক) জানান, বুধবার রাতে বাসায় ফেরার সময় জোহার সঙ্গে তার বন্ধু ছিলেন ইয়ামির আহমেদ। তিনিই ফোন করে জোহার অপহরণের ঘটনা জানান তার পরিবারকে।
মাহবুবুল আলম আরো জানান, খবর পাওয়ার পরপরই পুলিশকে জানাতে তারা কলাবাগান থানায় যান। পুলিশ জানায়, অপহরণের এলাকা কাফরুল থানা এলাকায়। সেখানে গেলে কাফরুল থানা পুলিশ তাদের ক্যান্টনমেন্ট থানায় পাঠায়। সেখান থেকে পুলিশ আবার তাদের পাঠায় ভাসানটেক থানায়। তবে ভাসানটেক থানা পুলিশও দাবি করে এই ঘটনাস্থল তাদের এলাকায় পড়ে না। হতাশ হয়ে জোহার স্বজনরা বাসায় ফিরে আসতে বাধ্য হন।
তানভীর হাসান জোহা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) মন্ত্রণালয়ের সাইবার নিরাপত্তা বিভাগের ডিরেক্টর (অপারেশন) ছিলেন। তবে এই প্রকল্পটি গত দুই মাস ধরে স্থগিত আছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিভার্জ থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ডলার সরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় তিনি কিছু কথাবার্তা বলেন, যাতে ধরে নেয়া হয় তিনি ওই ঘটনার তদন্তে জড়িত আছেন।
গত ১৩ মার্চ দৈনিক কালের কণ্ঠে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তানভীর হাসান জোহা বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকেই হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। এখান থেকে এটা কিভাবে হলো এবং ইনফেকশনটা কোথা থেকে কিভাবে ঢুকল, সেটা খোঁজার চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তিনটি আইডি থেকে ফেক ট্রানজেকশনের ঘটনা ঘটেছে। এর ব্যবহারকারীরা নজরদারিতে আছেন বলে জেনেছি। প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনও গোয়েন্দা সংস্থার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে এবং এখন অন্যান্য বিষয়ে অধিকতর তদন্ত চলছে বলেও জানতে পারছি।’
তানভীর হাসান আরো বলেন, ‘যে তিনটি আইডি থেকে ট্রানজেকশন হয়েছে তা শনাক্ত করা গেছে। এই তিনটি আইডি বাংলাদেশ ব্যাংকের। এখন সেটা কখন, কিভাবে হয়েছে সে সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে এই তিনটি আইডির প্রোফাইল পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে।’
এর পরদিন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, তানভীর জোহার সঙ্গে সরকারের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই।
আইসিটি বিভাগ জানায়, তানভীর জোহা বিভিন্ন সময়ে মিডিয়ায় টকশো-আলোচনায় নিজেকে আইসিটি বিভাগের স্পেশালিস্ট দাবি করে রিজার্ভ চুরির বিষয়ে বিভিন্ন বক্তব্য প্রদান করছেন। তিনি গত বছরে শেষ হওয়া সাইবার সিকিউরিটি অ্যাওয়ারনেস প্রোগামে সংযুক্ত ছিলেন। এরপর থেকে তার সঙ্গে আর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, তানভীর জোহা/তানভীর হাসান জোহা নামের কোনো ব্যক্তির সঙ্গে আইসিটি বিভাগের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই এবং আইসিটি বিভাগের সাইবার সিকিউরিটি স্পেশালিস্ট বা সাইবার সিকিউরিটি ফোকাল পয়েন্ট বা সাইবার নিরাপত্তা বিভাগের ডিরেক্টর (অপারেশন) হিসেবেও কর্মরত নন।
তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ‘তদন্তের স্বার্থে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রযুক্তিবিদ তানভীর হাসান জোহাকে গ্রেফতার করতে পারে, তবে আমি নিশ্চিত নই।’
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেট কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানের আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
জিডি না নেওয়ার বিষয়টি তার জানা নেই বলেও জানান স্বরাষ্টমন্ত্রী।
শেয়ার করুন