আপডেট :

        চুনারুঘাট প্রেসক্লাবের দ্বি-বার্ষিক কার্যকরী কমিটি

        শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা আসছে ফেব্রুয়ারিতে

        রাসেলকেও কেন হত্যা করতে হয়েছিল, কারণ জানালেন রাশেদ চৌধুরী

        রাসেলকেও কেন হত্যা করতে হয়েছিল, কারণ জানালেন রাশেদ চৌধুরী

        বিসিবির গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটি স্থগিত

        বিসিবির গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটি স্থগিত

        বাংলা একাডেমি পুরস্কারের ঘোষিত নামের তালিকা স্থগিত

        বাংলা একাডেমি পুরস্কারের ঘোষিত নামের তালিকা স্থগিত

        ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে ডব্লিউএইচও ছাড়বে যুক্তরাষ্ট্র: জাতিসংঘ

        লস এঞ্জেলেসে ট্রাম্প, দাবানল নিয়ন্ত্রণে নিউসমের সঙ্গে কাজ করায় আগ্রহ

        যুক্তরাষ্ট্রে এক দিনে নথিপত্রহীন পাঁচ শতাধিক অভিবাসী গ্রেপ্তার

        সরকারি দপ্তরের ১৭ মহাপরিদর্শককে বরখাস্ত করলেন ট্রাম্প

        বাংলাদেশে আসছে স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট

        ছাত্র উপদেষ্টারা নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে তিনি আর সরকারে থাকতে পারবেন না

        তাত্ত্বিক ও গবেষণায় গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষার্থীদের তৈরি করবো’

        মূলধন বাড়লো ৩৬৪৭ কোটি টাকা

        আমার ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে: শরিফুলের বাবা

        লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে মিষ্টি আলু চাষে আগ্রহ

        ‘শেখ মুজিব ইজ ডেড’ কীভাবে ঘটেছিল জানা গেলো

        ইউক্রেনীয় শিশুদের চেয়ে গাজার শিশুদের কম অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে

আমাদের আগামীরা আজকে দেশব্যাপী রাজপথে

আমাদের আগামীরা আজকে দেশব্যাপী রাজপথে

গত দুই সপ্তাহ ধরে চলা কোটাবিরোধী আন্দোলন এখন সহিংস রূপ পেয়েছে। ঢাকা, রংপুর, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা রঘটেছে।

এসব সংঘর্ষের মধ্যে চট্টগ্রামে তিনজন, ঢাকায় দুইজন ও রংপুরে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, রংপুর, রাজশাহী, গাজীপুরে নেমেছেন বিজিবি সদস্যরা।


সরকারি চাকরিতে সকল গ্রেডে কোটা বাতিল করে কেবল ‘অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ বরাদ্দ’ রেখে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবি জানিয়েছে আন্দোলনকারীরা।

২০১৮ সালে কোটা বাতিলের পরিপত্র জারির আগ পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা, জেলা, নারী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধী– এই পাঁচ ক্যাটাগরিতে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল।


 বাংলাদেশে ১৯৭২ সাল থেকেই চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা, জেলা ও নারী কোটা ছিল। সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন কর্পোরেশন ও দপ্তরে নিয়োগ এবং কোটা বণ্টনের বিষয়ে ১৯৭২ সালের পাঁচই সেপ্টেম্বর তৎকালীন সরকার একটি নির্বাহী আদেশ জারি করে। এতে এসব প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণির চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ মেধা এবং বাকি ৮০ শতাংশ জেলা কোটা রাখা হয়। এই ৮০ শতাংশ জেলা কোটার মধ্য থেকেই ৩০ শতাংশ কোটা মুক্তিযোদ্ধা এবং ১০ শতাংশ কোটা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের জন্য বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অর্থাৎ কোটার বড় একটি অংশই বরাদ্দ করা হয় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য। এর চার বছর পর অর্থাৎ ১৯৭৬ সালে প্রথমবারের মতো কোটা বণ্টনে পরিবর্তন আনা হয়। এসময় মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের পরিমাণ বাড়ানো হয় এবং শুধু নারীদের জন্য আলাদা করে কোটার ব্যবস্থা করা হয়।


ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের কোটায় অন্তর্ভুক্ত করে এবং মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে ১৯৮৫ সালে কোটা পদ্ধতির সংশোধন আনে তৎকালীন সংস্থাপন (বর্তমান জনপ্রশাসন) মন্ত্রণালয়। ১৯৯০ সালে নন-গেজেটেড পদগুলোর নিয়োগে কোটা পদ্ধতিতে আংশিক পরিবর্তন আনা হলেও প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে তা অপরিবর্তিত থাকে। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত করা হয় ১৯৯৭ সালে। কোটায় পরবর্তী পরিবর্তন আসে ২০১১ সালে। এসময় মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিদেরও ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

সবশেষ ২০১২ সালে এক শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা যুক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।


সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার চেয়ে কোটার পরিমাণ বেশি থাকায় এটি নিয়ে বরাবরই অসন্তোষ ছিল। এমন প্রেক্ষাপটে বেশ কয়েকবারই কোটা আন্দোলন হয়। তবে তা ছিল খুবই সীমিত আকারে। কোটা আন্দোলন প্রথমবারের মতো বড় আকারে রূপ নেয় ২০১৮ সালে। ওই বছরের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা বাতিল এবং এর পুর্নমূল্যায়ন চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র ও দুই সাংবাদিক।এতে কোটা পদ্ধতিকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেও উল্লেখ করা হয়। কিন্তু মার্চ মাসে এসে ওই রিটটি খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত। এদিকে আদালতে রিট করার পরপরই ফেব্রুয়ারি মাসে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ‘কোটা সংস্কার চাই’ নামে একটি পেইজ খোলা হয় এবং শাহবাগকে কেন্দ্র করে পেইজটি থেকে মানবন্ধনসহ নানা কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া শুরু হয়। এর মাধ্যমেই মূলত কোটা সংস্কার আন্দোলন দানা বাঁধতে থাকে।

এসময় কোটা সংস্কারের উদ্দেশ্যে ‘বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্মও গঠন করা হয়। রিট খারিজ হবার পর কোটা পদ্ধতিতে কোনো পরিবর্তন করা হবে না মর্মে আদেশ জারি করা হয়। তবে কোটা কার্যকর করার ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা আনে সরকার।

জনপ্রশাসন থেকে জারি করা ওই আদেশে বলা হয়, “সব ধরনের সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা তালিকার শীর্ষে অবস্থানকারী প্রার্থীদের দিয়ে সেসব পদ পূরণ করা হবে।”


বাংলাদেশে উচ্চ আদালতের একটি রায়ের পর সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা নিয়ে বিতর্ক ও বিক্ষোভ নতুন করে ডালপালা মেলেছে।

৩ জুন বুধবার সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করার রায় দিয়েছে দেশটির হাইকোর্ট। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল আলোচনা চলছে কোটা পুনর্বহাল ইস্যুকে কেন্দ্র করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক স্থানে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেকে।


সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকার দাবি করছে, এ সমস্যার সমাধানে তারা আদালতের উপরই নির্ভর করছে।


গত দুইদিন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুরো ঢাকা শহর কার্যত অচল ছিল।

সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, আদালতে বিচারাধীন থাকায় সেখানেই কোটার বিষয়টি সমাধান হতে হবে। বিচারাধীন বিষয়ে সরকার কথা বলবে না।


কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট করলে গত পাঁচই জুন এক রায়ের মাধ্যমে আবারও ফিরে আসে কোটা। হাইকোর্টের ওই রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে আপিল বিভাগে। সেই আবেদন গত চৌঠা জুলাই শুনানির জন্য আসলে রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল করতে নির্দেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত।


এরই মধ্যে গত ১ জুলাই থেকে কোটা বাতিলে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলন এখন ছড়িয়ে পড়েছে দেশব্যাপী। বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এখন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের এক দফা দাবিতে আন্দোলন চলছে।  শিক্ষার্থীদের দাবি আদালতের কাছে নয় বরং সরকারের কাছে তাদের এই এক দফা দাবি।


কোটা সংস্কারে শিক্ষার্থীদের দাবি বিকল্প উপায়ে সমাধান করা সম্ভব বলে মনে করছেন আইনজীবীদের অনেকে। তারা বলছেন, কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপনকে আদালত অবৈধ ঘোষণা করায় এ ব্যবস্থা আবার বহাল হয়েছে। ফলে কোটা সংরক্ষণ করে পূর্বের যে প্রজ্ঞাপন রয়েছে সেটিতে গ্রহণযোগ্য হারে কোটা রেখে একটি সংশোধনী এনে সমস্যার সমাধান করা যায় বলে জানান আইনজীবীরা।

২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটার পরিমাণ।


এবারের আন্দোলনেও বারবারই উঠে এসেছে মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিষয়টিই। কোটার উদ্দেশ্য হচ্ছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সমতল ক্ষেত্র তৈরির চেষ্টা করা। এটা কি সরকারের নির্বাহী ক্ষমতার বিষয় না আদালতের বিষয়? ব্যক্তির অধিকার যদি ক্ষুণ্ণ হয় কিংবা সংবিধানের ব্যত্যয় ঘটলে সেটা আদালতের বিষয়। কিন্তু এক্ষেত্রে তেমনটা হয়েছে বলে মনে হয় না। আগেতো নির্বাহী আদেশেই (কোটা) দেয়া হয়ছিল, আর নির্বাহী আদেশেই তা তুলে নেয়া হয়েছে। মোটাদাগে কোটা ব্যবস্থাকে সরলভাবে দেখার সুযোগ নেই বলেই মত বিশ্লেষকদের। যেই পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য কোটা রাখা হচ্ছে তা কীভাবে ব্যবহার হচ্ছে এবং কতটা কাজে লাগছে– সে বিষয়টাতেও নজর দেয়া প্রয়োজন বলে। 


সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ‘সাধারণ শিক্ষার্থীরা’ সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থার পরিবর্তন (সংস্কার) চেয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছে। শেষ পর্যন্ত তা ‘রক্তপাতে’ গড়িয়েছে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষকেরা রাতের আঁধারে মারধরের শিকার হয়েছেন। নিহত হয়েছেন অনেকে, আহত হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন পাঁচশোর অধিক ।  


স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর, দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এই চিত্রের পরিবর্তন হয়নি, তার দায়দায়িত্ব যে–ই নিক না কেন, এই প্রজন্মের মনে যে ঘৃণাবোধ জন্ম নিচ্ছে, তার দায় অন্তত এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সরকারকে নিতেই হবে।

চাকরিব্যবস্থায় একটি ‘আদর্শিক-দৃঢ়’ নীতির প্রয়োজন। কোনো সংসদ সদস্যই শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি সেজে তাদের আক্ষেপগুলো সংসদে শোনাতে পারেননি, সরকারকে সম্পৃক্ত করাতে পারেননি। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা সরকারি চাকরিতে বৈষম্য দূর করতে একটি ঐক্য তৈরিতে সফল হয়েছেন, এই বিষয়টি আমাদের শাসকগোষ্ঠীর মানা উচিত। এই শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা বোঝার সক্ষমতা সরকারের থাকা উচিত।

আমাদের আগামীরা আজকে দেশব্যাপী রাজপথে। ওদের স্লোগান নিয়ে অনেক প্রশ্ন কিন্তু কেন এই স্লোগান সেটা নিয়ে কোন কথা নাই। ন্যায্য অধিকারের আন্দোলন কাউকে রাজাকার বানায় না, বরং ওদের হাত ধরেই স্বাধিকার আসে।

সুত্রঃ প্রথম আলো 

এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত