প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে যশোর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য নাবিল আহমেদের বিরুদ্ধে
যশোর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে যশোর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের বিরুদ্ধে। পছন্দের চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রার্থী আনোয়ার হোসেন বিপুলের পক্ষে কাজ না করলে ভিজিডি, ভিজিএফ, বয়স্ক ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সোমবার (২০ মে) বিকালে যশোর প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করেন উপজেলা আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী ফাতেমা আনোয়ার।
এর আগে একইদিন এই অভিযোগে নির্বাচন কমিশন, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ফাতেমা আনোয়ার। আগামী ২৯ মে তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ফাতেমা আনোয়ার ঘোড়া প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ফাতেমা আনোয়ার বলেন, গত ২৭ এপ্রিল ও ১১ মে সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ তার বাসভবনে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও নেতা-কর্মীদের ডেকে বলেছেন, আমি আরও চার বছর এমপি থাকব। চেয়ারম্যানরা তার প্রার্থী আনোয়ার হোসেনের পক্ষে ভোট না করলে সরকারি আর্থিক সুবিধা যেমন ভিজিডি, ভিজিএফ, বয়স্ক ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা থেকে তাদের বঞ্চিত করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন যশোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী ফাতেমা আনোয়ার। ছবি: সংগৃহীত
বিষয়টি তার রাজনৈতিক উপদেষ্টা সুজন সাত্তার ও একান্ত সহকারী পলাশকে দিয়ে তদারকি করছেন। এ ছাড়া দলীয় নেতা-কর্মীদের পদ-পদবি হারানোর ভয়ভীতিও দেখাচ্ছেন। বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত করছেন, যাতে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়া এমপির মনোনীত প্রার্থী বিপুল প্রচারণার নামে ঘোড়া প্রতীকের কর্মী সমর্থকদের হুমকি মিথ্যা অপপ্রচার ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের কাছে আমার কর্মী সমর্থকদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করে হয়রানি করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন। এমন পরিস্থিতি সুষ্ঠু ভোট গ্রহণে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে কাজী নাবিল আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
চেয়ারম্যান প্রার্থী আনোয়ার হোসেন বিপুল বলেন, ফাতেমা আনোয়ারের রাজনীতির কোনো পরিচয় নেই। তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসীর বউ। অবৈধ ব্যবসা তার আয়ের উৎস। তিনি সন্ত্রাসীর বউ, তাকে আমাদের দলীয় নেতাকর্মীরা প্রত্যাখান করেছে, তাই তিনি এসব মিথ্যা অভিযোগ করছেন।
আপনি নাবিল আহমেদের সমর্থিত প্রার্থী কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখানে সংসদ সদস্য বা আওয়ামী লীগের সমর্থিত বিষয় না। যারা ৭ জানুয়ারি নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেছেন, সেই নেতাকর্মী ও তৃণমূলের সমর্থিত প্রার্থী আমি। এমপির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে সব মিথ্যা।
যশোর সিনিয়র নির্বাচন কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন অফিসার আব্দুর রশিদ বলেন, ফাতেমা আনোয়ার কিছু অভিযোগ করেছে। সব অভিযোগ আমলে নিয়ে সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শুধু ফাতেমা আনোয়ার নয় সব প্রার্থীদের অভিযোগ আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, যশোর জেলা আওয়ামী লীগ দুটি গ্রুপে বিভক্ত। একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এবং অপর পক্ষের নেতৃত্ব দেন যশোর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। ফাতেমা আনোয়ার কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। যশোর সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার যুবলীগের নেতা তৌহিদ চাকলাদারকে সমর্থন দিয়েছেন। অন্যদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেনকে সমর্থন দিয়েছেন। নাবিলের সমর্থন না পাওয়াতে ফাতেমা আনোয়ার নাবিল অংশের কিছু নেতাকর্মী নিয়ে নিজের মতো নির্বাচন করছেন। এরপর থেকে ফাতেমার সঙ্গে নাবিলের দ্বন্দ্ব শুরু। গত ১৮ মে সর্বশেষ এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর স্বজন নিয়ে কটূক্তিমূলক মন্তব্য করায় যশোর সদর উপজেলা যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয় ফাতেমা আনোয়ারকে।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন