মিষ্টির বন্যায় জিপিএ ৫, সৎ কাজে কেন শান্তি?
এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্টকে ঘিরে প্রতি বছর যে লাগামহীন উন্মাদনা দেখা যায়, তা আমাদের সমাজের জন্য শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মতপ্রকাশ করেছেন সামাজিক সাহায্য সংস্থা আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও ইসলামিক স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ।
গত সোমবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে শায়খ আহমাদুল্লাহ লেখেন, খুব কম মা-বাবাই আছেন, সন্তানের সৎ কাজকে যারা উচ্ছ্বাস ভরা হৃদয়ে অভিনন্দিত করেন। বিপদের মুখেও ছেলে সত্য কথা বলেছে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে, সুযোগ থাকার পরও ঘুষ নেয়নি-- এই আনন্দে বাবা-মা কখনো মিষ্টি বিতরণ করেছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন ঘটনা হয়ত একবারও ঘটেনি। অথচ জিপিএ-৫ পেলে মিষ্টির বন্যা বইয়ে দেব-- এমন ঘোষণা আমরা অহরহ শুনছি।
তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্টকে কেন্দ্র করে যে লাগামহীন উন্মাদনা দেখা যাচ্ছে, তা আমাদেরকে শঙ্কিত ও ব্যথিত করছে। পরীক্ষায় ভালো ফল করা নিঃসন্দেহে আনন্দের ঘটনা। কিন্তু সেই আনন্দের উদযাপন নির্দিষ্ট মাত্রার ভেতর হওয়াই শোভনীয়।
আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান বলেন, এদেশের মিডিয়াগুলোও এই পরীক্ষাকে ঘিরে যেভাবে সংবাদ কাভারেজ দেয়, অন্য কোনো দেশে এর নজির আছে বলে আমাদের জানা নেই।
এই অতি উন্মাদনার কারণেই পরীক্ষায় যারা ভালো করতে পারে না, তাদের ভেতর অপরাধবোধ তৈরি হয়, তারা ডিপ্রেশনে চলে যায়। এক পর্যায়ে অনেকে আত্মহত্যার মতো ভয়ংকর সর্বনাশা পথ বেছে নেয়।
এই শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার পেছনে আমাদের মিডিয়ার যেমন দায় আছে, তেমন দায় আছে সন্তানদের প্রতিযোগিতার বাজারে ছেড়ে দেয়া মা-বাবাদেরও।
তিনি আরও লেখেন, সামগ্রিক জীবনের সাফল্যের তুলনায় একটি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা আঁচড় রেখে যাওয়ার মতো বড় ঘটনা নয়। তারপরও এই উন্মাদনা প্রমাণ করে, আমরা দিন দিন খুব বেশি ভোগবাদী, বস্তুবাদী এবং পরকাল ভোলা ইহজাগতিক মানুষ হয়ে উঠছি।
আহমাদুল্লাহ লেখেন, সততা নয় বরং পরীক্ষায় পাস করাই জীবনের প্রধান লক্ষ্য হয়ে ওঠায় অনেক বাবা-মা প্রয়োজনে সন্তানের নকল করারও অনুমোদন দেন। পাশের ভালো ছাত্রের খাতা দেখে লিখতে না পারলে অনেক সন্তান ভর্ৎসনার শিকার হয়। কী অদ্ভুত মনোবৈকল্য আমাদের!
তিনি আরও লেখেন, জিপিএ ৫ সাময়িকের সাফল্য। কিন্তু মুমিনের জীবনে চূড়ান্ত সাফল্য তো তখনই আসবে, যখন সে জাহান্নাম থেকে বেঁচে চির সুখের জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে এটাকেই আসল সফলতা বলেছেন। আর বুদ্ধিমান তো সে, যে কিনা সাময়িকের সাফল্যের ফাঁদে আটকা না পড়ে চূড়ান্ত সফলতার জন্য চুপচাপ কাজ করে যায়।
শেষে লেখেন, জীবন অনেক দীর্ঘ জার্নির নাম। জিপিএ-৫ পাওয়ার পরও অনেক শিক্ষার্থী পরবর্তী জীবনে ব্যর্থ হয়। আবার জিপিএ-৫ না পেয়েও বহু মানুষ পরবর্তী জীবনে সফল হয়। তাই সাময়িকের এই সাফল্যকে উন্মাদের মতো উদযাপন করা শোভনীয় নয়।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন