দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় বিক্রি হওয়া টিকিটে ৫ কোটি ডলারের জ্যাকপট
হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার ১ থেকে ৩৮
ডেঙ্গুতে এ বছর সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। এখানে ভর্তি দুই হাজার ১৬৯ রোগীর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৫৭ জনের। এ হিসাবে প্রতি ৩৮ ডেঙ্গু রোগীর একজন মারা গেছেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, অধিকাংশ রোগী হাসপাতালে আসছেন অত্যন্ত জটিল অবস্থায়। প্লাটিলেট মারাত্মক কমে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, পেট ব্যথা, রক্তক্ষরণসহ এসব উপসর্গে সময়মতো চিকিৎসা শুরু করতে না পারায় মৃত্যুহার বাড়ছে।
ডেঙ্গু আক্রান্তদের বড় অংশ চিকিৎসা নেন দেশের সবচেয়ে বড় সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সরকারি এ হাসপাতালে সারা বছর রোগীর চাপ লেগেই থাকে। ডেঙ্গু চিকিৎসায় হাসপাতালে ৪০ শয্যার আলাদা ইউনিট রয়েছে। মেডিসিনসহ সাতটি ওয়ার্ডেই মশাবাহিত এ ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে ১২৫ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
কর্তৃপক্ষ বলছে, চিকিৎসা ভালো, এখানে রোগী ফেরত দেওয়া হয় না– এমন নানা কারণে সারাদেশ থেকেই মানুষ ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে আসেন। গতকাল শুক্রবার সরেজমিন দেখা যায়, ডেঙ্গু ওয়ার্ডের সব শয্যায় রোগী। অনেক রোগী ওয়ার্ডের বাইরে মেঝে ও করিডোরে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালে স্যালাইন ও ওষুধের সংকট নেই। তবে চিকিৎসাসেবার ওপর কয়েকগুণ চাপ বেড়েছে।
দায়িত্বরত নার্স নাজনীন নাহার বলেন, সেপ্টেম্বর থেকে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বেড়েছে। সারাদেশ থেকেই রোগী আসছেন। তবে বেশি ঝিনাইদহ, নড়াইল, যশোর, ফরিদপুর, গাজীপুর ও চাঁদপুরের। অধিকাংশ রোগী আসছেন জটিল অবস্থায়।
কোন হাসপাতালে কত মৃত্যু
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে, জানুয়ারি থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সারাদেশে ৫৩ হাজার ১৯৩ জন হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ২২৪ জন। ডেঙ্গু নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি প্রতি ৩৮ জনে একজন মারা গেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সারাদেশের যে ৫৯ হাসপাতালের তথ্য দেয়, তার মধ্যে ঢামেক হাসপাতালে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে।
রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন দুই হাজার ২০৩, মারা গেছেন ৩০ জন। এখানে প্রতি ৭৩ জনে মৃত্যু একজনের। ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কভিড হাসপাতালে ভর্তি দুই হাজার ১১৬ জনের মধ্যে মারা গেছেন ১৭ জন। এখানে প্রতি ১২৪ জনে একজন মৃত্যুবরণ করেছেন। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে এক হাজার ২২৫ জন ভর্তি হন; মারা যান ৩০ জন। প্রতি ৪১ জনে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালে ২১০ জনের মধ্যে মারা গেছে একজন। এ ছাড়া ১৮ বছরের নিচে মারা যাওয়া শিশুর সংখ্যা ৩৭।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসেন বলেন, সচেতনতার অভাব, প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক চিকিৎসার ঘাটতি ও গ্রামীণ এলাকায় বিশেষায়িত চিকিৎসা না থাকায় বহু রোগী মারাত্মক অবস্থায় রাজধানীতে আসছেন। সরকারি হাসপাতালে চাপ বেশি থাকায়, তাদের সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এতে মৃত্যুহার বাড়ছে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু জ্বর শুরুতে নিরীহ মনে হলেও কিছু উপসর্গ দ্রুত জটিল অবস্থার দিকে ঠেলে দেয়। বিশেষ করে প্লাটিলেট দ্রুত কমে যাওয়া, পেট ব্যথা, বমি, রক্তক্ষরণ বা শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে সময়ের অপচয় করা ঠিক নয়।
ঢাকা ছুটছেন আক্রান্তরা
চাঁদপুরের মতলব উত্তর থেকে আসা রোগীর বাবা আতিয়ার রহমান বলেন, ছেলের শরীরে প্লাটিলেট পাঁচ হাজারে নেমেছিল। স্থানীয় হাসপাতাল থেকে ঢামেকে পাঠিয়েছে। পাঁচ দিন ভর্তি, প্লাটিলেট ৯ হাজারে উঠেছে।
ঝিনাইদহ থেকে আসা রিপন হোসেন বলেন, সাত দিন হাসপাতালে আছি। জ্বর এলে প্রথম তিন দিন শুধু প্যারাসিটামল খেয়েছি। ভেবেছিলাম সেরে যাবে। কিন্তু পরে অবস্থা খারাপ হলে ঢামেকে ভর্তি হই। এখন কিছুটা ভালো।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, রোগীদের অনেকেই এমন জটিল অবস্থায় হাসপাতালে আসছেন যে, চিকিৎসা দেওয়ার মতো সময়ও পাওয়া যাচ্ছে না। প্লাটিলেট কমে যাওয়া, রক্তক্ষরণ, অবসাদ, পেট ব্যথা, প্রস্রাব কম হওয়ার মতো উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে এলেও অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে। এসব উপসর্গে প্রাথমিক অবস্থায় গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে আরও ৩০৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এতে চলতি বছরে আক্রান্ত দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ১৯৩ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কারও মৃত্যু হয়নি। ফলে মোট মৃত্যু ২২৪ জনই রয়েছে।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন