২০০৯ সালের পর সর্বনিম্ন নিয়োগ পরিকল্পনা, চাকরির বাজারে অনিশ্চয়তা
মহামারি আকার নিতে পারে ইউকে ভ্যারিয়েন্ট, সতর্ক করলেন ফাউসি
ছবি: এলএবাংলাটাইমস
যুক্তরাষ্ট্রে ছড়াচ্ছে করোনার নতুন ইউকে ভ্যারিয়েন্ট। আর এই ভ্যারিয়েন্ট করোনার গতানুগতিক ভাইরাস থেকে আরো মরণঘাতী ও দ্রুত সংক্রমণ ঘটায় বলে জানা গেছে। তাই এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে চিন্তিত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ‘নতুন ভ্যারিয়েন্ট মহামারি আকার নিতে পারে’।
শুক্রবার (২০ মার্চ) হোয়াইট হাউজে নতুন এই স্ট্রেইন বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এলার্জি এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজের প্রধান ড. এন্থনী ফাউসি।
ড. এন্থনী ফাউসি জানান, এই ভ্যারিয়েন্টকে B.1.1.7 নামে চিহ্নিত করা হয়, এছাড়া এটিকে কেন্ট স্ট্রেইন নামেও ডাকা হয়ে থাকে। এটি সর্বপ্রথম যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হয়। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, এটি শুধু সজহেই ছড়িয়ে যায় না বরং এটি করোনার গতানুগতিক ভাইরাস থেকে অধিক প্রাণঘাতী।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মেডিকেল চীফের সাথে আলোচনায় তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম এই ভ্যারিয়েন্টটি গত বছরের ডিসেম্বরে কোলোরাডোতে প্রথম শনাক্ত হয়। এরপরই ধীরে ধীরে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যে ভ্যারিয়েন্টটি ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে মোট করোনার সংক্রমণের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ এই ভ্যারিয়েন্টের কারণে হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, এই ভ্যারিয়েন্ট সাধারণ ভ্যারিয়েন্টের থেকে আরো ৫০ গুণ বেশি দ্রুত ছড়াতে পারে বলে তথ্য দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা। এছাড়া এই ভ্যারিয়েন্টের কারণে দ্রুত শারীরিক অবস্থার অবনতিসহ আরো অন্যান্য রোগ দেখা দিতে পারে।
ফাউসি এক গবেষণার ফলাফল উল্লেখ করে বলেন, ‘সাধারণ ভাইরাসে আক্রান্তের থেকে এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হলে মৃতের আশঙ্কা ৬৪ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়’।
তবে এই ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে করোনার প্রচলিত ভ্যাকসিনগুলো কার্যকরী হবে বলে জানিয়েছেন ড. এন্থনী ফাউসি। তিনি বলেন, ‘এজন্যই বাসিন্দাদের উচিত দ্রুত টিকাগ্রহণ নিশ্চিত করা’।
তিনি বলেন, নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট থেকে সুরক্ষা পেতে কিচবু উপায় রয়েছে। প্রথমত, যতো দ্রুত সম্ভব টিকা নিয়ে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে ফাইজার-বায়োএনটেক, মডার্না কিংবা জে এন্ড জে;র টিকাগুলো কার্যকরী হবে। একই সাথে বাসিন্দাদের সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, মাস্ক ব্যবহার করা ও জনসমাগম এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
আসন্ন দিনগুলোর মধ্যে নতুন এই স্ট্রেইনটি ব্যাপক হারে ছড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, সংক্রমণ যে কোনো মূল্যে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। যদি নতুন স্ট্রেইন কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মারাত্মক বিপর্যয় ঘটবে। একই সাথে দ্রুত টিকাগ্রহণ করার উপরও জোর দেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
এখন পর্যন্ত B.1.1.7 স্ট্রেইনটি যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭টি রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ৪৬৭ জন বাসিন্দা। রাজ্যগুলোর মধ্যে নতুন স্ট্রেইনে আক্রান্ত সর্বোচ্চ রোগী পাওয়া গেছে ফ্লোরিডায়, ১৪৭ জন। এরপরই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া। এখানে নতুন স্ট্রেইনে আক্রান্ত সর্বোচ্চ রোগীর সংখ্যা হলো ১১৩ জন।
এদিকে, লস এঞ্জেলেস কাউন্টির স্বাস্থ্যকর্মকর্তারা বলছেন, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই নতুন স্ট্রেইন লস এঞ্জেলেসে ছড়িয়ে পড়তে পারে বড় আকারে। এখন পর্যন্ত লস এঞ্জেলেস কাউন্টিতে দুইজন নতুন স্ট্রেইন B.1.1.7 এ আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। অপরদিকে সান বার্নার্ডিনো কাউন্টিতেও দুইজনের দেহে নতুন স্ট্রেইনের অস্বিত্ব শনাক্ত হয়েছে৷
ক্যালিফোর্নিয়ার কাউন্টিগুলোর মধ্যে নতুন স্ট্রেইন সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে সান দিয়েগো কাউন্টির মধ্যে। এখন পর্যন্ত এই স্ট্রেইনে আক্রান্ত হয়ে একজন বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে৷ হাসপাতালে ভর্তি আছে দুইজন। এছাড়া মোট আক্রান্ত কমপক্ষে ১০৯ জন বলে জানানো হয়েছে।
নতুন স্ট্রেইনে আক্রান্তদের বেশিরভাগের বয়স ৩০ এর মতো হলেও শিশু থেকে ৭৭ বছর বয়েসী মানুষ এই স্ট্রেইনে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে সান দিয়েগোর স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
শেয়ার করুন