আপডেট :

        দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় বিক্রি হওয়া টিকিটে ৫ কোটি ডলারের জ্যাকপট

        ক্যালিফোর্নিয়ার হান্টিংটন বিচে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা: আহত ৫ জন হাসপাতালে

        প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত সাবেক প্রেসিডেন্ট বাইডেনের রেডিয়েশন থেরাপি চলছে

        টেনেসিতে বিস্ফোরক কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ: ১৬ জনের মৃত্যুর আশঙ্কা, কেউ বেঁচে নেই

        মিসিসিপিতে ফুটবল খেলার পর গণগুলি: নিহত ৪, আহত ১২

        পুতিনের মন্তব্য: ট্রাম্প বঞ্চিত হওয়ায় নোবেল পুরস্কারের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ

        সমুদ্রের তলায় ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক হুমকি

        ইশরাক হোসেনের জীবনের নতুন অধ্যায়: কে তিনি বিয়ে করছেন?

        জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, এলপিজি সিলিন্ডারের মূল্য রাখতে হবে ১ হাজার টাকার মধ্যে

        চুয়েটের ‘টিম এসরো’ নাসার গ্লোবাল স্পেস চ্যালেঞ্জ ২০২৫-এর বিশ্বজয়ী

        নির্বাচনের ফেব্রুয়ারি তাং নিয়ে মানুষের মধ্যে অবিশ্বাস: মন্তব্য

        সিরিজে রশিদের স্পিনে বাঙালিরা হেরেছে

        আসল নকল মিলছে? আপনার ফোন নকল কিনা জানতে এই উপায়গুলো অনুসরণ করুন

        হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার ১ থেকে ৩৮

        দারুল উলুম দেওবন্দ পরিদর্শনে তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী, উষ্ণ অভ্যর্থনা

        যুক্তরাষ্ট্রে অগ্নিসংঘর্ষে নিহত চারজন

        পিআর প্রক্রিয়া নিয়ে উচ্চকক্ষে একমত হওয়ার চেষ্টা

        শাহরুখ খানের ফিটনেস রহস্য: দিনে চারবার খাবার

        ইয়ামালের সমর্থনে এমবাপ্পের বক্তব্য: ‘১৮ বছরের শিশু’

        বাংলাদেশকে সর্বপ্রথম ভাবাই আমাদের মূল নীতি

ইলিশ মাছের আচরণ বদলে দিচ্ছে পথচলাচল

ইলিশ মাছের আচরণ বদলে দিচ্ছে পথচলাচল

বর্ষা বিদায় নিলেও লঘুচাপের কারণে ঝরছে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি। এমন বর্ষণে বাড়ে ইলিশের আনাগোনা। তবে ভরা এই মৌসুমেও সাধারণ মানুষের পাতে উঠছে না স্বাদের ইলিশ। একদিকে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদনে ধাক্কা, অন্যদিকে বাজারে দাম বাড়ার কারণে রুপালি ইলিশ এবার অনেকের কাছে ‘দুর্লভ’!

প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা বন্ধ, জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান বা সহায়তাসহ নানা উদ্যোগের কারণে কয়েক বছর দেশে টানা বেড়েছিল ইলিশ উৎপাদন। তবে এবার মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাবেই দেখা গেছে, গত মৌসুম অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে অন্তত ৭ শতাংশ উৎপাদন কম হয়েছে। এই জুলাই-আগস্টে ভরা মৌসুমে আহরিত ইলিশের পরিমাণ ছিল মাত্র ২৯ হাজর ৫১৯ টন। গত বছর একই সময়ে ধরা পড়েছিল ৪০ হাজার ২৯১ টন। অর্থাৎ দুই মাসেই গত বছরের চেয়ে ১০ হাজার ৭৭১ টন উৎপাদন কম। এক দশক ধরে বাড়বাড়ন্ত ইলিশ আহরণ এবার দিচ্ছে পতনের ইঙ্গিত।


ইলিশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট– দুই কারণই উৎপাদন কমার পেছনে ভূমিকা রাখছে। বঙ্গোপসাগরের পানির তাপমাত্রা বাড়ার ফলে ইলিশের প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নদীর প্রবাহ কমে যাওয়ায় ইলিশের বিচরণও হয়ে পড়েছে সীমিত। মেঘনার মোহনায় ডুবোচর বেড়ে যাওয়া, নদী ও উপকূলীয় দূষণ এবং অতিরিক্ত আহরণও ইলিশ বিপর্যয়ের কারণ। সব সংকট কাটিয়ে শিগগির যদি নদীকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা না যায়, তবে ইলিশ বাংলাদেশের জলসীমা ছেড়ে চলে যেতে পারে ভিন্ন পথে।

এ পরিস্থিতিতে আগামী ৩ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে শুরু হচ্ছে ২২ দিনের মা ইলিশ রক্ষায় নিষেধাজ্ঞা, যা চলবে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত। এর পর নভেম্বর থেকে শুরু হবে আট মাসের জাটকা আহরণে নিষেধাজ্ঞা।

ইলিশ আহরণে ধাক্কা
বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, খুলনা, ভোলা, কক্সবাজার, চাঁদপুরসহ দেশের অন্য উপকূলের নদীতেও পর্যাপ্ত ইলিশ মিলছে না। তাই মলিন জেলেমুখ, হতাশ ব্যবসায়ীরা। নোয়াখালীর হাতিয়ার জেলে আবু কাউসার বলেন, সামান্য কিছু মাছ মিললেও তা ছোট। ইলিশ সংকটের প্রভাব পড়ছে বাজারে। সেখানে যে ইলিশ মিলছে, তা নদীর নয়। সমুদ্রের ইলিশের দামও আকাশছোঁয়া।

বরিশালের হিজলার ধুলখোলা ইউনিয়নের জেলে ইউসুফ চৌকিদার গত রোববার ভোর ৫টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত মেঘনায় ছিলেন। এই সময় দুবার জাল ফেলে তিনি মাত্র সাতটি ছোট আকারের ইলিশ ধরতে পেরেছেন। এগুলো বিক্রি হয়েছে ৯০০ টাকায়। নৌকা, জ্বালানি খরচসহ পাঁচ জেলের ভাগে পড়েছে মাত্র ৬০ টাকা। হতাশ হয়ে পরের দিন আর তারা নদীতে যাননি। ২৬ বছর ধরে মেঘনায় মাছ ধরেন ইউসুফ। তিনি বলেন, ভরা মৌসুমে এত কম ইলিশ কখনও দেখিনি। ইলিশের সংখ্যা দিন দিন কমছেই।

 

মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী দীর্ঘদিন ধরে দেশের ইলিশ উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। কয়েক বছর আগেও এটিকে ‘ইলিশ খনি’ বলা হতো। তবে ক্রমবর্ধমান ইলিশ সংকটের কারণে শুধু মেঘনা নয়, অভ্যন্তরীণ নদী ও সাগরেও হাহাকার চলছে।

ভোলার জেলেপাড়ার বাসিন্দা হোসেন মাঝি গত সপ্তাহে মেঘনায় গিয়ে মাত্র ১৫ কেজি ইলিশ ধরেছেন। ৯ জেলে আর ৪০ লিটার জ্বালানি খরচ করে এ যাত্রায় তাঁর খরচ হয়েছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। হাসান মাঝি হাজীপুর-শহীদপুর এলাকায় পেয়েছেন মাত্র ছয় কেজি ইলিশ। সেখানে নদীর গভীরতা নেমে এসেছে সাড়ে সাত ফুটে। একই গ্রামের এরশাদ জানান, গত ৬ জুলাই তিনি আরও সাতজনকে নিয়ে সাগরের ৩০ কিলোমিটার গভীরে গিয়ে ফিরে এসেছেন মাত্র তিনটি ইলিশ নিয়ে। মনপুরার গজারিয়া চরের চারপাশে বিশাল চর দেখেছি। চাঁদপুর থেকে মনপুরা পর্যন্ত বিভিন্ন চ্যানেলে এখন চর পড়েছে, নাব্য কমে ট্রলার চলার পথ সংকীর্ণ হয়ে গেছে বলে জেলেরা জানিয়েছেন।

মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, প্রতিবছর জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর ভরা মৌসুম ধরা হয়। বছরে মোট আহরিত ইলিশের দুই-তৃতীয়াংশই এক সময় দক্ষিণাঞ্চলের নদনদীতে পাওয়া যেত। এ বছর জুলাই-আগস্টে ভরা মৌসুমে আহরিত ইলিশের পরিমাণ ছিল মাত্র ২৯,৫১৯.৪৬ টন।

গত বছর একই সময়ে আহরণ হয়েছিল ৪০,২৯১.২৪ টন। অর্থাৎ মাত্র দুই মাসেই গত বছরের চেয়ে ১০,৭৭১.৭৮ টন কম। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশজুড়ে ইলিশ উৎপাদন কমে পাঁচ লাখ ২৯ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে। আগের বছর ২০২২-২৩ সালে ছিল পাঁচ লাখ ৭১ হাজার টন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের হিসাব এখনও হয়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে, আরও কম হবে। এর আগে প্রতিবার ইলিশ উৎপাদন সামান্য হলেও বাড়ত। ২০১৮-১৯ সালে পাঁচ লাখ ৩২ হাজার, ২০১৯-২০ সালে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার, ২০২০-২১ সালে পাঁচ লাখ ৬৫ হাজার, ২০২১-২২ সালে পাঁচ লাখ ৬৬ হাজার টন ইলিশ আহরিত হয়েছিল।

