বিচারহীনতায় বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদ, সামরিকভাবে মোকাবেলা ঠিক হবে না
বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ উত্থানের পেছনে অসমতা ও বিচারহীনতা রয়েছে বলে মনে করছে ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ)। শুধু সামরিক শক্তি দিয়ে এটিকে মোকাবেলা করা ঠিক হবে না বলেও মনে করেন সংগঠনের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা।
১ থেকে ৫ এপ্রিল ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য ১৩৬তম আইপিউ সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন মতামত ব্যক্ত করেন সংগঠনের সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী ও মহাসচিব মার্টিন চুংগং (martin chungon)।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুক্রবার (৩১ মার্চ) সকাল সাড়ে ৯টায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের স্পিকার ও সিপিএ চেয়ারপারসন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীও বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করে আইপিইউ এর মিডিয়া রিলেশন জিন মিলিগান।
আইপিইউ এর সেক্রেটারি জেনারেল মার্টিন চুংগুং বলেন, সমাজে অসাম্য ও বিচারহীনতার কারণে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের সৃষ্টি হচ্ছে। এই অসাম্য তৈরি হয় রাজনীতি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে। আমাদের এ সম্মেলনের উদ্দেশ্য হল তা দূর করা।
আইপিইউ সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, শুধু সামরিকভাবে জঙ্গিবাদকে মোকাবিলা করা ঠিক হবে না। জঙ্গিবাদের মূল কারণগুলো কি? অর্থাৎ শুধু আমরা জঙ্গিবাদের দিকে তাকাবো না, এটা কেন হচ্ছে সেই জায়গায় আমরা দৃষ্টি দিতে চাই। সেখানে সরকারের পাশাপাশি সংসদের কী ভূমিকা থাকবে, সংসদ সদস্যদের ভূমিকা কী হবে সেটা নিয়ে আমরা আলোচনা করব কাল (শনিবার) থেকে শুরু হওয়া আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনে।
তিনি আরও বলেন, জঙ্গিবাদের ক্ষেত্রে সরকার যা করছে তা তো আছেই, সেই সঙ্গে সংসদ সদস্য হিসেবে আমরা কী করতে পারি আইপিউ সম্মেলনে সেই কৌশল নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে তা ঠিক করা হবে। কমিটিতে এ নিয়ে যে আলোচনা হবে তা পরবর্তীতে সেটা আমাদের কাউন্সিলে যাবে। এটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ।
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, এ ধরনের একটি আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ গ্লোবাল পার্লামেন্টারি কমিটির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছে। এই এসেম্বলির মাধ্যমে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ড করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে আমাদের কূটনৈতিক বিষয়টি আরও জোরালো হবে।
এই এসেম্বলিতে গণহত্যা নিয়ে আলোচনা হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে আইপিইউ সভাপতি বলেন, এটি আমাদের এমপিদের আলোচনার উপর নির্ভর করে। আমি আশা করি এমপিরা এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবেন। এটার সুযোগ আছে।
তিনি বলেন, জঙ্গিবাদের বিষয়ে আইপিইউ এর কৌশল নিয়ে এই এসেম্বলিতে আলোচনা হবে।
এসেম্বলিতে অংশ নিতে বিভিন্ন দেশের ৪৫ জন স্পিকার ও ৩৭ জন ডেপুটি স্পিকার, ১৩৬টি দেশের সংসদীয় ডেলিগেশন, ৪২টি সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি, বিভিন্ন দেশের ৬৮৭ জন সংসদ সদস্য এবং ২০৯ জন নারী সদস্যসহ মোট ১ হাজার ৩৪৮ জন এ পর্যন্ত অংশগ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন।
সাবের চৌধুরী বলেন, এই সম্মেলন চলাকালীন সময়ে আমাদের দেশে এইচএসসি পরীক্ষা হচ্ছে। এপ্রিলের ২ ও ৪ তারিখে বাংলা পরীক্ষা হবে। এই পরীক্ষার জন্য আমাদের সম্মেলনের সময়সূচি কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে। কারণ এত সংখ্যক ভিআইপি আসবে আমাদের দেশে। তারা যদি পরীক্ষার সময় চলাফেরা করেন তাহলে অনেকের হয়তো সমস্যা হতে পারে। যানজট দেখা দিতে পারে। অনেক পরীক্ষার্থী সময়মতো হয়ত পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে পারবে না। সেই বিষয়টি বিবেচনায় ওই দুইদিন সকাল ৮ থেকে ১০টা মধ্যে কোনো ভিআইপির মুভেমেন্ট হবে না।
তারপরও এই বৃহৎ সম্মেলনের কারণে নগরবাসীর কিছু সমস্যা হবে উল্লেখ করে বিশাল আয়োজনের কথা বিবেচনা করে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান জানান তিনি।
সিপিএ চেয়ারপারসন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়ন, গণতন্ত্রের সফল অভিযাত্রা ও সুদূরপ্রসারী উন্নত, সমৃদ্ধ ভবিষ্যত বিনির্মাণে অপার সম্ভাবনাগুলো এ সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তুলে ধরতে চাই। এই সম্মেলনের সফল আয়োজন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় এক অনন্য মাইলফলক হবে।
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও আইপিইউ এর যৌথ উদ্যোগে আগামী ১ থেকে ৫ এপ্রিল প্রথমবারের মত ঢাকায় এই ১৩৬তম এসেম্বলন অনুষ্ঠিত হবে। আয়োজক দেশের স্পিকার হিসেবে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এসেম্বলির প্রেসিডেন্ট হবেন। এবারের সম্মেলনের থিম বা মূল প্রতিপাদ্য হলো, ‘সমাজের বৈষম্য নিরসনের মাধ্যমে সবার মর্যাদা ও মঙ্গল সাধন’।
এলএবাংলাটাইমস/এন/এলআরটি
শেয়ার করুন