শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করে সংবাদ , পত্রিকা অফিসে আগুন
মুক্তি মিলছে না খালেদার, কারাগারেই ঈদ
কুমিল্লার দুই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। রাষ্ট্র ও আসামি উভয়পক্ষের শুনানি শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। সুপ্রিম কোর্টের আপিল আদালত খোলার পর প্রথম দিন ২৪ জুন পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করে ওই সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত আপিল করতে বলা হয়েছে। ঈদের পর সুপ্রিম কোর্টের ছুটি শেষে আগামী ২৪ জুন আদালত বসবে।
এদিকে ঈদুল ফিতর হবে ১৬ জুন। এ হিসেবে খালেদা জিয়াকে কারাগারেই ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে হচ্ছে। খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত আদেশ দেওয়ার পর সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের সভাপতির কক্ষের সামনে এক ব্রিফিংয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, খালেদা জিয়াকে সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে দীর্ঘদিন জেলে রাখতে চায়। যেহেতু ইতোমধ্যে নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা হবে এটা সরকারও জানে। ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন হবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
এখন আমরা চাচ্ছি ন্যায়নীতির মাধ্যমে আইনি লড়াইয়ে খালেদা জিয়াকে বের করে আনবো। এদিকে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করে আসছেন, সরকারই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এবং আসন্ন নির্বাচনের বাইরে রাখতেই খালেদা জিয়ার মুক্তি আটকে রেখেছেন। তারা বলেছেন, যেভাবে প্রতিটি মামলায় নিম্ন আদালতে জামিন না দেওয়া এবং আপিলে জামিন হলে তা চেম্বার জজে স্থগিত হওয়া, পরে আপিলে দীর্ঘায়িত হওয়া। তাই তারা ধারণা করছেন, নির্বাচনের আগে মুক্তি পাবেন কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
অপরদিকে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, এটা পুরোপুরি আদালতের বিষয় এবং তার ওপর সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। নির্বাচনের আগে মুক্তি পাবেন কি না এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে অক্টোবর বা নভেম্বরে। এর মধ্যেই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে আমরা মুক্ত করতে পারবো ইনশাল্লাহ।
৬ মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বলেন, ঢাকায় দুটি, কুমিল্লায় তিনটি ও নড়াইলে একটি মামলা রয়েছে। মামলাগুলো হলো কুমিল্লার বাসে পেট্রোলবোমার ঘটনায় করা বিস্ফোরক আইনের মামলা এবং একটি হত্যা মামলা ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা, ঢাকায় যুদ্ধাপরাধীদের মদদ দেওয়ার মানহানির মামলা, ১৫ আগস্ট ভুয়া জন্মদিন পালনের অভিযোগে মামলা এবং মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের সংখ্যা নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের অভিযোগে নড়াইলে করা মামলা।
কুমিল্লায় হত্যা, বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩ মামলা : ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক সাড়ে তিনটার দিকে কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী আইকন পরিবহণের একটি বাস কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগমোহনপুর এলাকায় আসামাত্র দুর্বৃত্তরা পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে। এতে ঘটনাস্থলে সাতজন ও হাসপাতালে নেওয়ার দুদিন পর আরও একজনসহ মোট আটজন মারা যান ও ২৭ জন আহত হন। এ ঘটনায় ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে চৌদ্দগ্রাম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুজ্জামান হাওলাদার বাদি হয়ে দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় একটি হত্যামামলা করেন। মামলা তদন্ত করেন চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই মো. ইব্রাহিম।
কুমিল্লা আদালতের একটি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজার সংলগ্ন জগমোহনপুর এলাকায় বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপের মামলায় গত ২ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ ৪৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
নড়াইলে মানহানি মামলা : মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৩ আগস্ট গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে নড়াইলের একটি আদালত। ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধা দলের সমাবেশে খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহিদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে বলে মন্তব্য করেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ চাননি। এই বক্তব্যের জেরে নড়াইলের নড়াগাতি থানাধীন চাপাইল গ্রামের রায়হান ফারুকী ইমাম ২৪ ডিসেম্বর নড়াইল সদর আমলি আদালতে মামলা করেন।
মুক্তিযুদ্ধকে ‘কলঙ্কিত’ করার অভিযোগে করা মামলায় ‘২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের সঙ্গে জোট করে নির্বাচিত হয়ে সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তিনি রাজাকার-আলবদর নেতাকর্মীদের মন্ত্রী-এমপি বানিয়ে তাদের বাড়ি ও গাড়িতে স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র ও জাতীয় পতাকা তুলে দেন’। ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একটি মানহানির মামলা করেন জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী। আদালত ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন। ২০১৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর তেজগাঁও থানার পুলিশ পরিদর্শক মশিউর রহমান (তদন্ত) অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
এলএবাংলাটাইমস/এন/এলআরটি
শেয়ার করুন