ইলিশ কমার পেছনে নদী-সমুদ্রের সংকট, দায়ী মানুষও
মোট মৎস্য উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশ আসে ইলিশ থেকে। তবে প্রাকৃতিক পরিবর্তন আর মানবসৃষ্ট সংকট মিলেই ইলিশ উৎপাদন কমছে।

চাঁদপুরের ষাটনল থেকে বরিশালের হিজলা পর্যন্ত ৪৩২ কিলোমিটার এলাকা ইলিশের অভয়াশ্রম। তবে জেলেরা বলছেন, সেসব এলাকায়ও ইলিশ এখন নিরাপদ নয়। মৎস্য অধিদপ্তরের জরিপ বলছে, মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীর মোহনা ও আশপাশের ১৭ স্থানে ইলিশের চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে ১৪টি মেঘনাতেই। ভোলা, পটুয়াখালী, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ডুবোচর বাড়ায় ইলিশের স্বাভাবিক স্থানান্তর (মাইগ্রেশন) ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয় জেলেরা বলছেন, পানি কম, চর বেশি, তাই মাছও কম।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, ডুবোচর ইলিশের ডিম ছাড়ার মৌসুমে উজানে চলাচল প্রায় বন্ধ করে দেয়।

ভারত-নেপালের বাঁধ ও পানি প্রত্যাহারের কারণে পদ্মা-যমুনা-মেঘনার প্রবাহ বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে ব্যাপকভাবে কমেছে। এতে নদীতে লবণাক্ততার মাত্রা বাড়ছে। মৎস্য অধিদপ্তরের জরিপে দেখা গেছে, মেঘনার মোহনায় শুষ্ক মৌসুমে লবণাক্ততা দ্বিগুণ হয়ে ১০ পিপিটিতে পৌঁছেছে। ইলিশ গবেষক আনিছুর রহমান জানান, পদ্মার হার্ডিঞ্জ সেতুর কাছে পানির প্রবাহ ৩৮-৪০ শতাংশ কমে গেলে ইলিশ উৎপাদন অন্তত ২৬ শতাংশ কমে যায়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ১৯০১ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা আরও বাড়বে। অথচ ইলিশের প্রজননের আদর্শ তাপমাত্রা ২৬ থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ডিম ফোটার হার কমছে, ইলিশের পোনার মৃত্যুহার বাড়ছে। আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, তাপমাত্রা বাড়ার বৈশ্বিক প্রবণতা বাংলাদেশের মৎস্যসম্পদ, বিশেষ করে ইলিশ খাতকে ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

শিল্পবর্জ্য, কীটনাশক ও প্লাস্টিকের কারণে পদ্মা-মেঘনায় দ্রবীভূত অক্সিজেন কমে যাচ্ছে। চাঁদপুরের নদী গবেষণা কেন্দ্রে পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, পদ্মায় গত পাঁচ বছরে পানির ডিও মান ৮ দশমিক ৭০ থেকে নেমে ৫ দশমিক ৪১-এ নেমেছে। এতে ইলিশের শ্বাসপ্রশ্বাস ও খাদ্যচক্র ব্যাহত হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক গবেষণায় ইলিশের শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক, সিসা, ক্যাডমিয়াম, আর্সেনিকের মতো ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

এ ছাড়া অতিরিক্ত জাল ও নৌকার চাপও সংকটকে আরও গভীর করেছে। বরিশালের জেলে মাহফুর রহমান বলেন, নদীর এপার-ওপার পুরোটা এখন জালে ঘেরা। ছোট-বড় সব মাছ এসব জালে আটকা পড়ে। এতে প্রজনন নষ্ট হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের প্রধান ইলিশ বিচরণক্ষেত্র হলো মেঘনা, তেঁতুলিয়া, পায়রা, বিষখালী ও আন্ধারমানিক। দক্ষিণাঞ্চলের ছয়টি মোহনা দিয়ে ইলিশ নদীতে ঢোকে।

মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, মোহনাগুলোর গভীরতা কমে যাওয়ায় ইলিশ প্রবেশে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। মোহনা সাধারণত ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার প্রশস্ত এবং পানির গভীরতা কমপক্ষে ৫০ থেকে ১০০ ফুট থাকার কথা। ইলিশ নির্বিঘ্নে চলার জন্য প্রায় ৩০ ফুট গভীর পানি প্রয়োজন। মোহনাগুলো ভাটার সময় পলি জমে ৮ থেকে ৯ ফুটে চলে আসে। ডুবোচর, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ এবং গরম পানি নির্গমনের কারণে নদীর নাব্য সংকট আরও বাড়ছে।

