দীপিকা-রণবীরের বেবি দুয়া: মায়ের চোখ নিয়ে ইন্টারনেটে ভাইরাল হচ্ছে ছবি
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাত, নিহত ২৪
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে উপকূলীয় সাত জেলায় প্রবল ঝড়ো হাওয়ায় গাছ ভেঙে, ঘর ধসে এবং সৃষ্ট জোয়ারের পানিতে অন্তত ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের।
এদের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীতে ৩ জন, বাশঁখালীতে জলোচ্ছ্বাসে শিশুসহ ৭ জন ও সীতাকুণ্ডে মা-ছেলে মারা গেছেন। এছাড়া, কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় ৩ জন, ভোলায় গাছ ও ঘর চাপা পড়ে ৩ জন, লক্ষ্মীপুরে গাছ চাপায় ১ জন, নোয়াখালীর হাতিয়ায় জোয়ারে ভেসে মা-মেয়েসহ ৩ জন এবং পটুয়াখালীতে ঘর ভেঙে ১ জন এবং ফেনীতে এক রাখালের মৃত্যু হয়েছে।
এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিক লোক।
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু উপকূল অতিক্রম করার আগেই উপকূলীয় বিভিন্ন জেলায় শতশত ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
উপকূলীয় অঞ্চলের জেলাসমূহ থেকে পাঠানো আমাদের প্রতিনিধিদের দেয়া তথ্যে রোয়ানুর ক্ষয়ক্ষতির চিত্র:
ভোলায় ৩ জন
বাংলদেশ রেড ক্রিসেন্টের সাইক্লোন প্রিপার্ডনেস প্রোগ্রামের উপ পরিচালক মো. শাহাবুদ্দবীন জানান, শুক্রবার শেষরাতের দিকে ভোলায় প্রবল ঝড়ো হাওয়া শুরু হলে তজুমদ্দিনে ঘর ও গাছ চাপা পড়ে দুজনের মৃত্যু হয়।
এরা হলেন- তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের শশিগঞ্জ গ্রামের নয়নের স্ত্রী রেখা বেগম (৩৫) ও একই এলাকার মো. মফিজের ছেলে আকরাম (১৪)।
শাহাবুদ্দবীন বলেন, ভোর ৪টার দিকে ঝড়ের তীব্রতা বেড়ে গেলে ঘর চাপা পড়ে আকরাম আহত হন। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ৬টায় তার মৃত্যু হয়। এছাড়া ঝড়ে গাছ ভেঙে ঘরের ওপর পড়লে মারা যান রেখা বেগম।
স্থানীয়রা বলছেন, ঝড়ে তজুমদ্দিনের শশীগঞ্জ বাজারের তিন শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বিধ্বস্ত হয়ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
অপরদিকে দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর গ্রামের জাহাঙ্গীরের স্ত্রী রেনু বিবি ঘরচাপায় মারা যান।
পটুয়াখালীতে ১
এদিকে সকালে প্রবল ঝড়ো হাওয়ার মধ্যে ঘর ভেঙে পড়লে পটুয়াখালী দশমিনা উপজেলার সদর ইউনিয়ন লক্ষ্মীপুর গ্রামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।
দশমিনার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজহারুল ইসলাম জানান, নিহত ওই নারীর নাম নয়া বিবি, বয়স ৫২।
ঝড়ে ওই এলাকার আরো ১০-১২টি ঘর ধসে পড়েছে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান।
চট্টগ্রামে ১২
চট্টগ্রাম: ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে জেলার বাঁশখালী উপজেলায় দুই শিশুসহ সাতজন ভেসে যায়।
তারা হলেন, খানাবাদ ইউনিয়নের আবু সিদ্দিক (৫৫), বুলবুল আকতার (৫৭), জালাল আহমদ (৩৮) ও হোসেন আহমদ (৭)। এছাড়া চরোয়া ইউনিয়নে মারা গেছে তিন বছরের শিশু তাহেরা বেগম। অন্য দুইজনের পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামসুজ্জামান জানান, বিকেলে জলোচ্ছ্বাসের পানি বেড়িবাঁধ ভেঙে বাঁশখালীর বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে পড়ে। এতে সাতজন ভেসে যায়। পরে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে দুইজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
এছাড়া প্রবল বৃষ্টির কারণে সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল ছলিমপুর পাহাড়ি এলাকায় পাহাড় ধসে মা ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন— জঙ্গল ছলিমপুর এলাকার রফিকুল ইসলামের স্ত্রী কাজল বেগম (৫০) ও তার ছেলে বেলাল হোসেন (১২)।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ নাজমুল ইসলাম ভূইয়া জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে শুক্রবার রাতে প্রবল বৃষ্টি হয়। এরপর শনিবার সকালে পাহাড় ধসে পড়লে রফিকুল ইসলামের ঘর মাটি চাপা পড়ে। এতে তার স্ত্রী ও ছেলের মৃত্যু হয়।
এদিকে চট্টগ্রাম নগরীতে শনিবার দুপুরে আম কুড়াতে গিয়ে নগরীর পাঁচলাইশে মো. রাকিব (১১) নামে এক শিশু নিহত হয়েছে।
পাঁচলাইশ থানার ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদ জানান, দুপুর ১টার দিকে শিশুটি পাঁচলাইশে চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সের পেছনে আম কুড়াতে যায়। এ সময় ঝড়ে উড়ে আসা একটি টিনের নিচে চাপা পড়ে গুরুতর আহত হয় সে। তিনি জানান, পরে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর শিশুটি মারা যায়।
এছাড়া নগরীর হালিশহরে মারা গেছেন আরো দু'জন। তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি।
নোয়াখালীতে ৩
এদিকে, রোয়ানুর প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারের পানিতে নোয়াখালীর হাতিয়া থানার নলের চর এলাকায় এক মা ও শিশু কন্যার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছন ওসি এটিএম আরিসুল হক।
এছাড়াও জাহাজমারা ইউনিয়নের মাহফুজা বেগমের মৃত্যু হয়েছে (৪৫)।
হাতিয়া থানার ওসি আরিসুল হক জানান, নিহত মায়ের নাম মিনারা বেগম এবং শিশু কন্যার নাম মরিয়ম নেছা (৬)। নিহত মিনারা বেগমের স্বামীর নাম আবুল কাসেম। তিনি হাতিয়া থানাধীন হরনি ইউনিয়নের আদর্শ গ্রামের বাসিন্দা।
কক্সবাজারে ৩ জন
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুতে কক্সবাজারে কুতুবদিয়া উপজেলায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরো ১০ জন।
নিহতরা হলেন, উপজেলার উত্তর ধুরুং এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে মো. ইকবাল (২৫), উত্তর কৈয়ার বিল এলাকার ফয়েজুর রহমানের ছেলে ফজলুল হক (৫৫) এবং আলী আকবর ইউনিয়নের মুস্তাফিজুর রহমানের ছেলে শফিউল আলম (৩৬)।
জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, ইকবাল দেয়াল চাপায় এবং ফজলুল নৌকার ধাক্কায় নিহত হয়েছেন।
আর মুস্তাফিজ জলোচ্ছ্বাসে মাটির ঘর ভেঙে গিয়ে চাপা পড়ে মারা যান বলে জানান কুতুবদিয়া থানার ওসি অং সা তুয়াই।
আহতদের দুই জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও পাঁচ জনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। বাকি তিন জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক জানান।
ঘূর্ণিঝড়ে কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া ও টেকনাফ উপজেলার সাড়ে ২৮ কিলোমিটার বেড়ি বাঁধ কোথাও আংশিক ও কোথাও সর্ম্পূণ ধসে গেছে।
এছাড়া শতাধিক বসত ঘর ক্ষতিগ্রস্ত এবং জেলার বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
লক্ষ্মীপুরে ১
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর তেওয়ারীগঞ্জ এলাকায় গাছ পড়ে আনার উল্যাহ নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
শনিবার সকাল ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানায়, তেওয়ারীগঞ্জ বাজার এলাকায় ঝড়ের সময় একটি গাছ চাপা পড়ে আহত হন আনার উল্যাহ। পরে লক্ষ্মীপুরে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী জানান, ঘূর্ণিঝড়ের সময় আনার উল্যাহ গাছ চাপা পড়ে মারা যান।
ফেনীতে ১
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু দুপুরে ফেনীর সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানলে সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়ার জেলে পাড়া এলাকায় জোয়ারের পানিতে ভেসে এক রাখালের মৃত্যু হয়েছে।
নিহত নুর আলম (৩৪) এ বাড়ি চরচান্দিয়ার জেলে পাড়া এলাকায় বলে জানিয়েছেন সোনাগাজীর ইউএনও শরীফা হক।
এছাড়া রোয়ানুর প্রভাবে সোনাগাজীর তিনটি ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রামের ঘরবাড়ি জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু উপকূলের দিকে এগিয়ে আসায় রাজধানী ঢাকা এবং দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সব জেলাতেই বৃষ্টি হচ্ছে।
শেয়ার করুন