যে আসক্তি মাদকের চেয়েও ভয়ংকর
আধুনিকতার আশীর্বাদে বর্তমান প্রজন্মও যথেষ্ট আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর। করোনাকালীন ঘরবন্দি সময়টা আধুনিকায়নের স্বর্ণযুগে পদার্পণ করেছে। অনলাইননির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা ও দক্ষতা বৃদ্ধির নানা কোর্সের বদৌলতে অভিভাবকেরা অপ্রাপ্ত বয়স্কদের হাতে তুলে দিচ্ছেন স্মার্টফোন। আর এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে আধুনিক শিশু-কিশোররা।পড়াশোনার অজুহাতে অনলাইনে ক্লান্তিহীনভাবে ফ্রি ফায়ার, পাবজিসহ নানা ধরনের গেমনির্ভর জীবন পার করছে তারা। নিয়ম করে সশরীরে বিদ্যালয় যাওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া, বিকালে মাঠে খেলতে যাওয়ার তাগিদ না থাকায় অনলাইন গেমসে আসক্তিই হয়ে উঠেছে একাকিত্বের পরম বন্ধু।
অপ্রাপ্ত বয়সে হাতে মোবাইল ফোন চলে আসায় বেপরোয়া হয়ে উঠছে অনেকেই। সাম্প্রতিককালে অনলাইন গেমস প্রায় মাদকদ্রব্যের মতো ছড়িয়ে পড়েছে বাড়ন্ত বয়সের কিশোর-কিশোরীর মধ্যে। এমন গেমস আসক্তির ফলে অনেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে বলে জানা গেছে। এছাড়া দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক কাজকর্মে মনোযোগ নষ্ট হওয়া, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হারানোসহ নানা জটিল সমস্যার উৎপাদক এই গেমস আসক্তি। ২০১৮ সালের জুন মাসে গেমস আসক্তিকে মনোস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে গ্রহণ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। মূলত ইন্টারনেট গেমস আসক্তি অন্যান্য নেশাজাতদ্রব্যের (ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজা, মদ ইত্যাদি) আসক্তির মতোই ভয়াবহ। তাই একে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অপ্রাপ্ত বয়সে হাতে স্মার্টফোন তুলে দেওয়া এবং অভিভাবকদের তদারকির অভাবেই এমন ভয়ংকর গেমস আসক্তি জন্ম নেয়। এছাড়া বর্তমান সময়ের অভিভাবকরাও এতটাই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত যে, তাদের সন্তানরা ঠিকমতো পড়াশোনা করছে কি না, কীভাবে সময় পার করছে—এসব বিষয় তাদের দৈনন্দিন কাজের তালিকার বাইরেই থেকে যায় বেশির ভাগ সময়। এ সুযোগেই দিনকে দিন বেড়েই চলেছে গেমস আসক্তি। মস্তিষ্কের যে অংশে (রিওয়ার্ড সেন্টার) ইয়াবা বা গাঁজার মতো বস্তুর প্রতি আসক্তি জন্ম নেয় ঠিক সেই অংশেই কিন্তু ইন্টারনেট বা গেমের প্রতি আসক্তি জন্মায়। তাই এখনই এই গেমস আসক্তির লাগাম টেনে ধরতে হবে।
কোমলমতি ও কৌতূহলী শিশুদের নাগালের বাইরে রাখা উচিত স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট সংযুক্ত ডিভাইস। পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করতে হবে। সন্তানদের যথেষ্ট সময় দেওয়া ও তাদের প্রতি সবসময় সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে সব অভিভাবককে। প্রয়োজনে সন্তানকে ডিভাইস দিলেও তার ওপরে নজরদারি করতে হবে। এছাড়া সরকার ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়েরও কিছু বিষয় কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। এসব গেমস বন্ধ করে দেওয়া, শর্তসাপেক্ষে সীমিত পরিসরে কিছু গেম চালু রাখা ইত্যাদি। গেমস আসক্তি থেকে ছেলেমেয়েকে বের করে আনতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে অভিভাবকদের। তবে অনতিবিলম্বে শিক্ষাব্যবস্থার চাকা সচল হলে, এ আসক্তি কিছুটা কমে আসবে আশা করা যায়। পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ, খেলার মাঠ তৈরি এসবও গেমস আসক্তি কমাতে মুখ্য ভূমিকা রাখবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
শেয়ার করুন