ভোলার চলফ্যাসনের ঢালচর মোহনা মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশ প্রবেশের প্রধান পথ। নদীতে আহরিত মোট ইলিশের ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ এই দুই নদী থেকে ধরা পড়ত। মোহনার এক প্রান্ত পটুয়াখালীর সোনারচর, অন্য প্রান্ত চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ। ভাটার সময় গভীরতা কমে তিন মিটারে নেমে আসে। মৎস্য বিভাগের নিরীক্ষায় মোহনায় ১৩০টি ডুবোচর শনাক্ত হয়েছে। পটুয়খালীর আন্ধারমানিক ও রামনাবাদ, বরগুনার পায়রা, বিষখালী নদীতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের গরম পানি ও বর্জ্য সরাসরি নির্গত হওয়ায় ইলিশ বিচরণের উপযোগিতা কমছে।
এদিকে, দুই থেকে তিন ইঞ্চি জাটকা ইলিশ বাজারে বিক্রি হওয়ায় প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শুধু বরিশালের পোর্ট রোড মোকামে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ মণ জাটকা বিক্রি হচ্ছে।

ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্লাহ সমকালকে বলেন, মোহনা ও অভ্যন্তরীণ নদীতে নাব্য সংকট, ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্রের ধ্বংস, অবৈধ জাল ব্যবহারসহ আরও কয়েকটি সমস্যা রয়েছে। এ সমস্যা সমাধান না হলে কয়েক বছরের মধ্যে নদীতে কোনো মাছ পাওয়া যাবে না।

দাম আকাশছোঁয়া
ইলিশ সম্পদের সোনালি বছর ধরা হয় ২০১৬ সালকে। সে বছর দক্ষিণাঞ্চলে পাইকারিতে এক কেজি ইলিশ বিক্রি হয়েছে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকায়। ১০ বছরের ব্যবধানে এখন দাম তিন গুণ বেড়ে এক কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকায়।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের তুলনায় এ বছর ইলিশের দাম বেড়েছে প্রায় ৩৩ শতাংশ। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বরাতে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, ২০১০ সালে ইলিশের কেজি ছিল ৪১৭ টাকা, ২০১৯ সালে ৭৮৯ টাকা আর ২০২৫ সালে এসে ইলিশের কেজি ঠেকেছে সাড়ে তিন হাজার টাকায়।
ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান বলেন, ইলিশ প্রাকৃতিকভাবে জন্মে, জেলে বা ব্যবসায়ীর খরচ নেই। আহরণ খরচ বিবেচনায় কেজি সাড়ে তিন হাজার টাকা হওয়া অযৌক্তিক। মাছ ধরা থেকে ভোক্তা পর্যন্ত তিনবার হাতবদলের কারণে দাম বাড়ছে।

বড় প্রকল্প নেওয়ার তাগিদ
মৎস্য অধিদপ্তর জানায়, নদী খনন ও নাব্য সংকট নিরসন ছাড়া ইলিশ সংকটের স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। এ জন্য নিতে হবে বড় প্রকল্প। নদী ও মোহনা খনন, প্রজনন ক্ষেত্র রক্ষা, অবৈধ ট্রলিং প্রতিরোধ এবং জাটকা সুরক্ষা ছাড়া ইলিশ উৎপাদন বাড়ানো কঠিন।

মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ বলেন, নাব্য সংকটের পাশাপাশি ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্রগুলোও ধ্বংস হয়েছে। সাগর সুরক্ষায় মৎস্য অধিদপ্তরের কার্যক্রম নেই। এ সুযোগে অবৈধ ট্রলিং ও জাটকা নিধনের কারণে উৎপাদন কমছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, অবৈধ জাল ও জাটকা নিধন পুরোপুরি বন্ধ না হওয়াসহ জলবায়ু পরিবর্তন, নদীর নাব্য হ্রাস ও অভয়াশ্রমসংলগ্ন এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে ইলিশ উৎপাদন কমেছে। জাটকা সুরক্ষা ও প্রজনন মৌসুমে নির্বিঘ্ন পরিবেশ নিশ্চিত করতে অভিযান পরিচালনাসহ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কারেন্ট জালসহ অবৈধ জালের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। ইলিশের দাম নিয়ন্ত্রণে নদী থেকে বাজারে আসা পর্যন্ত হাতবদল কমানোর পরিকল্পনাও হাতে নেওয়া হয়েছে।

 

এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত