দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় বিক্রি হওয়া টিকিটে ৫ কোটি ডলারের জ্যাকপট
রাষ্ট্রপতি সবার: দলীয় আনুগত্যের সীমানায় বন্দী হতে পারেন না
সংসদীয় গণতন্ত্র রয়েছে, এমন কোন দেশের রাষ্ট্রপতি কোন দল বা গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করেন না, তিনি পুরো জাতির। তিনি যেমন নিরপেক্ষ, তেমনি সবার মুরুব্বী অভিভাবক। প্রেসিডেন্ট যেদল থেকেই মনোনয়ন পেয়ে দায়িত্ব পেয়েছেন দায়িত্ব পাবার পর, তিনি আর সেই দলের কেউ নন, তিনি পুরো জাতির প্রেসিডেন্ট। কোন দল বা গোষ্ঠীর প্রেসিডেন্ট নন। কোন দলের প্রতি তার কোন অনুরাগ বিরাগ থাকবে না, এমন শপথ নিয়েই তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন। তিনি সবার অভিভাক। সবার প্রত্যাশ ও শেষ ভরসা প্রেসিডেন্ট। তিনি শান্তির কথা বলবেন। তিনি মুরুব্বীর মতো কথা বললেন। দেশের জন্য কথা বলবেন। নিরপেক্ষ কথা বললেন। তিনি এমন কোন মন্তব্য করবেন না, যাতে জনমনে পরোক্ষভাবে হলেও এমন সন্দেহ সৃষ্টি হয়, তিনি তার সাবেক দল কিংবা দলীয় প্রধানের প্রতি এখনো অনুগত। দলীয় বা দলনেতার প্রতি কৃতজ্ঞতা কিংবা আনুগত্যের বাইরে গিয়ে তাকে কথা বলতে হবে, আচরণ করতে হবে। দলীয় ভাবধারার প্রতি তার দুর্বলতা দেখানো মানে তার নিরপেক্ষতা হারানো। এমন কিছু করা মানে তার শপথ তথা দেশের শাসনতন্ত্র লঙ্ঘন করা। নিজেই নিজের পদের অমর্যাদা করা। সুতরাং ঐ মুহূর্তে তার একটাই দায়িত্ব, আর তা হলো পদত্যাগ করে আবার দলীয় রাজনীতিতে ফেরত যাওয়া। বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার সা¤প্রতিকতম বক্তব্যে অনুরাগ-বিরাগের উপরে উঠতে পেরেছেন বলে মনে হয় না। অনেক বিশ্লেষকের মতে, রাষ্ট্রপতি তার ২৯ জানুয়ারী (২০১৫)’র বক্তব্যে জাতিকে হতাশ করেছেন। তার বক্তব্যে পরোক্ষভাবে হলেও শেখ হাসিনা সরকারের চাওয়া-পাওয়ারই প্রতিফলন ঘটেছে। এর আগের দিন (২৮ জানুয়ারী, ২০১৫) পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা মানুষকে পোড়াবে বা আঘাত করবে, তাদের বিরুদ্ধে যত কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, সেটা আপনারা নেবেন। কোনো দ্বিধাদ্বন্ধ নেই। যা কিছু হোক, সেই দায়িত্ব আমি নেব।’ শেখ হাসিনার কথারই প্রতিধ্বনি করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ পেট্রলবোমা ও আগুন দিয়ে নিরীহ মানুষের হত্যায় জড়িত লোকজনের বিরুদ্ধে পুলিশকে ‘কঠোর ব্যবস্থা’ নিতে বললেন । আর উল্লেখ করা জরুরী যে, গত ছয় বছরে পুলিশ বিভাগে নিয়োগপ্রাপ্ত সবাই ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী কিংবা ক্যাডার, যাদের সিংহভাগ নাকি গোপালগঞ্জ কিংবা কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের অধিবাসী। কৃতজ্ঞতাবশত এরাতো এমনি শেখ হাসিনার জন্য মরিয়া, এবং ইতোমধ্যেই তারা সে প্রমাণ রেখে চলেছে। বিরোধীদলকে মাঠে নামতেই দেয়নি। বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী বটেই, এমনকি বিরোধীদলীয় চীফহুইপকে সংসদভবন এলাকায় ইচ্ছেমত পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে। তাদের বিরুদ্ধে যতো ধরনের মিথ্যা মামলা দেয়া যায়, তা-ই দিয়েছে। এরপরেও আরো কঠোর হওয়ার নির্দেশ। রাষ্ট্রপরিত বক্তব্যে ফুটে উঠেছে তিনি দলীয় গণ্ডি ও আনুগত্যের সীমানা অতিক্রম করতে পারেন নি। সবার অভিভাক হিসাবে তিনি ক্ষমতাসীনদেরকে বলতে পারতেন, আপনারা সংযত ভাষা ব্যবহার করুন। সংযমী-সংযত হোন। উগ্র ও উসকানীমূলক বক্তব্য পরিহার করুন। বিরোধীদলকেও বলতে পারতেন সহিংসতা ছাড়–ন। শান্তির পথে আসুন। ধৈর্য ধারণ করুন। তিনি উভয় পক্ষকে ডাকতে পারতেন (সে সুযোগ এখনো আছে)। একত্রে কিংবা পৃথক পৃথকভাবে তাদের সাথে কথা বলে সংলাপের সমযোতার শান্তির একটা রাস্তা তৈরি করতে পারতেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ তিনি এসবের কিছুই করেন নি। অবরোধজনিত দুর্দিন-দুর্যোগময় পরিস্থিতির জন্য সরকারের আদৌ কি কোন ভূমিকাই নেই । ২০০৯ সন থেকে শেখ হাসিনা দেশের উপর দিয়ে কেমন নির্মম সুনামি বইয়ে দিয়েছেন, পুরো দেশবাসী এমনকি আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় তার সাক্ষী। আজকের অবরোধ ও সহিংসার মূল হোতা তো শেখ হাসিনা। তিনিই দেশে সর্বপ্রথম এ ধরনের কুকর্ম শুরু করেছিলেন। গান পাউডার, বোমা ও ককটেল, অগ্নিসংযোগ, গাড়ি ভাঙ্চুর, রেল লাইন তুলে ফেলা, অফিসগামী সরকারী কর্মকর্তাকে উলঙ্গ করে রাস্তায় বসিয়ে রাখা, লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যা কোন দুষ্ককর্মটি তিনি করেন নি? অন্যদিকে শেখ হাসিনার দুঃশাসন, গণতন্ত্রের নামে একব্যক্তির শাসন এবং বিরোধীদলকে নির্মূল করার নির্মম প্রতিক্রিয়া রাষ্ট্রপতি সেটাকে কীভাবে অস্বীকার করবেন।রাষ্ট্রপতি কি দেখেন নি, ২০০৯ সন থেকে সরকার কীভাবে বিরোধীদলের ন্যুনতম গণতান্ত্রিক অধিকারকে অস্বীকার করতে করতে তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কীহারে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। রিমাণ্ড নামক নির্যাতন কেন্দ্রে নিয়ে অমানবিক ও অপমানজনক অত্যাচার করা হয়েছে। বিরোধী দলের কতো হাজার নেতাকর্মী কারাগারে আছে? কতো লাখ নেতা-কর্মী ডজন ডজন মামলার আসামী? কতোজন খুন, গুম, নিখোঁজের শিকারে পরিণত হয়েছেন? কীভাবে নির্বাচন কমিশন, দুদক, সংবাদমাধ্যম, আদালতকে দলীয় সংস্থার মতো যথেচ্ছা ব্যবহার করে বিরোধীদলকে নানাভাবে নাজেহাল করা হচ্ছে? এসবের মধ্যে কি গণতন্ত্রের সামান্যতম ছোঁয়া আছে? গণতান্ত্রিক দেশে এসব সংস্থা কী সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করে? অন্যদিকে সরকারের অনুসারী ক্যাডারদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি, টেণ্ডারবাজি, হল দখল, হল থেকে প্রতিপক্ষকে বের করে দেয়া, অপহরণ করে পণ আদায়, খুন-জখম, অন্তঃদলীয় সশস্ত্র লড়াই, পুলিশসহ সরকারী কর্মকর্তাদের চড়্-থাপ্পড়, পুলিশের পাশে থেকে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ধাওয়া করা কিংবা পিটানো নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছ। অত্যাচারিতরা তাদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে মামলা দিতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ সে মামলা গ্রহণ করেন না।রাষ্ট্রপতি নিশ্চয়ই জানেন ৫ জানুয়ারী নির্বাচন কতোখানি প্রতিনিধিত্বশীল? তিনি দেখেছেন ১৫৪ আসনের প্রার্থীরা কোন পরিস্থিতিতে কীভাবে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। অনেক প্রার্থী টাকা দিয়ে তাদের দুর্বল প্রতিদ্বন্ধীকে বসিয়ে দিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হবার গৌরব (?) অর্জনের সুযোগ গ্রহণ করেছেন। রাষ্ট্রপ্রতির অবশ্যই মনে আছে, এরশাদের দলের প্রার্থীরা তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে আবেদন করলেও কিভাবে পকেট নির্বাচন কমিশন তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার সংক্রান্ত আবেদনকে অগ্রাহ্য করে । নিয়ম অনুযায়ী এরশাদের প্রার্থীদের প্রার্থীতা গৃহীত হলে ২০৯টি আসনেই ভোট হতো না। সুতরাং জনগণ ধরে নিয়েছে যে, মূলত ২০৯টি আসনেই কোন নির্বাচন হয়, আসন ভাগাভাগি হয়েছে। নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। তা’হলে চলমান সংসদ কতোখানি প্রতিনিধিত্বশীল?এরশাদকে বাগে আনতে কীভাবে অসুস্থতার কথা বলে তাকে তার ঘর থেকে জোর করে তুলে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে (কথিত রোগী এরশাদ এতোই সুস্থ ছিল যে তাকে গল্ফ খেলায় অংশ নিতে দেখা গেছে) নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য করে কী ধরনের নির্লজ্জ ডিজিটালি তেলেসমাতি নির্বাচনী নাটক করা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি তাও দেখেছেন। অন্যদিকে নির্বাচন বর্জনের অবস্থান থেকে সরে আসার লোভ দেখিয়ে শেখ হাসিনা নিজেই বিএনপি’র উদ্দেশ্যে বলেছিলেন: আসুন আমরা আসনগুলো ভাগাভাগি করি নেই, আপনারা যতোটা সংসদীয় আসন চান, যে যে মন্ত্রণালয় চান, সবই দিতে রাজী আছি, আপনারা কেবল নির্বাচনে আসুন । নির্বাচনের আগেই যদি সংসদীয় আসন ও মন্ত্রীত্ব ভাগাভাগি হয়ে যায়, তাহলে নির্বাচনের আদৌ কোন প্রয়োজন আছে কী? নির্বাচনের জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয়েরই বা প্রয়োজন কোথায়? এখানেই শেষ নয়। সরকারী নিয়ন্ত্রণে সংসদে একটা আজব গৃহপালিত বিরোধীদল রাখা হয়েছে, যে দলের সদস্যরা মন্ত্রীসভারও সদস্য। (সরকারীদল যেভাষায় কথা বলে, গৃহপালিত পাতানো বিরোধীদল তারই পুনরাবৃত্তি করে।) রাষ্ট্রপতি অবশ্যই জানেন: আপোস-রফার মাধ্যমে সম্পদ ভাগাভাগি করে মিলেজুলে খাবারের ব্যবস্থার নাম গণতন্ত্র নয়। ক্ষমতায় থাকার জন্য সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে গণতন্ত্রকে নিয়ে এমন নিলর্জ্জ ধাপ্পাবাজি আর প্রতারণা কখনো হয়েছে বলে মনে হয় না। কোনভাবেই বর্তমান সরকারকে নৈতিকভাবে বৈধ কিংবা জনপ্রতিনিধিত্বশীল বলা যায় না।রাষ্ট্রপতি অবশ্যই স্বীকার করবেন, পেট্রলবোমা ও আগুন দিয়ে নিরীহ মানুষের হত্যার পরিবেশ কখনোই তৈরী হতো না, যদি দেশে গণতান্ত্রিক ধারা ও মূল্যবোধ, বাক-স্বাধীনতাকে শেখ হাসিনার একনায়কতান্ত্রিক ইচ্চাতন্ত্রের খাঁচায় বন্দী করা না হতো। রাষ্ট্রপতি তো মুদ্রার উভয় পিঠ দেখার কথা। একপিঠ দেখে কথা বললে তো তা একপাক্ষিক হয়ে যাবে। তিনি পুলিশকে বলতে পারতেন, দায়িত্ব পালনে বিবেক ও আইনের প্রতি সম্মান দেখান। দায়িত্ব পালনে নিরপেক্ষ থাকুন। অযথা জনগণের জন্য বিপদের ভয়ের কারণ হবেন না। অপরাধীকে পাকড়াও করে আদালতে নিয়ে যান। তাদের উপর অত্যাচার করবেন না। কারণ সে দোষী কিনা সে বিচার করার দায়িত্ব আপনাদের নয়। সেজন্য আদালত রয়েছে। অকারণে নিরাপরাধ মানুষকে মারবেন না। ঘুষ খাবেন না। এসব কিছু না বলে তিনি উল্টা পুলিশের প্রশংসা করলেন। তিনি পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ ইতিমধ্যেই জনবান্ধব হিসেবে জনগণের আস্থা অর্জন করেছে (যা মোটেই সত্যি নয়) । রাষ্ট্রপতি জঙ্গি দমনে পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশের এই ভূমিকা দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষায় এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তাদের দায়িত্ব আগামী দিনে পালন অব্যাহত রাখবে বলেও রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন। রাষ্ট্রপতির এমন প্রশংসা ও প্রত্যাশার মূল কথা হলো পুলিশ যেন আওয়ামী দুঃশাসনকে টিকিয়ে রাখতে আরো বেশি ভূমিকা রাখে।তিনি কোন গণতন্ত্র রক্ষার কথা বলছেন? রাষ্ট্রপতি অবশ্যই জানেন: একব্যক্তির ইচ্ছা গণতন্ত্র নয় । এক দলীয় শাসন একব্যক্তির শাসন গণতন্ত্র নয়। মুখে গণতন্ত্র, বাস্তবে স্বৈরতন্ত্র গণতন্ত্র নয়। বিরোধীদলের সব গণতান্ত্রিক অধিকার, সংবাদপত্রের ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ, সর্বক্ষেত্রে দলীয়করণ কিংবা মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে অনির্দিষ্টকাল ক্ষমতায় থাকার খায়েশ গণতন্ত্র নয়। ভিন্নমত পোষণকারী ব্যক্তি কিংবা সংবাদপত্র টিভি চ্যানেল বন্ধ করা গণতন্ত্রের পরিপন্থী। দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দেয়া, হরতাল করলে ঘরে ঢুকে জবাই (এখন ঘর থেকে নিয়ে হত্যা করা হচ্ছে) করা করার হুমকি দেয়া গণতন্ত্র নয়। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে নকশালদের নির্মূল করার কৌশল প্রয়োগ করে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের মেরে ফেলা গণতন্ত্র হতে পারে না। আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে রিমাণ্ড নামক নির্যাতনের মাধ্যমে বন্দীকে চলৎশক্তিহীন করা গণতন্ত্রের মধ্যে পড়ে না। আসামীকে পিটিয়ে আধা-মরা করে ডান্ডাবেড়িয়ে পরিয়ে আদালতে আনা গণতন্ত্রের অবমাননা। বিচার ছাড়াই হত্যা করার হুকুম দেয়া, বিদ্যুত-পানি-গ্যাস-খাবার বন্দ করা হুমকি দেয়া গণতন্ত্রের পরিপন্থী। বিরোধীদলীয় নেতাকে তার বাড়ী থেকে উচ্ছেদ করা, তার অফিস-বাসস্থানে ইট-বালির ট্রাক আর পুলিশ দিয়ে তাকে আটকিয়ে রাখা গণতান্ত্রিক দেশের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পড়ে না। এগুলো স্বৈরশাসন ও একনায়কতন্ত্রী শাসনের চেয়েও নির্মম। এমন এমন গণতন্ত্র বাংলাদেশের মানুষ যে চায় না, রাষ্ট্রপতি তা ভালো করেই জানেন। কিন্তু তিনি কোন বিবেচনায় সেই গণতন্ত্র (?) অব্যাহত রাখার জন্য পুলিশকে আরো কঠোর হতে বললেন।বিশ্লেষকদের মতে, রাষ্ট্রপতি ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি প্রধান, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় নেতাদের সুরেই কথা বলেছেন। এতে ক্ষমতাসীন দলের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেছে। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে তার এমন বক্তব্য নিরপেক্ষ ছিল বলে মনে হয় না। তিনি পুলিশের অমানবিক বেআইনী কাজের প্রতি সমর্থন দিলেন তাদের প্রশংসা করলেন। শেখ হাসিনা আগের দিন যেভাবে যে ভাষায় কথা বলেছিলেন, পরের দিন রাষ্ট্রপতি তারই পুনরাবৃত্তি করলেন। ফলে রাষ্ট্রপতির নিরপেক্ষ চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য অনেকখানি ক্ষুণœ হয়েছে । বিরোধীদল যতোই অন্যায় করুক না কেন, তিনি পুলিশকে আরো কঠোর হতে বলতে পারেন না। পুলিশতো এমনিতেই কঠোরতম অবস্থানে রয়েছে। পুরো পুলিশতো দলীয় ক্যাডারে ভর্তি। বিজিবি প্রধান, আইজিপি, র্যাব প্রধান তো ইতোমধ্যেই তাদের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের শপথ নিয়েছে, যা তারা বলতে পারেন না, তাও বলেছেন। তাদের কথা শুনে মনে হয়েছে, তারাই প্রধানমন্ত্রী, কিংবা রাষ্ট্রাপতি শাসিত দেশের রাষ্ট্রপতি। এরাতো সংবিধানই লঙ্ঘিন করেছেন। সংবিধানে কোথাও এ তিন সংস্থার প্রধানদের এমন ধরনের বক্তব্য রাখার অধিকার দেয়া হয় নি। সুতরাং পুলিশ কীভাবে সংবিধান আর গণতন্ত্র রক্ষা করবে? দেশে সত্যিকার গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও শান্তি স্থাপনে রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমতা সংবিধানিকভাবেই রয়েছে। তিনি তার বিবেক ও সুবিবেচনাকে ব্যবহার করে হানাহানি থেকে দেশকে উদ্ধার করার উদ্যোগ নিলে সব কুল রক্ষিত হবে। গণতান্ত্রিক দেশে গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে মানুষকে বঞ্চিত করে হিংস্র হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করে বিরোধীদলকে হিংস্রতার দিকে ঠেলে দেয়া আর হিংসতা বন্ধের নামে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শক্তি প্রয়োগে নির্মূল করতে সরকারের আরো হিংস্র হওয়ার উদ্যোগ-উপদেশ কোনভাবেই রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান নয়। রাষ্টপতি বিষয়টি ভেবে দেখুন দেশবাসী এখনো তা-ই প্রত্যাশা করেন।
শেয়ার করুন